দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে বিশেষ করে দেশীয় কৃষিপণ্যের অস্বাভাবিক দামে রীতিমতো নাজেহাল সাধারণ ক্রেতা। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো তিন কৃষিপণ্য ডিম আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তবে তা বাজারে কার্যকর করা যায়নি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, মিরপুর ১, কারওয়ান বাজার ও আগারগাঁও বাজারে যথারীতি প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা, আলু ৫০ টাকা এবং ডিমের হালি ৫০ টাকার ওপর। যদিও নতুন দামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার কথা ৬৫ টাকা, আলু ৩৬ টাকা এবং ডিমের হালি ৪৮ অর্থাৎ প্রতি পিস ১২ টাকা দরে।
এর আগেও বাজারের অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি বৃদ্ধিসহ সরকার বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে কার্যকর করা যায়নি। তবে এবার নির্ধারিত দামে পণ্যে বিক্রি না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। কিন্তু এসবের তোয়াক্কাই করছেন না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, 'আমরা যে দামে কিনছি সে হিসেবেই বিক্রি করছি'।
এদিন মিরপুর ১ নম্বরের ডিম বিক্রেতারা জানান, শুক্রবার পাইকারিতে ৫শ' পিস ডিম বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা দরে। যদি ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হয় সে হিসেবে লাভ হয় মাত্র ৮-১০ টাকা। কিন্তু অনেকই ডিমই ভেঙে যায় ফলে লাভের পরিমাণ আরও কমে যায়।
ডিমে নির্ধারিত দামের থেকে ২ টাকা বেশি দাম নিলেও আগের চড়া দামেই বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ ও আলু। এই দুই পণ্যে নির্ধারিত দামের থেকে অন্তত ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে শুক্রবার আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে। তাই খুচরা সে হিসেবেই বিক্রি করছেন। মিরপুর ১ নম্বরের ব্যবসায়ী মো. সাত্তার বলেন, পাইকারিতে নির্ধারিত দামে আলু পেঁয়াজ বিক্রি না করলে খুচরা বাজারে কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই সরকারকে আগে পাইকারি বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে তাহলেই খুচরা বাজারে এই দাম কার্যকর করা যাবে।
বিক্রেতারা আরও জানান, সবার কাছেই পাইকারি দামের রসিদ রয়েছে তাই এখানে অভিযান পরিচালনা করে কোনো লাভ নেই। বিক্রেতাদের রসিদে দেখা যায়, পাইকােিত প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫-৭৬ টাকা দরে কিনেছেন তারা। যা বাজারে বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছিলেন, বাজারে দাম কার্যকর করতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। রাজধানীসহ সারাদেশে ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নতুন দাম কার্যকরে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এতে দু-একদিন সময় লাগবে। এদিকে বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেলের দাম আরও ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে এদিনও আগের দামেই বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন নতুন দামে তেলের সরবরাহ পেতে অন্তত ১ সপ্তাহ সময় লাগবে।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কমেনি কোনো পণ্যের দামই। প্রায় অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হয়েছে মাছ ও সবজিসহ বেশিরভাগ মুদিপণ্যে। এদিনও বাজারে ব্যাপক সরবরাহ সত্ত্বেও পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়া ব্যতীত বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার ওপর।
অন্যদিকে এ সপ্তাহেও বাড়তিই রয়েছে মোটা চালের বাজার। এদিনও গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে। পাইজাম ও ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২শ' টাকা দরে। এ ছাড়া আগের চড়া দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে মাছ বাজার। এদিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা, বড় কাতল ৫শ' টাকা, পাঙ্গাশ ২শ' থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই ৩৭০ টাকা, তেলাপিয়া ৩শ' টাকা ও শিং মাছ ৫৫০ টাকা থেকে ৬শ' টাকা দরে।
যথারীতি ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬শ' থেকে ১৮শ' টাকা, ৪শ' থেকে ৫শ' গ্রামের ইলিশে কেজি বিক্রি হয়েছে ৮শ' টাকা দরে। এর বাইরে শোল মাছ ৮শ' টাকা, পাবদা ৬শ' থেকে ৬৫০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি আকার ভেদে ৮শ' থেকে ১ হাজার টাকা, মলা মাছ ৬শ' টাকা, বাইলা ১ হাজার টাকা, পোয়া মাছ ৪শ' থেকে ৬শ' টাকা, মাঝারি আকারে বোয়াল ৭শ' থেকে ৮শ' টাকা, গুড়ামাছ ৪শ' টাকা, ছোট চিংড়ি ৫শ' টাকা, গলদা ৭শ' এবং বাগদা ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা দরে।
যাযাদি/ এসএম