সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
দাম বাড়ানোর পরদিন 

ডলারের বাজারে নৈরাজ্য

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ মে ২০২৪, ০৯:০১
-ফাইল ছবি

ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর পরদিন বৃহস্পতিবার ডলারের বাজারে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খোলাবাজার থেকে ডলার উধাও হয়ে যায়। আবার কোথাও ডলার পাওয়া গেলেও দাম বেশি। মানি এক্সচেঞ্জগুলোও অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলাবাজারে ১২৫-১২৭ টাকা, তাও চাহিদা মতো পাওয়া যচ্ছে না। আর ব্যাংকিং চ্যানেলে এলসির ডলার ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা। গত বুধবার ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এতেই বাজারে এই চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, ডলারের দাম বাড়ানোর কারণে ব্যাংকাররা খুশি। দীর্ঘ দিন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১০ টাকা ডলারের দর নির্ধারণ করে রাখলেও ব্যাংকগুলোতে ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা করে এলসি করা হতো। তাই তারা মনে করছেন, নতুন দাম অনুযায়ী তারা এলসি করতে পারবে।

তবে খোলাবাজারের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে ডলার পাওয়ায় যাচ্ছে না। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে চায় দালালরা। দীর্ঘ দিন খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করছেনÑ এমন একজনকে ডলারের রেট কত জিজ্ঞাসা করা হলে- ডলার নেই বলে জানান। উল্টো কেউ যদি বিক্রি করে তাহলে ১২০ টাকা করে কেনার প্রস্তাব দেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ও মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, খোলাবাজারের তুলনায় এলসির ডলারের দাম বেড়েছে সামান্য। এক দিন আগেও ১১৫ টাকায় এলসি করছিল এরকম ব্যাংক বৃহস্পতিবার ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা করে নিচ্ছে। কিন্তু এসব এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে বুধবার প্রতি এক ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৬-১২০ টাকায়। বৃহস্পতিবার বিক্রি চলছে ১২২-১২৫ টাকা।

ডলারের দাম এক দিনে ৭ টাকা বাড়ানোয় এখন আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ১১৭ টাকা; যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ দর। নিময় অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ১১৮ টাকা বিক্রি করতে পারবে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় মানি চেঞ্জারগুলো ডলার বিক্রি করছে না। আবার যাদের কাছে খুচরা ডলার আছে, তারাও বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। কারণ, যেহেতু আনুষ্ঠানিক ডলার রেট ৭ টাকা বেড়েছে খোলাবাজারে কত বাড়ে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন সবাই। এমন পরিস্থিতির কারণে খোলাবাজারে বিক্রি শূন্য হয়ে গেছে ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, খুচরা ডলার পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ ঠিক আছে। এখনে কে বিক্রি করবে, কি করবে না, এটা তার নিজস্ব বিষয়। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পায়নি তারা ব্যাংকে গেলেই ডলার কিনতে পারবেন। ব্যাংকে ক্যাশ ডলার মজুত আছে। যার ডলার দরকার ব্যাংকে গেলেই পাবেন।

জানা গেছে, ডলারের সঙ্গে অন্যান্য মুদ্রা বিনিময় দামও বেশি চাওয়া হচ্ছে। মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য মুদ্রার দাম বেড়েছে। ভারতীয় মুদ্রা গতকাল পর্যন্ত এক টাকা ৪০ পয়সা ছিল, বৃহস্পতিবার এক টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অন্যান্য দেশের ম্দ্রুার দামও বাড়িয়েছেন তারা।

রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি মানি এক্সচেঞ্জে কর্মরত একজন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হয়েছে বুধবার বিকালে। এখনো সিদ্ধান্তই নিতে পারিনি কত দামে বিক্রি করব। আরও এক দিন গেলে বুঝা যাবে, দাম কত গিয়ে ঠেকে।

এর আগে গত বুধবার ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকায় উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে ‘ক্রলিং পেগ’ নামের নতুন পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। অর্থাৎ ডলারের মধ্যম রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। ফলে, তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে এবং আন্তঃব্যাংক লেনদেন করতে পারবে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করবে।

ক্রলিং পেগ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মুদ্রার দরের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে