শিল্পে গ্যাস সংকট চরমে। বেশি অর্থ খরচ করেও উদ্যোক্তারা চাহিদামাফিক গ্যাস পাচ্ছেন না। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ঈদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা কঠিন হবে। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক কারখানা।
চাহিদার তুলনায় দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ঘাটতি থাকায় প্রতিবছর বিপুল তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হয় সরকারকে। আগামী বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির ফলে বিদ্যুৎ, শিল্পের উৎপাদন ও পরিবহন খাতে ব্যয় কমতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোট গ্যাস সরবরাহের ২৫ শতাংশই এলএনজি থেকে সরবরাহ করতে হয়। এলএনজি দিয়ে দেশের শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়ির গ্যাস-বিদ্যুৎ, গাড়ির গ্যাসের কিছু অংশের জোগান হয়। এছাড়া কয়লার ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রেও এই গ্যাস একটি বিকল্প।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। রোববার (২৫ মে) গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি ছিল দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। মোট দুই হাজার ৬৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে ৭৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
এলএনজির ওপর দুইবার ভ্যাট আরোপ করা আছে। এর সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। এই ভ্যাট বাদ গেলে খরচ অন্তত ২০ শতাংশের কাছাকাছি কমে যাবে। এছাড়া আরও সাত শতাংশ অগ্রিম কর আরোপিত আছে। সেটাও বাতিল করা প্রয়োজন।- ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাদ দেওয়া হলে এলএনজির দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমে যাবে। যার সরাসরি সুবিধা পাবে সাধারণ মানুষ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এলএনজির ওপর দুইবার ভ্যাট আরোপ করা আছে। এর সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। এই ভ্যাট বাদ গেলে খরচ অন্তত ২০ শতাংশের কাছাকাছি কমে যাবে। এছাড়া আরও সাত শতাংশ অগ্রিম কর আরোপিত আছে। সেটাও বাতিল করা প্রয়োজন।
এদিকে এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমাতে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এনবিআর থেকে যে কর প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল সেখানেও আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি। করের এই বোঝা কমে গেলে তা জ্বালানি নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন করবে।’
এদিকে ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ পর্যন্ত সম্ভাব্য করহার ঘোষণা অব্যাহত রাখা হতে পারে। এর ফলে করদাতা ও ব্যবসায়ীরা করবর্ষ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সম্ভাব্য করের হার আগেভাগেই জানতে পারবেন।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট থেকে এই চর্চা শুরু হয়েছে। বিনিয়োগ ও কর আদায়ে সরকার ক্রমান্বয়ে প্রোসপেকটিভ বা সম্ভাব্য আগাম কর ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে এনবিআর।