বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট

১৮৯ আমদানি পণ্যে বসছে অগ্রিম আয়কর

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
  ২৭ মে ২০২৫, ১৫:৫০
১৮৯ আমদানি পণ্যে বসছে অগ্রিম আয়কর
ছবি: সংগৃহীত

1

উৎসে কর বিধিমালা, ২০২৪ অনুযায়ী এইচএস কোডযুক্ত ১৮৯টি আমদানি পণ্যে কোনো উৎসে কর নেই। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্যে ১-২ শতাংশ হারে উৎসে কর তথা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বসাচ্ছে সরকার। এদিকে সব পণ্যে একই হারে কর বসানো হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ভুটান থেকে আমদানি হওয়া ৩৩টি পণ্যেও উৎসে কর নেই। ২০১৩ সালে সরকার টু সরকার চুক্তি অনুযায়ী ভুটানের এসব পণ্য সব ধরনের কর ও শুল্কমুক্ত।

এনবিআর দাবি করছে, ১৮৯টি আমদানি পণ্যে উৎসে কর বসালেও পণ্যমূল্য বাড়বে না। অগ্রিম নেয়া কর পরবর্তী সময়ে সমন্বয় (ক্রেডিট দেবে এনবিআর) করা হবে। ধাপে ধাপে করছাড় তুলে নেয়া ও কর পরিপালন বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এতে রাজস্ব-ভিত্তি সম্প্রসারিত হবে। তবে আমদানি পণ্যে অগ্রিম আয়কর নিলে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত ও ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা শিল্পগুলো আরো সংকটে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমদানি পণ্যে উৎস কর থাকা উচিত নয়। এতে পণ্যমূল্য অবশ্যই বাড়বে। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা উৎসে কর বিলোপ চান। রাজস্ব বোর্ডও জানে এটি উত্তম কর চর্চা নয়।’ শুধু রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যেসব পণ্য উৎসে করের আওতায় আসবে তার মধ্যে রয়েছে পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু। আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, ময়দা, ছোলা ও ভুট্টার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে হুইলচেয়ার, এনজিওগ্রাফিক ও গাইড ক্যাথেটার, কৃত্রিম দাঁত, হিয়ারিং এইড ইত্যাদি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটারের মনিটর, প্রিন্টারের রিবন, রাউটার, মডেম, টোনার, অপরেটিং সিস্টেমস ইত্যাদি। এছাড়া শিল্প খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিমান, বাস, মাছ ও মাংস এবং ভুটান থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের ফল উৎসে করের আওতায় আসবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ১৮৯টি পণ্যে আমদানির সময় কোনো ধরনের উৎসে কর নেই। করছাড় ধাপে ধাপে তুলে নেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা সম্ভবত দুই-একটি ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সব পণ্যের ওপর এআইটি আরোপ করতে যাচ্ছি।’

উদ্যোক্তারা বলছেন, কর ফেরতের বিধান থাকলেও বাস্তবে তা প্রায় অসম্ভব। ফলে ব্যবসায়ীদের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে—হয় পণ্যের দাম বাড়ানো, নয় লোকসান মেনে নেয়া।

নীতিনির্ধারকেরা জানিয়েছেন, শূন্য-কর সুবিধা থেকে সরে আসার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, করদাতাদের সুবিধার জন্যই অগ্রিম কর চালু করা হয়েছে। কিস্তিতে তারা কর পরিশোধ করতে পারেন, যা বছর শেষে সমন্বয় করা হয়।

আয়কর আইনের ১৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, অগ্রিম কর হিসেবে পরিশোধযোগ্য ন্যূনতম কর চারটি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। এর মধ্যে অর্থবছরের ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ১৫ মার্চ ও ১৫ জুন প্রতি কিস্তিতে অগ্রিম করের ২৫ শতাংশ করে পরিশোধ করা যায়। এছাড়া আইনে ৫৩ ধরনের উৎসে কর কর্তনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো অগ্রিম কর হিসেবেই কাটা হয়।

অগ্রিম কর নেয়া হলেও ফেরত দেয়া হয় না—ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে এনবিআরের কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ অভিযোগ আংশিক সত্য, তবে বেশির ভাগই অর্ধসত্য। একদিকে ফেরত পাবে না ধরে নিয়ে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে তা উসুল করে, ফলে পরে যা ফেরত পান তাও তাদের লাভ।’

এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে অগ্রিম কর আদায়ের সংস্কৃতি বেশ পুরনো। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই রাজস্ব আহরণে এর চর্চা হয়ে আসছে। সহজে রাজস্ব আহরণের জন্য এটি বেশ কার্যকর পদ্ধতি।

এসএমএসি অ্যাডভাইজারি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে কর ও শুল্কারোপ করা সরকারের জন্য সহজলভ্য একটি উপায়। কারণ করের আওতা বাড়ানো ও সামগ্রিক কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করা কঠিন। সরকার যদি বর্তমানে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ১৮৯টি পণ্যের ওপর অগ্রিম আয়কর আরোপের পরিকল্পনা করে তাহলে এটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব বেশি প্রভাবিত নাও করতে পারে। এর কারণ কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে পরিশোধিত অগ্রিম আয়করকে ন্যূনতম কর হিসেবে গণ্য করা হয় না; বরং এটিকে অগ্রিম আয়কর হিসেবে ধরা হয়, যা চূড়ান্ত করদায়ের বিপরীতে সমন্বয়যোগ্য। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য এটি ন্যূনতম কর হিসেবে বিবেচিত হবে। সাধারণত বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা কর ও শুল্ককে তাদের খরচের অংশ হিসেবে ধরে নেয়, যা নিঃসন্দেহে ওই সব পণ্যের দাম বাড়াবে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে