দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল পরিশোধন করেছে, যা তাদের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ হাজার টন বেশি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএলের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সোমবার (৩০ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত ইআরএল ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন তেল পরিশোধন করেছে, যা তাদের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৫ হাজার টন বেশি। প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে এই প্রথম এত বেশি পরিমাণ তেল পরিশোধন সম্ভব হলো।
ইআরএলের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ লাখ ৭৯ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৩ হাজার টন তেল পরিশোধন করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিশোধনের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৭৯ হাজার টন। গত দশ বছরে ইআরএল মাত্র দুবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান এবং ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত।
ইআরএলের চেয়ারম্যান নাসিমুল গনি বলেন, 'আল্লাহর ইচ্ছায়, ইআরএল সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা এবং নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি তেল পরিশোধন সম্ভব হয়েছে। ৫৭ বছরের পুরোনো এই পরিশোধনাগারে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে কাজ করার ফলে।'
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'বিপিসি ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সরকারের বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর দ্রুত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে।'
তিনি আরও জানান, মহেশখালী ও পায়রায় দুটি নতুন জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, 'মহেশখালীতে ইতোমধ্যে জমি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ১০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার একটি শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরেও আরেকটি শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।'
বিপিসির তথ্যমতে, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইআরএল বিপিসির মাধ্যমে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল শোধন করে। প্রতিষ্ঠানটি এলপিজি, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, ডিজেল ও ফার্নেসসহ মোট ১৪ ধরনের জ্বালানি উৎপাদন করে। দ্বিতীয় ইউনিট নির্মিত হলে তাদের বার্ষিক পরিশোধন ক্ষমতা আরও ৩০ লাখ টন বাড়বে।
তবে দীর্ঘদিন পরিশোধন ক্ষমতা না বাড়ানোর কারণে দেশে এখনও ব্যাপক হারে ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে, ফলে প্রতিবছর সরকারের অতিরিক্ত ডলার ব্যয় হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়েনি। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হলেও তা ১৩ বছরেও অনুমোদন পায়নি। অনুমোদিত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হতো বলে জানানো হয়।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, 'সক্ষমতার বেশি পরিশোধনের জন্য একাধিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করেছে। ধারাবাহিকভাবে কাঁচা তেলের সরবরাহ, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক পরিচালনার ফলে আমরা সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে পেরেছি।'