বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকান ইকো কংক্রিট প্রতিযোগিতায় বিশ্বসেরা চুয়েট

চুয়েট প্রতিনিধি
  ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৩৭
আমেরিকান ইকো কংক্রিট প্রতিযোগিতায় বিশ্বসেরা চুয়েট

আমেরিকান কংক্রিট ইন্সটিটিউট (এসিআই) কর্তৃক আয়োজিত " ইকো কংক্রিট কম্পিটিশন ২০২১" শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর 'চুয়েটএক্স (CUETX)' নামক দল।

চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ৬ সদস্যবিশিষ্ট 'চুয়েটএক্স (CUETX)' নামক দলটি এ গৌরব অর্জন করে।

১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় আমেরিকান কংক্রিট ইন্সটিটিউট (এসিআই) ফল কনভেনশন ২০২১ এর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই ফলাফল ঘোষণা করেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসাম আজারি জাফারি৷

প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে ইকুয়েডরের ইউনিভারসিডাড স্যান ফ্রান্সিস্কো দে কুইতো এবং ফিলিপাইনের এটেনিও দে নাগা ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতাটিতে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় ২৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে অংশগ্রহণকারী টিম "চুয়েটএক্স (CUETX)” দলের সদস্যরা হলেন, পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহসিন মাহমুদ, ইসরাত জাহান ও মোসাদ্দেক হামীম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহতাব ইশমাম, মুমতাহিনা আলম এবং জুশান আবদুল্লাহ। চুয়েটএক্স টিমের ফ্যাকাল্টি এডভাইজর ও মেন্টর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম।

এ দলের উপস্থাপনকৃত বিষয়টি ছিল " সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের আংশিক প্রতিস্থাপক হিসাবে পরিপূরক সিমেন্টেটিস উপকরণ ব্যবহার করে কংক্রিট কাঠামোর সেবা জীবন এবং পরিবেশগত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি৷ "

চলতি বছরের জুলাই মাসে এসিআই ফল কনভেনশনে আয়োজিত ইকো কনক্রিট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বের প্রায় ২৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি করে টিম আহ্বান করা হয়। চুয়েটের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সেরা ৬ জন বাছাইয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টিম "চুয়েটএক্স(CUETX)" হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

প্রতিযোগিতাটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাবমিশন রাউন্ডে সর্বোচ্চ ৭ মিনিটের ভিডিও, পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কিত রিপোর্ট এবং সফটওয়্যার এর ফলাফল উপস্থাপনের মাধ্যমে টিম চুয়েটেক্স প্রথম ধাপে বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। ওই উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে ৭ অক্টোবর প্রথম পর্বের ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বহু বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে, বাংলাদেশ থেকে সেরা ১৩ এ জায়গা করে নেয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি, গাজীপুর।

পরবর্তী পর্বে সেরা ১৩ টি দলকে লাইভ ইন্টারভিউতে মুখোমুখি হতে হয় আন্তর্জাতিক ৫ জন কংক্রিট বিশেষজ্ঞদের। ইন্টারভিউতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে চুয়েটএক্স (CUETX) জিতে নেয় প্রথম অবস্থান। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী টিমের জন্য বরাদ্দ ৭৫০ মার্কিন ডলার ও সার্টিফিকেট।

এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কংক্রিটের মিশ্রণ উদ্ভাবন করা যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের উপর ন্যূনতম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান বিশ্বে নির্মাণ কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত উপাদান হচ্ছে কংক্রিট। কিন্তু কংক্রিট তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে সিমেন্টের অত্যাধিক ব্যবহার কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ, জলবায়ুর বিভিন্ন নেতিবাচক পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবক। এসব সমস্যার সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, স্থায়ী ও টেকসই সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নির্মাণ বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিষ্কাশনের সুযোগ অপ্রতুল। এই সকল বিষয় কে মাথায় রেখে ভিন্নধর্মী কংক্রিট মিক্সচার দিয়ে কংক্রিটের ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করাই ছিল টিম চুয়েটএক্স( CUETX) এর মূল লক্ষ্য।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সুদক্ষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে তাদেরকে যথাসম্ভব পরিবেশের জন্য নিরাপদ হিসেবে উদ্ভাবনের বিকল্প নেই। এই গবেষণামূলক কাজটি "টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৯, ১১ এবং ১২" অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

চুয়েটএক্স দলের সদস্যরা জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে কংক্রিট তৈরির জন্য সাধারণত বাইন্ডার হিসেবে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় সিমেন্ট এর পরিবর্তে তিনটি সাপ্লিমেন্টারি মেটেরিয়াল যথাক্রমে সিলিকা ফিউম, ফ্লাই অ্যাশ এবং জিজিবিএস ব্যবহারের নির্দেশনা ছিল। সফটওয়্যার সিমুলেশন করে আমরা দেখিয়েছি এই তিনটি সাপ্লিমেন্টারি সিমেন্টিসিয়াস ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করার মাধ্যমে কংক্রিটের ব্যবহার উপযোগিতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব বৃদ্ধি করা সম্ভব। সাধারণত প্রচলিত কংক্রিট সাধারণত ১০থেকে ১১বছর সার্ভিস দিতে সক্ষম সেখানে সাপ্লিমেন্টারি সিমেন্টিসিয়াস ম্যাটেরিয়াল এর ব্যবহার কংক্রিটের সার্ভিস লাইফ ৪০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দিতে পারে।

তারা আরও জানান, সাধারণত আমরা যখন কংক্রিট তৈরি করি আমরা শুধুমাত্র তার কোয়ালিটি এবং সার্ভিস অ্যাবিলিটি দুইটি প্যারামিটার চিন্তা করে কাজ করি, কিন্তু এই প্রতিযোগিতা থেকে আমরা জানতে পেরেছি কংক্রিট তৈরির সময় পরিবেশের উপর এর প্রভাব এই বিষয়টিও মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। সে কারণে আমরা ডিজাইন করার সময় পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং সক্ষমতা দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি সমতা আনার চেষ্টা করি যেন, উদ্ভাবন কৃত কংক্রিট মিক্স ডিজাইনটি একই সাথে দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের উপর সর্বনিম্ন প্রভাব ফেলে। সিমুলেশন এর মাধ্যমে এবং অসংখ্য ট্রায়াল এন্ড এরর এর মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি কংক্রিটের আয়ু সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায় । উপরন্তু পরিবেশের উপর কংক্রিট এর ক্ষতিকর প্রভাব ২০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।

এ সম্পর্কে চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হক বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অর্জনে আমি গর্বিত ৷ তাদের এই অর্জন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে ৷ আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে৷

টিম চুয়েটএক্স এর ফ্যাকাল্টি এডভাইজর ও চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জিএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার চুয়েট পরিবারের ফ্যাকাল্টি এডভাইজর হিসেবে পরপর তিনটি প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ সাফল্য শিক্ষার্থীদের সাথে আমাকেও অনুপ্রাণিত ও গর্বিত করেছে। এই অসাধারণ মেধাবীদের সাথে কাজ করে ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু করার জন্য সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে