গত তিন দিন ধরে রাজধানীর ডিবি কার্যালয়ে আছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক। পরে তাদের সঙ্গে আরও ৩ জনকে আনা হয়। তবে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয় তাদের নিরাপত্তার জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে ডিবি কার্যালয়ে থাকা নেতাদের অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের নিরাপত্তা পরিবারের কাছে। ডিবি কার্যালয়ে নয়। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার ডিবি কার্যালয়ে এসেও সন্তানের সাক্ষাত পাননি। তখন তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন।
‘সন্তান মা-বাবার কাছে নিরাপদ। ডিবি অফিসে কীসের নিরাপত্তা? আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।’ এসব কথা বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার।
নিরাপত্তার কারণে নাহিদসহ চিকিৎসাধীন তিন সমন্বয়ককে হাসপাতাল থেকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে– ডিবি পুলিশের এমন বক্তব্যের জবাবে মমতাজ নাহার এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নাহিদকে আবারও নির্যাতন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
এদিকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন– এমন একটি ভিডিওবার্তা গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদমাধ্যমে আসে। তবে আত্মগোপনে থাকা অন্য সমন্বয়করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, ডিবি কার্যালয়ে থাকা নেতাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে।
গতকাল রোববার নাহিদের মা, খালা ও ফুফুসহ পরিবারের পাঁচজন রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নাহিদের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশে যেতে চেয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ, মিন্টো রোডের মুখে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদের আটকে দেন। এরপর তারা রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
মমতাজ নাহার বলেন, ‘ডিবি বলেছে– নিরাপত্তার কারণে নাহিদকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ডিবি অফিসে তারা নিরাপদ এমনটি কেউ মনে করে না। সন্তান সবচেয়ে নিরাপদে থাকে পরিবারের কাছে। আমার সন্তানকে যেন সরকার ফেরত দিয়ে দেয়। নাহিদের মতো প্রতিটি শিক্ষার্থীকে যেন মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগেও নাহিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। সবাই তার শরীর দেখেছে, কীভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে গত শুক্রবার ডিবি তাদের নিয়ে যায়। এর আগে দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে শনিবার সন্ধ্যায় ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।
এদিকে আরও এক সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তিনি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি ডিবি।
গতকাল ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে সমন্বয়কারীদের হেফাজতে আনা হয়েছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, এসব দুর্বৃত্ত, এসব জামায়াত-শিবির চক্রদের ধরার দায়িত্ব আমাদের। কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপদে নিয়ে আসা।’
নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, তারা নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাছে আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল, এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা কারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, কারা কারা তাদের উস্কানি দিয়েছিল– এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তারা কিছু নাম ও নম্বর আমাদের দিয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আনা হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব, দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
যাযাদি/ এস