বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পখাত-পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিপিআইএ)।
সোমবার (১৬ জুন) ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিরাপদ প্রোটিন সরবরাহ এবং সাধারণ ভোক্তার জন্য যৌক্তিক মূল্যে ডিম ও মুরগির মাংস সরবরাহে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এই দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেছেন সংগঠনটির সভাপতি শাহ হাবিবুল হক।
বিপিআইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে দেশের পোল্ট্রি শিল্প প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এই শিল্প। চার দশকের পরিশ্রম, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে দেশের বর্তমান পোল্ট্রি অবকাঠামো।
তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খাতটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। খাদ্য, বাচ্চা, ভ্যাক্সিন ও ওষুধের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে খামারিদের উৎপাদন ব্যয়ে। এ অবস্থায় বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা লোকসানের মুখে পড়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যার প্রভাব আগামী দিনে ডিম ও মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিপিআইএ।
পোল্ট্রি খাতকে আরও টেকসই করতে এবং উৎপাদনকারী ও ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ গড়তে এসোসিয়েশনটি জাতীয় বাজেটে ছয়টি প্রধান দাবি উপস্থাপন করেছে:
১. প্রযুক্তি ক্রয়ে সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ:
২. ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা ও আধুনিক স্টোরেজ: রমজান এবং ঈদকেন্দ্রিক সময়কালে ডিমের চাহিদা হ্রাস পায়, যার ফলে খামারিরা লোকসানে পড়ে। এই সংকট মোকাবিলায় ডিম উৎপাদন প্রবণ জেলাগুলোতে আধুনিক ও উন্নত স্টোরেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বিপিআইএ। এই খাতে পাইলটিং প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখার দাবিও জানানো হয়।
৩. বিদ্যুৎ বিলে ছাড়ের প্রক্রিয়া সহজীকরণ: বর্তমানে ছোট খামারিরা বিদ্যুৎ বিলে ২০% রিবেটের সুবিধা নিতে পারেন না নানা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে। ট্রেড লাইসেন্স, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবন্ধন এবং বিপিআইএ’র পরিদর্শন রিপোর্টের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ছাড়ের সুবিধা প্রদান এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪. পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার স্থাপন: ফড়িয়া ও মৌসুমি মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমাতে খামারিদের সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ তৈরি করতে ‘পোল্ট্রি পণ্য বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। জেলার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট স্থানে অবকাঠামোগত সুবিধা গড়ে তোলার জন্যও বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনরুদ্ধার: অতি বৃষ্টি, বন্যা ও ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা ও পুনরুদ্ধারে বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা পুনরায় উৎপাদনে ফিরতে পারেন এবং প্রোটিন সরবরাহে ঘাটতি না হয়।
৬. উচ্চ শুল্ক হার হ্রাসের প্রস্তাব: সম্প্রতি এসআরও নং ২০৩ (২৯ মে ২০২৫) এর মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে পোল্ট্রি ফিড ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হলেও, কিছু HS Code-এ এখনও উচ্চ শুল্ক বহাল রয়েছে। এগুলোর পুনর্মূল্যায়ন ও শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিপিআইএ।
বিপিআইএ সভাপতি বলেন, “পোল্ট্রি শিল্প সরল সমীকরণে চলে না। প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও খামারিরা প্রতিনিয়ত দেশের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে প্রোটিন সরবরাহ নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। তাই জাতীয় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক।”