গণঅভ্যুত্থানের সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া মুদি দোকানদার ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন।
এরআগে, দুপুরে দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো. সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে তিনি মঙ্গলবার (২৪ জুন) জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
পরবর্তীতে মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য সরনাপন্ন হলে বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ জুলাই হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।
মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকে চিনেনও না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেপ্তার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করেছি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে তার শুনানি করে আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন ।
এর আগে জামিন আবেদনের আগে ও পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
এসময় জেলের তালা ভাঙবো মাহমুদুল স্যারকে আনব, মাহমুদুল স্যারের মুক্তি চাই দিতে হবে', 'জুলাই নিয়ে বাণিজ্য চলবে না চলে না, আমার স্যার জেলে কেনো জবাব চাই জবাব চাই ' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহমুদুল স্যার নির্দোষ। তিনি জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে তাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, মাহমুদুল স্যারকে যে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে, সেটা ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা। কোনো তদন্ত ছাড়াই স্যারের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পরে বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে শিক্ষার্থীরা বেরোবি প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। দেড় ঘন্টা বিক্ষোভের পর জামিন মঞ্জুরের খবরটি নিশ্চিত হয়ে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেন তারা।
বিতর্কের মুখে বদলি করা হয়েছে হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে। বদলির বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২২ জুন) মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বদলি আদেশ থেকে জানা গেছে, হাজিরহাট থানার ওসিকে মহানগর ডিবির পরিদর্শক ও মহানগর ডিবির পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজিরহাটের ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে ছমেস উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার গ্রেপ্তারের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা এই গ্রেপ্তারকে গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন এবং দ্রুত তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।