সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাইতে সমাজের ছিন্নমূল মানুষেরাই সবার আগে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে: জুনায়েদ 

জবি প্রতিনিধি
  ২২ জুন ২০২৫, ২০:৪৭
জুলাইতে সমাজের ছিন্নমূল মানুষেরাই সবার আগে গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে: জুনায়েদ 
ছবি: যায়যায়দিন

জুলাই-আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, সমাজে যারা কিশোর গ্যাং, বখাটে এবং যাদের সাথে চলতে-ফিরতে-বসতে আমরা অস্বস্তি অনুভব করি—সেই সকল ছিন্নমূল মানুষরাই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সবার আগে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে।

রবিবার (২২ জুন) ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ-এর (আপ বাংলাদেশ) আয়োজনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা এই দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার। আমরা জুলাইয়ে দেখেছি, এ দেশের ছাত্র-জনতা সকল ধরনের রাজনৈতিক আদর্শকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যেভাবে ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছে, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশের পুনর্গঠনে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থানকে যতক্ষণ না বিপ্লবে পরিণত করা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সমাজের সচেতন মানুষদের জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। সমাজের সচেতন নাগরিকদের রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং প্রয়োজনে জীবন দেওয়ার কথাও ভাবতে হবে।

আলোচনা সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন বলেন, “জুলাইয়ের স্বীকৃতি না পেলে আমরা ‘জুলাই যোদ্ধারা’ কেউই নিরাপদ নই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিবেদিত সকল ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে যেন কোনো প্রকার বিভাজন সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ, পঙ্গুত্ববরণকারী এবং আহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করে যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন জুলাই বিপ্লবকে ‘মবোক্রেসি’ (Mobocracy) বলে অপপ্রচার চালানো না হয়, সে লক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদের উত্থানের মূল কারণ বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি। অবৈধ নির্বাচনের হোতা ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংসকারীরাই ফ্যাসিবাদের জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে যেন পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান না ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য একটি জবাবদিহিতামূলক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কেবল তাহলেই কেউ ফ্যাসিবাদী শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারবে না।”

এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমন বলেন, “বিগত ১১ মাস পার হয়ে গেলেও জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র প্রকাশ হয়নি—এটা ভাবতেই অবাক লাগে। অথচ এই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতেই তো সরকার গঠিত হওয়ার কথা ছিল।

ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়ার দায় যেমন সরকারের, তেমনি জুলাইয়ে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরও রয়েছে। আর দেরি নয়—অবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে শহিদ পরিবার ও আহতদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এই ঘোষণাপত্রের আলোকে সংবিধান সংস্কার এখন সময়ের দাবি।”

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য মাসুদ রানার সঞ্চালনায় আরও আলোচনা করেন আপ বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা, জবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুল হক, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম, ‘জাস্টিস ফর জুলাই’-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সজিবুর রহমান এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদসহ আরও অনেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে