খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শেখ মো. এনায়েতুল বাবরকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজিই ডিসিপ্লিনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “ অপবাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হয়েছে। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় বিপদগামী শিক্ষার্থী অবৈধভাবে নানা অপবাদ দিয়ে স্যারকে উপাচাযের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা করেন একই সাথে আমাদের শিক্ষককে বিভিন্নভাবে অকথ্য ভাষায় কথা বলে লাঞ্চিত করেন।”
মানববন্ধনে বিজিই ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৃজা বলেন, ”আমাদের জীবনে পিতামাতার পর যে স্থানটি সবচেয়ে মর্যাদার, তা একজন শিক্ষকের। শিক্ষকই আমাদের শিষ্টাচার শেখান, শেখান কীভাবে গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়।
এমন একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সঙ্গে কোনো লাঞ্ছনাকর ঘটনা ঘটে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কখনোই কল্পনা করতে পারি না, কোনো শিক্ষকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করবো।
তিনি যদি কোনো ভুল করে থাকেন, ফ্যাসিজমের সাথে জড়িত থাকেন কিংবা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থেকে থাকে, তবে তা তদন্তসাপেক্ষে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তাকে অপমান করা বা লাঞ্ছিত করা গ্রহণযোগ্য নয়”।
একই ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, আমরা স্যারের পাঠদান সম্মন্ধে অবগত আছি। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিপদগামী শিক্ষার্থী যারা হঠাৎ করে স্যারের রুমে ঢুকে স্যারের সাথে অশোভন আচরণ করে জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগ করায়। এটা পুরো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপমান। একদল শিক্ষার্থী কিভাবে শিক্ষকের টেবিলে উঠে শিক্ষককে অপমান করতে পারে, জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারেন, তাকে হেনস্তা করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়েরে প্রশাসন কে আহ্বান জানাচ্ছি , আপনারা অতিদ্রুত এর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন এবং উক্ত শিক্ষার্থীদের বহিঃষ্কার করবেন”।
গত শনিবার (২১ জুন) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ মো. এনায়েতুল বাবর। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পূর্ববতী সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে প্রেরিত তার জীবন বৃত্তান্তেই উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, খুলনা মহানগর কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য।
সূত্রটি জানায়, খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্য হিসেবে হিসেবে নিয়োগদানের পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে প্রেরিত তাঁর প্যানেল প্রাথমিকভাবে বাদ পড়ে। পরে আওয়ামী লবিংয়ে তিনি এককভাবে ভিসি মনোনীত হন।
এছাড়াও, আগে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন মহলে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন ফল হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা এক দফার আন্দোলন শুরু করে ভিসি ও রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তালাবদ্ধ করে দেওয়াসহ তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।