ছোটপর্দার জগতে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের পথ প্রশস্ত করলেও এক পর্যায়ে এই প্রশস্ত পথ যে আরও অনেক চওড়া ও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাবে সেটা কি তাসনিয়া ফারিণও কখনো ইমাজিন করতে পেরেছিলেন? ছোটপর্দায় একের পর এক নাটকে সফলতার সাক্ষর রেখে দেশের গণ্ডির ভিতর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল তার নাম তো দ্রুতই কিন্তু এটা যে লাফিয়ে পড়বে সীমানার ওপারেও কে-ই বা ভাবতে পেরেছিল! তাই তো দেশের ভিতরের ছোট একটা মানচিত্রের দর্শকজুড়ে নয় এই মানচিত্র ডিঙিয়ে আরও বিশাল বড় পরিসরে আরেক দর্শক দুনিয়ার পথে তার পা পড়ল তাসনিয়া ফারিণের। হয়ে গেল তার প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবিটিই ভারতের! গত ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া ‘আরও এক পৃথিবী’ নামে যে ছবিটিতে তিনি অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ সেটারও শুটিং হয় লন্ডনে। অর্থাৎ আরেক মানচিত্রের দেশে। এরপরই কিনা আবার ওই একই শহরের প্রবাসী পাত্রের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। তবে কি তাসনিয়া ফারিণের মন খালি বিদেশ-বিদেশই করে!
এভাবে যেন একের পর এক বিদেশের সঙ্গেই সখ্য ঘটতে থাকে। ওই ভারতের টলিউডে ‘আরও এক পৃথিবী’ নামের ছবিতে অভিনয় করলেন ওই নামের ভিতরেই কী তবে তার অভিনয়ের এমন বার্তার ললাট লিখন হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশই কেন, বাংলাদেশের বাইরে ‘আরও এক পৃথিবী’ যে আছে সেখানেও তোমার পরিভ্রমণ হবে। ঠিক এরকম বার্তাই যদি না থাকবে তাহলে কেনই বা টলিউডের সেই ছবিটির আগেই তিনি এমন আরেকটি ছবিতে কাজ করবেন যেটার প্রদর্শনী প্রথমেই হবে বিদেশে? তবে ‘আরও এক পৃথিবী’ নামে ছবিটি নিয়ে এতই আলোচনা হলো যে, মানুষ ভুলেই গেল ২০১৭ সালেই ‘ফাতিমা’ নামে আরও একটি বিদেশি ছবিতে কাজ করেছেন তাসনিয়া ফারিণ। তবে শুটিং চলাকালে প্রথমে এই ছবিটির নাম রাখা হয়েছিল ‘দাহকাল’। পরে সেটার নাম পরিবর্তন করে ‘ফাতিমা’ রাখা হয়। এটা ছিল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম অভিষেক সিনেমা। যার শুটিং শুরু হয় ২০১৭ সালে। ধ্রুব হাসানের নির্মাণে ছবিটির দীর্ঘ শুটিং শেষ হয় এক লম্বা জার্নির মধ্যদিয়ে ২০২৩ সালের জুনে। ৭ বছরের সেই জার্নিতে ‘ফাতিমা’র বিভিন্ন চরিত্রে আরও যুক্ত হন মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, আয়শা মনিকা, পান্থ কানাই, ইয়াশ রোহানসহ অনেকেই। এতে অতিথি শিল্পী হিসেবে যুক্ত হন তারিক আনাম খান, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাকিল আহমেদ, এবিএম সুমন ও শাহেদ আলী সুজন।
সেই দীর্ঘ শুটিং ও পোস্ট প্রডাকশন পর্ব শেষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রদর্শনীর জন্য পা রাখে ছবিটি। সেই সুবাদে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো এবং ইন্ডি গেদারিং ইন্টারন্যাশনাল চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয় ছবিটি। তবে আরও বড় প্রাপ্তির আশায় উৎসব দু’টিতে ছবিটির প্রিমিয়ার করেননি নির্মাতা।
আগামী ১ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি তেহরান শহরে শুরু হচ্ছে এই উৎসব।
এই ছবিটি নির্মাণে কেন নির্মাতাকে সাত বছর সময় পার করতে হলো এ নিয়ে নির্মাতা বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে বলা যায় অর্থনৈতিক কারণে আটকে ছিলাম। প্রথমে এর নাম দিয়েছিলাম ‘দাহকাল’। দুর্ভাগ্যবশত শুটিংয়ের মাঝপথে লগ্নিকারক হুট করে ব্যক্তিগত কারণে হাত গুটিয়ে নেন। ফলে ছবিটার শুটিং একরকম আটকে যায়। এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নতুন ভাবনা নিয়ে শুরু করি। জন্ম হয় ‘ফাতিমা’র।’
ছবিটির আলোচকদের মতে, যেহেতু ছবিটি নির্মাণে সাত বছর গেছে কাজেই এই ছবিটির পেছনে নির্মাতার অনেক চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার ছাপ থাকবে। ফলে নির্মাতা-প্রযোজকের টানা সাত বছরের যুদ্ধ শেষে ‘ফাতিমা’র এই বৈশ্বিক উৎসব মুখরতায় বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে তেহরানের ফজর উৎসব।
এর মধ্যে ‘ফাতিমা’ মুক্তির ছাড়পত্র পেয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে। তেহরান থেকে ফিরেই এটি মুক্তির সিদ্ধান্ত জানাবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আউটকাস্ট ফিল্মস।
ছবিটির গল্প এ রকম যে, ফাতিমা নামে এক মেয়ে কোনো এক ছোট শহর থেকে ঢাকা আসে কিন্তু সে যেন সারাক্ষণই এই দেশ ও শহর থেকে পালাতে চায়; আসলে পালাতে চায় সে তার জীবন থেকেই। কিন্তু কী ভাগ্যের চক্রে সে যে চরিত্রটিতে প্রথমবারের মতো অভিনয় করার সুযোগ পায়, সেই বীরাঙ্গনা সুবর্ণা যেন তাকে অভিনয় থেকে টেনে নেয় বাস্তবতায়। ফাতিমা ও সুবর্ণা যেন দুই সময়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে; যার দুটো মুখ থাকলেও আদতে সে এক!
নির্মাতার ভাষায়, ‘নতুন করে গোটা গল্প সাজানোর পর নিজের সব সম্পদ এবং বন্ধুদের কাছ থেকে লোন করে শেষ পর্যন্ত ছবিটিকে মর্গ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। তাই ছবিটি নির্মাণে এত বছর লেগে গেল।’
তুহিন তমিজুলের সিনেমাটোগ্রাফিতে ‘ফাতিমা’র গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন পাভেল আরীন। শারমিন সুলতানা সুমী লেখার পাশাপাশি কণ্ঠও দিয়েছেন গানটিতে। এ ছবিতে শোনা যাবে মাশা ইসলামেরও একটি গান।
ছবিটি প্রযোজনা করেছেন নির্মাতা ধ্রুব হাসান নিজেই। সঙ্গে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আদনান হাবিব, সহ-প্রযোজক হিসেবে ছিলেন শামসুর রাহমান আলভী ও আরমান কাদেরী।
যাযাদি/ এস