বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৫
বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ

বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় ফুটে ওঠা নতুন কিছু নয়। চলতি বছরের উৎসবে সেই ধারাবাহিকতায় উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি।

চলচ্চিত্রের ভাষায় বেরিয়ে আসে মানবাধিকার, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব রাজনীতির নানা বিষয়। এর জন্য আলাদা পরিচিতি আছে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। চলতি বছরেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সিনেমার পর্দায় আর আলোচনায় তাই চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ।

১৫ ফেব্রুয়ারি উৎসবের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে অবশ্য খুব একটা প্রতিবাদ বা আলোচনা দেখা যায়নি। যদিও লাল গালিচায় ‘ফ্রি গাজা' লেখা বেশ কিছু প্রতিবাদলিপি চোখে পড়েছে।

কঠোর বিবৃতির দাবি

জার্মানির এই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে বলা হয় বার্লিনালে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে হাজির হন চলচ্চিত্র নির্মাতা, গল্পকথকরা

সেই বার্লিনালেতে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকেই যে প্রতিবাদ এসেছে বিষয়টি তেমন নয়। উৎসবে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন সংগঠনও দেখিয়েছে নানা প্রতিবাদ, করেছে উন্মুক্ত আলোচনা।

উৎসবে বিভিন্ন বিভাগের কিউরেটরসহ বার্লিনালের ৬০ ‘কন্ট্রাক্টর’ এক খোলা চিঠিতে গাজায় মানবিক সঙ্কট নিয়ে কঠোর বিবৃতি প্রদানের জন্য উৎসব আয়োজনকদের আহ্বান জানায়।

অবশ্য উৎসবের ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই সদস্য মারিয়েট্টে রিজেনবিক এবং কার্লো শাটরিয়ান বক্তৃতায় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটে সকল ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ‘সবার কষ্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে এবং জটিল এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে সবার জন্যই এই উৎসব উন্মুক্ত থাকতে হবে।’

তবে ওই অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এই বিবৃতি যথেষ্ট নয়।

বয়কটের আহ্বান ‘স্ট্রাইক জার্মানির’ এদিকে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের আরেকটি অংশ ফোরাম এক্সপান্ডও একটি খোলা চিঠি লিখে। ১০০ কিউরেটরের সাক্ষরসম্বলিত ওই চিঠিতে উৎসব শুরুর আগে যেই চারজন শিল্পী নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে নিয়েছিলেন তাদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেন।

ওই চার শিল্পী নিজেদের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘স্ট্রাইক জার্মানি’ মুভমেন্টের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করেন। স্ট্রাইক জার্মানি মুভমেন্ট ‘জার্মান সরকারের যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানাতে অনিচ্ছার’ প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বয়কটের আহ্বান জানায়।

ইসরাইলি চলচ্চিত্র এগিয়ে এসেছেন ইসরায়েলি শিল্পীরাও। কুণ্ঠা বোধ করেননি নিজ দেশের সরকারের সমালোচনা করতে। বার্লিনালেতে বিখ্যাত ইসরাইলি পরিচালক আমোস গিতাই তার নতুন চলচ্চিত্র শিকুন প্রদর্শন করেন। চলচ্চিত্রটিতে তিনি গত বছর ইসরাইলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিবাদকে ফুটিয়ে তুলেন।

নেতানিয়াহুকে ইসরাইলের জন্য ‘হুমকি’ মনে করেন গিতাই এদিকে বালিনালেতে এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন সরকারের বিষয়ে নিজের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাক্ষাৎকারের শুরুতে হামাসের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়- এমন মত দেন। একই সাথে তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোটের হাতে ইসরাইল বন্দী হয়ে আছে।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) ইসরাইলকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু তার কোনো নৈতিক বাধা নেই, তাই তিনি ইসরাইলের সমাজের সবচেয়ে খারাপ উপাদানগুলোকে একত্রিত করেছেন: উগ্র-জাতিয়তাবাদী, বর্ণবাদী, উগ্রপন্থী, আল্ট্রা-অর্থোডক্স, যারা নারীদের অধিকারের এবং এলজিবিটি গোত্রের মানুষের অধিকারের বিরোধী।’

জার্মানির প্রতি জোরালে নৈতিক অবস্থান নেয়ার আহ্বান মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্ঘাত নিয়ে তৈরি উৎসবে আসা আরেকটি চলচ্চিত্র হলো ‘নো আদার ল্যান্ড’। ছবিতে দেখানো হয়, পশ্চিম তীরে ইয়াত্তা গ্রামে দখলদারিত্বের প্রতিবাদে তরুণ কর্মকর্তা বাসেল আদ্রার সংগ্রাম। অবশ্য বাসেল আদ্রা নিজেও এই মুভিটির একজন সহ-পরিচালক।

ছবিতে দেখানো হয়, তিনি কিভাবে ইসরাইলি সাংবাদিক ইয়ুবাল আব্রাহামের সাথে যুক্ত হন। ইসরাইলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদে আরবি ভাষা শিখে আব্রাহাম একজন কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন।

এক সাক্ষাৎকারে আব্রাহাম বলেন, ‘আমি জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে জার্মানদের মধ্যে অপরাধের বোধ রয়েছে।’

তিনি জানান, তার অনেক আত্মীয়কেই হলোকাস্টের সময়ে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ওই অনুভূতিকে এখন ব্যবহার করবেন না এবং কাজে লাগাবেন না্ এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো থেকে বিরত থাকবেন না। ওই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরকে একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করতে সাহায্য করুন। এটিকে ব্যবহার করে ইসরাইল রাষ্ট্রের ওপর দখলদারিত্ব বন্ধে চাপ তৈরি করুন। সূত্র : ডয়চে ভেলে

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে