শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের কার্যকারিতা

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:১৫
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের কার্যকারিতা
ছবি: যায়যায়দিন

সমস্যা ও সমাধান" শীর্ষক এক গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন সেমিনার আজিমুর রহমান কনফারেন্স হল, ডেইলি স্টার সেন্টার, কারওয়ান বাজার, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি সিপিআরডি,আইসিসিসিএডি (ওঈঈঈঅউ), ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ণড়ঁঃয৪ঘউঈং, এবং এৎববহঢ়বধপব-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। গবেষণা উপস্থান অনুষ্ঠানে সিপিআরডি এবং আইসিসিসিএড কর্তৃক পরিচালিত দুটি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

সিপিআরডির গবেষণাটি স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা এবং সামগ্রিকভাবে জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস বা প্রতিরোধে কার্যক্রম চিহ্নিত করণের জন্য পরিচালিত হয়। এছাড়া কোন ধরনের অভিযোজন কৌশল সময়ের সাথে সাথে কার্যকারিতা হারাচ্ছে ক্ষতিয়ে দেখা হয়। অভিযোজন প্রচেষ্টার কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব নির্ধারণকারী সম্ভাব্য কারণসমূহও এতে শনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযোজন কার্যক্রমকে আরও কার্যকর, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই করার জন্য নীতিগত সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। ওঈঈঈঅউ পরিচালিত গবেষণাটি বাংলাদেশে কার্যকর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের চ্যালেঞ্জ: দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা এবং উত্তর-পূর্ব হাওর অঞ্চল থেকে প্রমাণ অনুসন্ধানে পরিচালনা করা হয়।

এছাড়া স্থানীয় প্রেক্ষাপট ভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিযোজন সূচক তৈরির মাধ্যমে সামগ্রিক এএঅ লক্ষ্যমাত্রার সাথে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন (খখঅ) অন্তর্ভুক্ত করার উপায়গুলি অন্বেষণ করা এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টা এবং দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে ঘঅচ কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা অনুসন্ধান করা, সম্পদ সংগ্রহ করা এবং স্থানীয় অংশীদারদের সম্পৃক্ত করার পথ অনুসন্ধানে পরিচালনা করা হয়।

গবেষণার সমূহের তথ্য সংগ্রহের জন্য “লিটারেচার রিভিউ”, "মূল তথ্যদাতা সাক্ষাৎকার”," মাঠ পর্যবেক্ষণ”, "দ্রæত মূল্যায়ন," এবং "পরামর্শ সভা" পরিচালনা করা হয়। এতে উপজেলা পর্যায়ের উঅঊ, উউগ, উখঝ, ডউই, উডঈঅ, খএঊউ, উচঐঊ, উএঐঝ, স্থানীয় এনজিও ও স্থানীয় সরকার নেতৃবৃন্দ অংশনেন। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও আদিবাসীদের সাথে "দলীয় আলোচনা" করা হয়। মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয় দুটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল- "হাওর অঞ্চল" এবং "দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল" থেকে।

গবেষণায় অভিযোজন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান শূন্যস্থান ও সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে, অভিযোজন প্রকল্পগুলো প্রধানত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (উজজ) কেন্দ্রিক, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানের উপর নির্ভরশীল, এবং সমাজের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ওপর কম গুরুত্ব দেয়। অভিযোজন কার্যক্রমগুলো প্রয়োজনভিত্তিক নয় এবং এতে অর্থনৈতিক ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যও বিবেচনায় আনা হয়নি। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, ভবিষ্যৎ ঝুঁকিগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি এবং স্থানীয় জ্ঞান ও ঐতিহ্যগত ব্যবস্থার ওপর কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভুল স্থানে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, প্রতিবন্দীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা না থাকা, নিরাপত্তার অভাব, জীবিকার অভিযোজনের প্রতি সীমিত গুরুত্ব, আইলার পর লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের ফলে ভুল জীবনধারার অভিযোজন, মৌসুমী বেকারত্ব ইত্যাদি সমস্যার কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, শাসন ব্যবস্থার অভাব, জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার সংকট, অনুসন্ধানকারীদের হুমকি সম্মুখীন হওয়া, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল কার্যকারিতা- এসব সমস্যাও গবেষণায় উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে বিআইডিএসে’র প্রাক্তন গবেষণা পরিচালক ড. এম. আসাদুজ্জামান এবং পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলেরাব্বী সাদেক আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিআইডিএসে’র প্রাক্তন গবেষণা পরিচালক ড. এম. আসাদুজ্জামান বলেন উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও অভিযোজিত এবং অঞ্চল-নির্দিষ্ট হওয়া উচিত এবং ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্বতন্ত্র ভাবে বিবেচনা করতে হবে। অবকাঠামোগত সমাধান বা উন্নয়নকে কেবল একমাত্র সমাধান হিসাবে দেখার সুযোগ নেই; আমাদের টেকসই উন্নয়নের কথাও বিবেচনা করতে হবে। অভিযোজন কার্যক্রমে কৃষি, জীবিকা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ এবং মানবাধিকারের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ তাদের অঞ্চলে দুর্যোগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পরিচিত, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জন্য এটি অনেক কঠিন করে তুলছে। তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন, তবে এটি প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট হতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত এবং মালিকানাধীন হওয়া উচিত। আমরা যদি সমস্যা এবং সমাধান সনাক্ত করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সুযোগ দেই, তাহলে তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূলতা মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত সমাধান নিয়ে আসবে।

সিপিআরডি’র চিফ এক্সিকিউটিভ মো. শামসুদ্দোহা স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং গবেষণার ফলাফল ব্যাখ্যা করেন ও সুপারিশ প্রদান করেন। তিনি ভবিষ্যৎ ঝুঁকিগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার আহŸান জানান, যেখানে ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক মডেলিংকে অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোজন প্রকল্প তৈরি করা হবে। তিনি স্থানীয় চাহিদা নির্ধারণ করে অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেন এবং বিদ্যমান বৈষম্য বিবেচনা করে অভিযোজন কার্যক্রমকে ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর করার ওপর গুরুত্বদেন।

আইসিসিসিএডি-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সাকিব হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রণ অত্যাবশ্যক। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জ্ঞান এবং মতামতকে যথাযথ ভাবে গুরুত্ব প্রদান অপরিহার‌্য। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু অভিযোজন কার্যক্রমে স্থানীয় মানুষ এবং নেতৃত্বের অংশগ্রহণ মারাত্বক ভাবে কম যেটি আমাদের দেশে জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করার পথে অন্তরায়।

অনুষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ আলোচনা অধিবেশনে বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসি অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ লরা কুহল; ওপিএম নেপালের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সিনিয়র পরামর্শদাতা ডঃ বিমল রাজ রেগমি; গেøাবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিনিয়র ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন স্পেশালিস্ট ফয়সাল রহমান।

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের মূল ক্ষেত্র এবং ফাঁকগুলি তুলে ধরা হয়। অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন শুশীলানের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ মোঃ নাসির উদ্দিন ফারুক; ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন; জসমিমা সাবাতিনা, কন্টাক্ট পয়েন্ট, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ওয়ার্কিং গ্রæপ, ইয়ংগো; আমানউল্লাহ পোরাগ, ইডি, ইয়ুথ৪এনডিসি; ফারিয়া হোসেন ইকরা, মানবাধিকার কর্মী।

সিপিআরডি পরিচালিত গবেষণা উপস্থাপন করেন সিপিআরডির সহকারী ব্যবস্থাপক-গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি শেখ নূর আতায়া রাব্বি এবং সিপিআরডির গবেষণা কর্মকর্তা-জেন্ডার ও মানবাধিকার শানজিয়া শামস। আইসিসিসিএডি পরিচালিত গবেষণা উপস্থাপন করেন আইসিসিসিএডির গবেষণা সহযোগী তোরিন জামান রায়া। অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিপিআরডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার - গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি, সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে