মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

আখাউড়ায় রেলওয়ের বাসায় থাকে আম জনতা, বিদ্যুতের হরিলুট

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬:৩২
আখাউড়ায় রেলওয়ের বাসায় থাকে আম জনতা, বিদ্যুতের হরিলুট
আখাউড়ায় রেলওয়ের বাসা: ছবি যায়যায়দিন

বাসা নং- ১৩৫। দুই রুমের এই বাসায় যিনি থাকেন তিনি রেলওয়ের কর্মচারী নন। তার নামে বাসার বরাদ্দ নেই। পশ্চিম কলোনীতে একটি বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এক বৃদ্ধ। তিনিও রেলওয়েতে চাকরি করেন না।

প্রায় ৫ বছর ধরে কুমারপাড়া কলোনীর একটি বাসায় থাকেন খুদেজা বেগম (ছদ্মনাম)। তার নামেও ওই বাসা বরাদ্দ নেই।

পূর্বাঞ্চল রেলপথের আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের রেলওয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য নির্মিত দেড় শতাধিক বাসার চিত্রই এমন। রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের চেয়ে আম জনতাই বেশি থাকেন এসব কোয়ার্টারে। প্রতিটি বাসাতেই রয়েছে রেলওয়ের বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ। অথচ এসব বাসায় ব্যবহৃত বিদ্যুতের লাল লাখ টাকার বিল পরিশোধ করছে সরকার। এভাবেই আখাউড়া রেলওয়ের সম্পদের হরিলুট চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

এসব অবৈধ বসবাসকারীদের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কার্যকলাপে। রেলওয়ের বাসায় মাদক সেবন ও মাদক বিক্রি হয় বলেও অভিযোগও রয়েছে। চুরির ঘটনাও ঘটছে মাঝে মধ্যে।

ফলে বিনষ্ট হচ্ছে রেলওয়ে কলোনীর সুষ্ঠু পরিবেশ। অভিযোগ আছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘ম্যানেজ’ করে রেলওয়ের বাসায় বসবাস করছেন বহিরাগতরা।

আখাউড়া রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে কলোনীতে ২৬৬টি কোয়ার্টার/বাসা রয়েছে। এরমধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ আছে ১১০টি। নন এলোট বা বরাদ্দহীন ১৫৬টি বাসায় বহিরাগতরা অবৈধভাবে বসবাস করছে। এরমধ্যে কুমারপাড়া কলোনীতে ৭২টি. পূর্ব কলোনীতে ৪২টি, পশ্চিম কলোনীতে ২৪টি, ষ্টেশন কলোনীতে ১০টি এবং হরিজন কলোনীতে ৮টি বাসায় অবৈধ বসবাসকারী রয়েছে। এসব বাসায় বসবাসরতরা অবৈধভাবে রেলওয়ের বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। রেলওয়ের বাসাকে দোকান বানিয়ে ব্যবসা করছে কয়েকজন প্রভাবশালী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের বাসায় অবৈধ বসবাসকারী লোকজন বিভিন্ন পেশায় জড়িত। এরমধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিকের কাজ করে। কেউ কেউ ব্যবসা করে। কেউ অটো চালায়। আবার কিছু রেলওয়ে কর্মচারী বরাদ্দ না নিয়ে বাসায় থাকছে।

রেলওয়ের বাসায় বসবাসকারী এক নারী বলেন, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ৪/৫ বছর ধরে রেলের বাসায় থাকি। মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। বাসা ভাড়া লাগে না। বিদ্যুতের লোক এসে মাসে মাসে কিছু টাকা নিয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ বলেন, তিনি রেলওয়েতে চাকরি করতেন। এখন অবসরে আছেন। পরিবার নিয়ে রেলওয়ের একটি বাসায় থাকেন। বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ মাসিক কিছু টাকা দিতে হয়।

এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী/কার্য মিথুন কুমার দাস বলেন, রেলওয়ে কলোনীর ১৫৬টি বাসায় অবৈধভাবে ভবঘুরে ও বহিরাগতরা বসবাস করছে। অবৈধ বসবাসকারীরা বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপসহ মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ পতিতাবৃত্তি কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। এতে কলোনীর পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

এসব অবৈধ বসবাসকারীদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য রেলওয়ে পুলিশ ও বেঙ্গল পুলিশকে আমি ৩ মাস পূর্বে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কারও কাছ থেকে বাসা ভাড়া উঠানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। বিদ্যুতের সংযোগের দায়িত্ব আমার অফিসের নয়।

এ ব্যাপারে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের সহকারী প্রকৌশলী (এইএন) আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সেই কমিটির প্রধান। তদন্তক্রমে বাসাগুলোর বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করব। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে