বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবার ফিরছে দেশি প্রজাতির বিপন্ন মাছ

আবু সালেহ মো. মূসা, ময়মনসিংহ
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আবার ফিরছে দেশি প্রজাতির বিপন্ন মাছ

বিলুপ্তপ্রায় ৬১ প্রজাতির মাছ খাবার টেবিলে আবার ফিরে আসছে। চাষাবাদ ও জলাশয়ে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে চাহিদা ও কদর আবারও ফিরছে বলে মনে করছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।

এর আগে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে জানায়, বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪। উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় শুকিয়ে যাওয়াই মূল কারণ। এরপরই দেশীয় প্রজাতির এসব মাছকে বিলুপ্তের হাত থেকে বাঁচাতে গবেষণা শুরু করে বিএফআরআই।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এখন অনেকটাই সহজলভ্য বিপন্ন প্রজাতির পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, চিতল এবং ফলি মাছ। দামও নাগালে। বছর দুয়েক আগেও পাবদা মাছ কেজি প্রতি এক হাজার থেকে বারোশ' টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা ৫শ' টাকার নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ২০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে- পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, ফলি, চিতল, গুতুম, বালাচাটা, গুজি, আইড়, কুচিয়া, খলিশা, গনিয়া, কালিবাউস, ভাগনা, মহাশোল ও দেশি পুঁটি।

এছাড়াও বর্তমানে ইনস্টিটিউটে রানি মাছ, কাকিলা, গজার, শাল বাইম, বৈরালী মাছ, আঙ্গুস ও খোকসা মাছ এবং উপকূলীয় এলাকার কাইন মাগুর (কাউন) মাছের প্রজনন ও চাষ কৌশল উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করায় পোনাপ্রাপ্তি সহজতর হয়েছে। অনেকে চাষাবাদেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন দেশের প্রায় শতাধিক হ্যাচারিতে দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। পরে ব্যবহার করা হচ্ছে চাষাবাদে। কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক লোকের।

এ প্রসঙ্গে ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ যায়যায়দিনকে বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বর্তমানে ইনস্টিটিউটের যশোর, সৈয়দপুর ও ময়মনসিংহ গবেষণা কেন্দ্র থেকে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে।

তিনি আরো জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে প্রাকৃতিক জলাধার যেমন বিল, হাওড়, খাল-বিল ও নদনদীতে এসব মাছের প্রাপ্যতা হ্রাস পেয়েছে।

মৎস্য খাতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় চলতি বছর একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে একুশে পদক পেয়েছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৬১টি মৎস্যচাষ ও ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও গবেষণাধর্মী এই প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য ব্যাপক যোগ করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে পুকুরভিত্তিক মৎস্যচাষ উন্নয়ন, মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবন, মাছের পুষ্টি ও খাদ্য উন্নয়ন, রোগবালাই দমন, প্রণোদিত পদ্ধতিতে মিঠাপানির ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদন, জিনপুল সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে