সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চফলনশীল ধানের নতুন দুই জাতের অনুমোদন

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

উচ্চফলনশীল নতুন দুই জাতের ধানের উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ধানের জাতগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। এ নিয়ে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৫টি। ব্রি ইতোমধ্যে বন্যা, খরা, লবণসহিষ্ণু ধানের জাত ছাড়াও আঘাতসহিষ্ণু কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে।

নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান-১০৭ একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। আর ব্রি ধান-১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারাদেশে চাষের উপযোগী। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত নতুন দুই জাতের উচ্চফলনশীল ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।

ব্রি ধান-১০৭ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৩ সেমি। ব্রি ধান-১০৭ এর গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন যা ব্রি ধান-৫০ এর সমান। এর ডিগ পাতা প্রশস্ত, খাড়া ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৮.১৯ টন, তবে এটি অনুকূল পরিবেশে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৯.৫৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। পিভিটি পরীক্ষায় দশটি অঞ্চলে ব্রি ধান-১০৭ এর ফলন চেক জাত ব্রি ধান-৫০ এর চেয়ে প্রায় ১৭.৬৭ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়। এ ধানের গুণগতমান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি অতি লম্বা চিকন (৭.৬ মি.মি.)। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজ এবং প্রোটিনের পরিমাণ যথাক্রমে ২৯.১ শতাংশ এবং ১০.০২ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান-১০৭ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ২৬.১ গ্রাম। এ ধানের দানার রং খড়ের মতো এবং চাল অতি চিকন ও সাদা। উচ্চফলনশীল, অতি চিকন চাল ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এ জাতটি চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হবে বলে আশা করা যায় এবং ফলশ্রম্নতিতে ব্রি ধান-১০৭ চাষে বাংলাদেশের সামগ্রিক ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।

এ জাতটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫ সালে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ লাইন বাছাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে নির্বাচিত কৌলিক সারিটি ৩ বছর সফল ফলন পরীক্ষণের পর ২০১৯ সালে ব্রি'র আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ২০২২ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বের্াডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতটি ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের আজকের সভায় সারাদেশে চাষের জন্য একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উচ্চফলনশীল বালাম জাতের বোরো ধান হিসেবে লতা বালাম কে ব্রি ধান-১০৭ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

ব্রি ধান-১০৮ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেমি, এর ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ, একই সঙ্গে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। ব্রি ধান-১০৮ এ উচ্চফলন ও ফাইন গ্রেইন-এর সমন্বয় ঘটেছে। এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রতিটি ছড়ায় অধিকসংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন ৮.৭ টন। হেক্টরে যা ব্রি ধান-১০০ জাতের চেয়ে ১.০-১.৫ টন বেশি। ব্রি ধান-১০৮ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬.৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন- যা জিরা চালের অনুরূপ; ভাত ঝরঝরে, রং সাদা, অ্যামাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪.৫ শতাংশ এবং ৮.৮ শতাংশ।

নতুন অনুমোদিত ধানের প্রতিটি ছড়ায় অধিকসংখ্যক ধান (২৫০-২৭০টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত। ওজন ৮০৫৬১ এবং ঈযরহধ রহনৎবফ-৩২১ এর মধ্যে সংকরায়ন পদ্ধতিতে বিআরএইচ ১১-৯-১১-৪-৫বি উদ্ভাবিত হয়। ওই কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রিতে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়। এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), গাজীপুর এবং ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানা কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এই নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, ফলন ও অন্যান্য কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান-১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে