বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবহাওয়ার বৈরী আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আবহাওয়ার বৈরী আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত

সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। শীতে কাবু পুরো দেশ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ার কারণেও এত শীত অনুভূত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আগামী দুই/তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। টানা শৈত্যপ্রবাহে রবিশস্য ও বোরো আবাদে রোগবালই দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আগামী দুই/তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। শীতের শুরু থেকেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার কবলে পড়েছে বীজতলা। এ কারণে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো ধানের বীজতলার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে আলু, লাউ, টমেটোসহ শীতকালীন শাকসবজি। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় ঘন কুয়াশার কারণে পচন ধরেছে আলু গাছে। কুয়াশায় পেয়ারার ফুল, পান ও টমেটো গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সার-কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, বিদু্যতের অসহনীয় বিল, উৎপাদিত ধানে লোকসানে এমনিতে বেহাল অবস্থা, এর মধ্যে চলতি মৌসুমে ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষিবিদ আবুল কাশেম বলছেন, বীজ রক্ষায় আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছি। ঘন কুয়াশা বা বেশি ঠান্ডা পড়লে সকালে বীজতলায় পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর পানি ঝেরে দিতে হবে।

শীতের শুরু থেকেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডার কবলে পড়েছে বীজতলা। এ কারণে বীজতলার চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং চারা হলুদ হয়ে দুর্বল হওয়াসহ মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো ধানের বীজতলার পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে আলু, লাউ, টমেটোসহ শীতকালীন শাকসবজির। সূযের্র দেখা না পাওয়ায় ঘন কুয়াশার কারণে পচন ধরেছে আলু গাছে। কুয়াশায় সরিষা ও পেয়ারার ফুল, পান ও টমেটো গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতিনির্ভর। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আবহাওয়া তার ব্যাকরণ ভুলে শস্য পঞ্জিকায় অসময়ে হানা দিচ্ছে। প্রকৃতির বৈরী আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও কৃষির উপখাত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনজীবন যে কত বেশি প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে, তা এখন বেশ দৃশ্যমান। মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে অতিবৃষ্টি, অতি গরম, অতি শীত, অতি কুয়াশা, অনাবৃষ্টি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এতে একদিকে ফসলের ফলনচক্র ব্যাহত হচ্ছে; অন্যদিকে, কৃষিজমি হারাচ্ছে চাষের স্বাভাবিক উর্বরাশক্তি।

রবিশস্য ও বোরো মৌসুমের শুরুত টানা শৈত্যপ্রবাহে মাঠের সবজি ফসলে পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলু ও মরিচ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। কাঁচা মরিচের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পাতা কুঁকড়ানো রোগ। এ দিকে তীব্রশীতে বোরো ধান আবাদ মাঠে যাচ্চ্ছেন না কৃষি শ্রমিকরা। কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলদে হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলমান থাকলে কোল্ড ইনজুরি হতে পারে। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের।

ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে মৌসুমের সবজি ও বোরো বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শাকসবজি ও আলুর ক্ষেতের মড়ক লাগার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আলু ও গম ক্ষেত নিয়ে কৃষকরা বেশি চিন্তিত। ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলায় প্রভাব ফেলছে।

কৃষি সম্প্রসারণের এক সর্তক বার্তায় বলা হয়েছে, কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলদে হয়ে যেতে পারে। সরিষায় বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়তে পারে। আলুর পাতায় মড়ক লাগার আশঙ্কা আছে। সাধারণত এ সময় আম গাছে মুকুল আসে। মুকুল ঝরে পড়তে পারে। মাঠজুড়ে চলছে রবিশস্যের আবাদ। সরিষা, টমেটো, শিম, লাউ, শালগম, বাঁধাকপি, আলু থেকে শুরু করে একাধিক রবি শস্যের ওপর রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বাড়তে পারে। তাই এসব ফসলের বাড়তি যত্ন নিতে হবে।

ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু ও মরিচ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। ফরিদপুর ও লালমনিরহাটে আলু ক্ষেতে লেটবস্নাইটসহ বিভিন্ন রোগের কারণে উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এদিকে, মানিকগঞ্জে কাঁচা মরিচের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পাতা কুঁকড়ানো রোগ। ওষুধ প্রয়োগ করেও মিলছে না প্রতিকার। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় শৈত্যপ্রবাহ, হালকা বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে ফরিদপুরের আলু ক্ষেতে লেটবস্নাইটসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলুর ক্ষেতে ছত্রাক ধরে পাতা ও কান্ড পচে গাছ মরে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় বোরো ধানের বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি দেখা দিয়েছে। এতে চারা মরে যাচ্ছে।

এ দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে 'ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট পস্ন্যান (সিএসএআইপি)' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে বাংলাদেশের কৃষি খাত। উপকূলীয় এলাকায় ফসলি জমির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত। ফলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেও প্রতি বছর ঝড়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এল-নিনোর শিকার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। দেশে কোনো বছর কৃষি মৌসুমে তীব্র খরা হচ্ছে, আবার কোনো বছর অতিবৃষ্টি বা ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। আবহাওয়ার এ বৈরী আচরণের প্রভাব কৃষির ওপর সরাসরি পড়ছে। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির সংকটও বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায়ও বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ২০৪৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ২৪ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৯ শতাংশ ফসলি জমি কমতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৬ শতাংশ এবং অন্য অঞ্চলে ২ শতাংশ আবাদি জমি কমবে। মাটির লবণাক্ততা উপকূলীয় জমিগুলোর ৬২ শতাংশকে প্রভাবিত করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ আট কিলোমিটার উত্তরে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে