সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকের প্রাপ্যটা সময়মতো পরিশোধ হোক

নতুনধারা
  ১৩ মে ২০২৩, ০০:০০

সারা বছর কষ্ট করলেও তেমন কোনো মূল্যই পান না শ্রমিকরা। শ্রমিকদের নিয়ে ভাবছেন একঝাঁক শিক্ষার্থী তুলে ধরছেন আবু জাফর

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বিশ্রামের সুযোগ দরকার

আল মাসুম হোসেন

শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

অণু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম যারা এই শ্রম দেয় তারাই শ্রমিক। তবে আমরা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে যারা কাজ সমাধা করে তাদেরই বুঝি। শ্রমিকরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, ধরিত্রীর বুক বিদীর্ণ করে ফসল ফলিয়াছে, তাঁতি তাত বোনে, জেলে মাছ ধরে, দালানকোঠা নির্মাণ বহুদূরে প্রসারিত শ্রমিকদের বিচিত্র কর্মভার কিন্তু তারাই পায়নি তাদের যথাযথ সম্মান ও ন্যায্য অধিকার। তারা নিয়মিত শোষণের, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে।

খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষা হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে ও শ্রমিকদের চাহিদার তুলনায় ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় এগুলোর ব্যয় মেটাতে অক্ষম। ১৮৮৬ সালের ১ মে'তে শ্রমিক র?্যালির স্স্নোগান ছিল- আট ঘণ্টার শ্রম, আট ঘণ্টার ঘুম, আট ঘণ্টার বিনোদন। বাংলাদেশের শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই এ নিয়ম বলবৎ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এগুলো মানা হয় না। ফলে তারা ন্যায্য মজুরি, ছুটি, জীবন নিরাপত্তা ইত্যাদি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

শ্রমিক দিবসে শ্রমিকের অধিকার ফিরিয়ে দিই

আইরিন সুলতানা

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শ্রমিক জনতা। এই যে আপনি, আমরা অট্টালিকায় বাস করছি সেটা কে বানিয়েছে শ্রমিক নয় কি! এই যে প্রতিনিয়ত সমাজের অগ্রগতি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এসব কাজ আসলে কাদের দ্বারা সম্পাদিত হচ্ছে- শ্রমিক জনতার মাধ্যমেই তো তাই না! কলকারাখানা থেকে শুরু করে রাস্তা বানানো, বিল্ডিং নির্মাণ, খাদ্যোৎপাদন, পোশাক তৈরিকরণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুতেই রয়েছে শ্রমিকের শ্রম। এ সবই আমাদের শ্রমিকদের কাজ। এই শ্রমিক জনগোষ্ঠী যদি মাত্র একটা দিন তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় কখনো ভেবে দেখেছেন কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে! কিন্তু সবসময়ই আমাদের শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের কথা তুলতে হয়! আবার নারী এবং পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেতন কম দেওয়া হয়? তাই আসুন শ্রমিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে আসলে আমরা আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই ১ মে অর্থাৎ বিশ্ব শ্রমিক দিবস উদযাপন হোক আমাদের শ্রমিক জনতার যথাযথ অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা।

শ্রমিকের সঠিক মূল্যায়ন হোক

বাবুল

শিক্ষার্থী, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

শ্রমিক দিবসে চাই শ্রমিকের মূল্যায়ন। একজন শ্রমিক যখন সারা দিন পরিশ্রম করার পরও পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয় তাহলে শ্রমিকদের আর কোথায় মূল্যায়ন করা হলো। বাজারে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তাদের তো আর শ্রমের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতার পরিমাণ বাড়ালেও এই শ্রমজীবীদের বাড়েনি কোনো বেতন বা পায় না কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা। যার ফলে পরিবারের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই আমি মনে করি সরকারের উচিত এই শ্রমজীবী মানুষের শ্রমিক দিবস উপলক্ষে একটি ভাতার ব্যবস্থা করা যেখানে সব শ্রমজীবীর আওতাভুক্ত থাকবেন। সেই সঙ্গে আমাদের সবার উচিত শ্রমজীবী মানুষকে মূল্যায়ন করা এবং তাদের সম্মান করা।

শ্রমিকের দুর্বিষহ জীবনের ইতি হোক

নাদিয়া আফরোজ

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রমজীবী মানুষ দেশের অর্থনীতির ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রাখে। তাদের শ্রম-ঘাম-রক্তে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার অবস্থা খুবই করুণ। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী ঘটলেও, যারা শ্রম দিয়ে সেবা দিয়ে থাকে তাদের মজুরির ঊর্ধ্বমুখী ঘটে না। নারী-পুরুষ শ্রমিকদের দেশ ও দেশের বাইরে বৈষম্য, হয়রানি, কণ্ঠরোধ, অসম মজুরি, পারিবারিক বিধিনিষেধ, নিরাপত্তাহীনতা, প্রতিবাদকারীদের চাকরিচু্যতের শিকারের ফলে তাদের জীবন ও জীবিকা দুঃসহ হয়ে ওঠে। তাই, শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হলে যৌন ও প্রজনন সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের শ্রমকে সম্মান জানিয়ে সঠিক সময়ে কম পরিশ্রমে অধিক মজুরি প্রদান করা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।

'সভ্যতা নির্মাণের কারিগরদের যথাযথ মূল্যায়নের শপথ নিন'

আবু মো. ফজলে রোহান

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

শ্রমের উপর ভিত্তি করে সভ্যতার সূচনা হলেও শুরু থেকেই শ্রমিকদের কোনো মূল্যায়ন ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি ভাগ্যে জুটত না। নামমাত্র বেতনে হালের পালের মতো খাটতে হতো শ্রমিকদের। অবশেষে ১ মে ঐতিহাসিক আন্দোলন সফল হলেও শ্রমের সঙ্গে মজুরির অসামঞ্জস্যতার রেষ এখনো কাটেনি। মাসের পর মাস বেতন আটক রাখার রেওয়াজ এখনো মিশে যায়নি। শ্রমের মূল্য আদায় করতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের এখনো রাজপথে নামতে দেখা যায়। ঘাম ঝরানোর পয়সা পেতে যেখানে রীতিমতো বুলেটের আঘাত সামলাতে হয়, সেখানে ঈদের বোনাস কিংবা বৈশাখী ভাতা কামনা করা নিতান্তই অবান্তর। গৃহস্থালিতে কাজ করা শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক! নীরবে নিভৃতে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করাই যেন ওদের জীবন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ওরা জীবিকার তাগিদে নিজেকে উৎসর্গ করে। ওদের হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম আর ঘাম ঝরানো কর্মের ফলেই আমাদের সমাজের তথাকথিত বড়লোক সম্প্রদায়ের কপালে এসির বাতাস জোটে। শ্রমজীবী মানুষ আছে বলেই আমাদের পেটে দানাপানি পড়ে। ওরা আছে বলেই দেশে অর্থনীতি আজও টিকে আছে। মাথা উঁচু করে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ব মানচিত্রে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। সুট-টাই পরা স্যারেরা গর্ব করলেও এর পেছনে রয়েছে বেতন না পাওয়া শ্রমিকদের অবদান। তাই শ্রমিক দিবসে শ্রমের যথাযথ মূল্যায়নের শপথ নিতে হবে। শ্রমিকরা ভালো থাকলেই ভালো থাকবে প্রিয় বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে