রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা

কীভাবে শুরু করব বিজেএস প্রস্তুতি

আইন ও বিচার বিভাগ বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী বিভাগ। যেখানে আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। 'বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন' পরীক্ষার মাধ্যমেই সে সুযোগ অর্জন করা যায়। এই পস্ন্যাটফর্মে আইনের শিক্ষার্থীরা নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করে তুলবে সে বিষয়ে বিচারকদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক মো. নিয়ামতুলস্নাহ।
নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে সামনে

এগুতে থাকেন

আরিফ হোসাইন

সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত), ১৬শ' বিজেএস

আসলে সত্য কথা বলতে ইঔঝ হলো আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বপ্নের একটা জায়গা। আর এটি কখনো স্বল্প সময়ের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। এই সফলতা তখনই আসবে, যখন আপনি ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও প্রার্থনা ছাড়া বাকি সময়টুকু এর পিছনে ব্যয় করবেন। এক্ষেত্রে আমি বলব যারা আমার মতো প্রথমবারেই সফলতা পেতে চান তারা অবশ্যই জুডিশিয়ারি সিলেবাস অনুযায়ী রিটেন বেইজ আইনের পাশাপাশি জেনারেল বিষয়গুলোও ভালোভাবে প্রিপারেশন নেবেন। যখনই আপনি পড়াশোনা শুরু করবেন আপনাকে অবশ্যই রিটেন বেইজ দিয়ে শুরু করতে হবে এবং নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে সামনে এগুতে থাকেন, দেখবেন সফলতা আপনাকে পিছন থেকে ডাকছে।

অনেক বেশি পড়ার চেয়ে জরুরি বিষয়গুলো সুন্দর করে পড়াটা উত্তম

মোসা. শাম্মী আক্তার

সুপারিশপ্রাপ্ত সহকারী জজ/ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৫শ' বিজেএস

জুডিশিয়ারির সিলেবাস দেখে রুটিনমাফিক নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করতে হবে। পড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি। যে কোনো জবের প্রিপারেশন নেওয়ার আগে সেই জবের প্রশ্ন ব্যাংক (প্রিলি রিটেন) দেখে নেওয়া জরুরি। এতে প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হবে। নোট করে পড়া ভালো তবে যাদের নোট করে পড়তে অসুবিধা হয় বা বেশি সময় লাগে তাদের জন্য ফর্মুলা হলো হাইলাইটার পেন ইউজ করা, সংশ্লিষ্ট বই, পেজ নম্বর কোনো একটা খাতায় টুকে রাখা। যেন পরের বার পড়তে গেলে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। যে কোনো বিষয়ে ক্লিয়ার কনসেপ্ট রাখা জরুরি। এজন্য একাধিক সহায়ক বই পাশে রাখা যেতে পারে।

আইনের সবগুলো ধারা পড়ার প্রয়োজন হয় না। অনেক বেশি পড়ার চেয়ে জরুরি বিষয়গুলো ধরে ধরে সুন্দর করে পড়াটা উত্তম। চেষ্টা করতে হবে একটা আইন দ্রম্নত শেষ করে বারবার রিভিশন দেওয়ার। নিয়মিত পড়াশোনা করলে এবং আলস্নাহ সহায় থাকলে আজ অথবা কাল সফলতা আসবে ইনশাআলস্নাহ।

আইন পাঠে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে

মো. তোসিকুল আলম

সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত)

১৬শ' বিজেএস

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার সিলেবাস দেখলে আমরা দেখতে পাব যে, লিখিত পরীক্ষার ষাট শতাংশ নম্বর বরাদ্দ থাকে আইন বিষয়গুলোর জন্য এবং বাকি চলিস্নশ শতাংশ বরাদ্দ থাকে সাধারণ বিষয়গুলোর জন্য। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য এমন নম্বর বন্টন উলেস্নখ না থাকলেও গত বিজেএস পরীক্ষাগুলোর কোশ্চেন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রায় ৬০ শতাংশ প্রশ্ন আইন বিষয় থেকেই এসেছে। সুতরাং আইন বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বিজেএস পরীক্ষার ষাট শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়। আইন বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে- ১. বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাস ভালোভাবে পড়তে হবে এবং নম্বর বন্টনগুলো বুঝতে হবে। বিগত সালের প্রিলিমিনারি ও রিটেনের প্রশ্ন দেখতে হবে। এতে কী ধরনের প্রশ্ন আসে এবং কোন কোন টপিকসে গুরুত্ব দিতে হবে তার ধারণা পাওয়া যাবে। ২. মূল আইনগুলোর প্রত্যেকটি ধারা (সমস্ত ধারা অন্তত একবার এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বারবার) বুঝে বুঝে পড়তে হবে। কোন ধারার বিধান স্পষ্ট বুঝতে না পারলে কিংবা লিখিত পরীক্ষায় আসতে পারে এমন বিষয়ের বিস্তারিত জানার জন্য একটি ভালো বইয়ের উক্ত ধারার সংশ্লিষ্ট অংশ পড়তে হবে। সকল মূল আইনের বেয়ার অ্যাক্ট রাখা এবং দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস খুব কার্যকর। ৩. সংবিধানের জন্য মূল অনুচ্ছেদগুলোর পাশাপাশি একটি ভালো বই যেমন আব্দুল হালিমের সংবিধান বইটি পড়তে পারেন। সংবিধান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেসগুলোর সংক্ষিপ্ত ঘটনাসহ সিদ্ধান্ত পড়তে হবে। ৪.গণিতের জন্য সিলেবাস দেখে ক্লাস এইট ও ক্লাস নাইনের বোর্ড বইয়ের সংশ্লিষ্ট অংশ সমাধান করতে হবে। বিজ্ঞানের জন্য ক্লাস নাইনের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের পাশাপাশি বিসিএস প্রিলিমিনারি বিজ্ঞানের একটি বই পড়া যেতে পারে। ৫. বাংলার জন্য ক্লাস নাইনের বাংলা ব্যাকরণের পাশাপাশি বিসিএস প্রিলিমিনারি বাংলার একটি বই পড়া যেতে পারে। ৬. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে এবং সম্পাদকীয় অংশ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার আগের প্রায় তিন মাসের সম্পাদকীয় সমগ্র পড়া যেতে পারে। ৭. যারা অনার্সে পড়ছে তাদের শুধুমাত্র বিজেএস কেন্দ্রিক প্রস্তুতি না নিয়ে বরং প্রতি বর্ষের একাডেমিক সিলেবাসে যে সকল বিষয় বিজেএস সংশ্লিষ্ট সেই আইনগুলোই ভালোভাবে পড়তে হবে। সাথে সাথে যাদের কোনো বিষয়ে দুর্বলতা আছে যেমন ইংরেজি/ গণিতের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে এবং যে কোনো বিষয়ে ফ্রি হ্যান্ডে লেখার অভ্যাস করতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও বাংলা ও ইংরেজির রচনা সাধারণত ফ্রি হ্যান্ডেই লিখতে হয়। এগুলো থেকে সাধারণত গতানুগতিক প্রশ্ন হয় না বরং সমসাময়িক বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয় এবং এনালিটিক্যাল ব্যাখ্যাসহ গুছিয়ে লিখতে হয়?। ৮. প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য যে কোনো একটি বই যেমন আইন পাঠ প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। যাদের শর্টনোট করার অভ্যাস নেই এই বই তারা লিখিত এবং ভাইভাতেও দ্রম্নত রিভাইস দেওয়ার জন্য শর্ট নোট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ৯. বিজেএস খুবই প্রতিযোগিতামূলক একটি পরীক্ষা এখানে পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই একবার বিফল হলে আশাহত না হয়ে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে আরও বেশি চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অনার্স শেষ করে যত দ্রম্নত সম্ভব বার কাউন্সিলের লাইসেন্স অবশ্যই করে ফেলবেন। ১০. প্রাইভেট কোচিং কিংবা খুব বেশি চাকরির বইয়ের প্রয়োজন হয় না মোটামুটি ভালো প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য। মূল আইনের বেয়ার অ্যাক্ট এবং অল্প কিছু বই ভালো প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই কোচিং কিংবা বই কিনতে না পারার কারণে হীনমন্যতায় না ভুগে হাতে যা আছে তাই নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন, ইনশাআলস্নাহ সফল হবেন।

প্রতিনিয়ত অনুশীলনে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপারমাত্র

মো. আসাদুজ্জামান নুর

সহকারী জজ (সুপারিশপ্রাপ্ত)

১৬শ' বিজেএস

বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য একটা স্বপ্নের নাম। সেই স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করা খুব সহজ না কিন্তু পরিকল্পিত অধ্যবসায়, পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সর্বোপরি আলস্নাহর রহমত থাকলে সেই স্বপ্নটার বাস্তবায়ন অনেক বেশি কঠিনও নয়?যারা বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো প্রচন্ড পরিশ্রমী হতে হবে বিজেএসের সিলেবাসটা মোটামুটি বড়, তাই পুরো সিলেবাস নিয়েই একটা সুন্দর পরিকল্পনা থাকতে হবে।?বিজেএস সিলেবাসটা দুটি অংশে বিভক্ত, একটি হলো সাধারণ বিষয়াবলি এবং অন্যটি আইন অংশ আইন অংশের প্রায় বেশিরভাগ পড়াই আমরা একাডেমিক পড়াশোনাতে করে আসি?এজন্য আমি মনে করি অনার্সের শুরু থেকেই যারা এই আইনের অংশগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়তে পারবে তারা পরবর্তীতে এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে এগিয়ে থাকতে পারবে অন্যদিকে সাধারণ বিষয়ের অংশে ভালো করতে হলে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে মোটামুটি ভালো করতে হয়। অনেকেই গণিতে ভয় করেন গণিতে ভীতি থাকার মূল কারণ হতে পারে অনুশীলন না করা এই অংশগুলো প্রতিনিয়ত অনুশীলন করলে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সময়ের ব্যাপারমাত্র। এর পাশাপাশি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অথবা বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অগ্রজদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি নিয়মিত পড়াশোনা এবং নিজের মধ্যে নিহিত সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করতে হবে, আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে- তাহলেই ইনশাআলস্নাহ এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সহজ হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে