শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটদের-বড়দের ঈদ সংখ্যা বাবুই

হিমু আহমেদ
  ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ছোটদের-বড়দের ঈদ সংখ্যা বাবুই

শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার কাদের বাবু সম্পাদিত 'বাবুই ঈদসংখ্যা-২০২৪' প্রকাশিত হয়েছে। ঈদের পর পরই ঈদসংখ্যাটি হাতে পেয়ে চমকে গেলাম! প্রায় বিজ্ঞাপন ছাড়াই ২৫৬ পৃষ্ঠার বিশাল এ ঈদসংখ্যা আমার কাছে বিস্ময়করই মনে হয়েছে! কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, ফারুক নওয়াজ, আখতার হুসেন, আমীরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটনসহ প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য লেখকের পাশাপাশি নবীন লেখকদের সমৃদ্ধ লেখা নিয়ে মানসম্মত ঈদসংখ্যাটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার, গল্প, হরর অ্যাডভেঞ্চার গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, কিশোর কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, ছড়াগল্প, স্মৃতিকথা, রম্য, ফিচার,সায়েন্স ফিকশন, উপকথা এমনকি ৩২ পৃষ্ঠা জুড়ে বিশাল একটি শিশু-কিশোর বিভাগ নিয়ে মোট ২৭৮ জনের লেখায় সমৃদ্ধ এ সংখ্যাটি সত্যি সত্যিই ঈদের ছুটি কাটানো কিংবা অবসর সময়ের একটি অবলম্বন।

অন্য কবিদের মধ্যে সালেহ আহমদ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, দীলতাজ রহমান, বকুল হায়দারসহ অনেক প্রবীণ এবং তরুণ কবি ও ছড়াকারের গুচ্ছ কবিতা, গুচ্ছ ছড়া পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। আমাদের বর্তমান কবিতা ও ছড়ার ধারাও বুঝতে পারছি।

কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের গল্প বরাবরই ভালো লাগে। 'শক্তি' গল্পটি বেশ ব্যতিক্রমধর্মী মনে হয়েছে। আমার দৃষ্টিতে লুৎফর রহমান রিটন একজন 'শব্দের জাদুকর'। তার 'বেড়ালকন্যা মিমি বলছি' নামের ছড়াটিকে আমি নিঃসন্দেহে 'মিনি ছড়াকাব্য' হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। রিটন লিখেন- 'দিবানিশি এই বাড়িতে ওই বাড়িতে যাই/ করুণ চোখের চাহনিতে একটু খাবার চাই!' কিংবা 'হিংসা করে দন্ড পেলাম নির্বাসনের রায়-/হিউস্টনের বিড়াল মিমি অটোয়াতে যায়।' অথবা 'স্বপ্নে আমি মাঝে মধ্যেই মার কোলে দেই হামা.../(তোর আদরের মেয়েটাকে দেখতে আসবি না, মা?!)' রিটনীয় স্টাইলে লেখা ছড়াটি সাবলীলভাবে পড়ে এক নিমিষেই শেষ করে ফেলা যায়।

লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া নিয়ে এত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার মানে এই নয় যে, অন্য ছড়াকারদের ছড়া ভালো হয়নি। আসলে সম্পাদক এমন সব লেখা বাছাই করেছেন, কোনটা রেখে কোনটা বলি, তা নিয়েই বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। একমাত্র হরর অ্যাডভেঞ্চার গল্প 'ভয়ংকর জঙ্গলে বিভীষিকা' পড়ে যেমন তৃপ্তি পাওয়া গেছে, তেমনি প্রিন্স আশরাফের গল্প 'বাড়ি থেকে পালিয়ে', শফিক হাসানের 'সময় অথবা দুঃসময়ের হালখাতা', রেজা করিমের 'মাঝরাতে', সৌমেন রায়ের 'অতিথি'সহ বেশিরভাগ গল্পই ভালো লেগেছে। বিশেষভাবে ভালো লেগেছে বলিষ্ঠ ছড়াকার আব্দুল হামিদ মাহবুবের ছড়াগল্প 'রেখেছি এই বুকে'। আব্দুল হামিদ মাহবুব একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছড়াকার। এই ছড়ায় তার দুর্দান্ত প্রমাণও দিয়েছেন। তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা, কয়েকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত আজিজুর রহমানের জীবনকাহিনী নিয়ে চমৎকার একটি ছড়াগল্প রচনা করেছেন তিনি। এ ছড়াটিকে ছড়ার আঙ্গিকে লেখা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবনকাহিনীও বলা যায়। যাকে নিয়ে গল্প, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ একজন সহচর ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবেশ করলেও করোনা মহামারি তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। 'শেখ মুজিব ও আজিজ ভাই/ দূরাকাশে রোজ/তারা হয়ে ফুটে ওঠে/রাখেন দেশের খোঁজ।/চাঁদের সাথে বসত গড়ে/আছেন চরম সুখে/ আমরাও তো তাদের নাম/রেখেছি এই বুকে।'-ছড়াটি পড়লে পাঠকরা হারিয়ে যাবেন হারানো সেই দিনে!

খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে এবারের ঈদ সংখ্যায়। এ সাক্ষাৎকারে মন খুলে কথা বলেছেন সেলিনা হোসেন। আশরাফ পিন্টুর সায়েন্স ফিকশন, 'ডার্ক লেন্স' এবং সায়েকা আহমদ মাহির সায়েন্স ফিকশন, 'চন্দ্রবিন্দুর মঙ্গল অভিযান' অত্যন্ত ভালো লেগেছে। এছাড়া ঈদসংখ্যায় দুটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রকাশিত হয়েছে। দুটি গল্পই পাঠকদের ভালো লাগবে।

বাজারে যত ঈদসংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে সবাই প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নিজস্ব ঘরানা লেখক তো আছেনই। কিন্তু একমাত্র বাবুই ঈদসংখ্যায় এটা দেখলাম না। এখানে প্রতিষ্ঠিত লেখকের পাশাপাশি তরুণ লেখকের লেখাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাবুই ঈদসংখ্যার প্রধান আকর্ষণ 'শিশু-কিশোর পাতা'। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো ঈদসংখ্যায় ছিল না। বিশাল এ বিভাগটি এবারের ঈদসংখ্যাকে সমৃদ্ধ করেছে। বাবুই ঈদসংখ্যায় শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি বিশ্বজিৎ দাস, ইমরুল ইউসুফ, আবুল হোসেন আজাদসহ অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকের লেখাই প্রকাশ পেয়েছে। তাদের লেখা পাঠককে আনন্দ দেবে নিঃসন্দেহে! ভবিষ্যতেও বাবুই-এর এই ধারাবাহিকতা দেখতে চাই। আমরা চাই বাবুই ঈদসংখ্যা প্রতি বছর আরও বড় আয়োজনে শিশুদের লেখায় সমৃদ্ধ হোক। শুভ কামনা সব লেখকের প্রতি। ২৫৬ পৃষ্ঠার ঈদসংখ্যার মূল্য রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা। সম্পাদক কাদের বাবু, প্রকাশক বাবুই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে