শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় স্বাধীনতা দিবস

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রম্নতিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা দিবস এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। এটি শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, নবীন জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার শপথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার দিন হিসেবেও অনন্যসাধারণ। এর বিস্তৃতিতে বদলে যায় জীবনের গতিপথ, নতুন শপথ নেওয়ার সাহস যোগায়। এ কারণে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিসীম। মহান স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা, প্রত্যাশা ও মতামত জানাচ্ছেন মো. জুবাইল আকন্দ
নতুনধারা
  ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

স্বাধীনতা ও আমাদের করণীয়

মুহম্মদ রাসেল হাসান

শিক্ষার্থী, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

স্বাধীনতা শব্দটি একটি আবেগের নাম। যে আবেগে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লেপ্টে আছে। তবে এই মহানন্দের নেপথ্যের ঘটনা তেমনই অভাবনীয়, বিভীষিকাময়, লোমহর্ষক ও সংগ্রামের ঘটনা। যা জাতির পিতার ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত নয় মাসের সুতীব্র যুদ্ধ। লাখো বোনের ভাই, নববধূর স্বামী আর মায়ের ছেলের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ মহানন্দ। এতে আমার অগণিত বোনের ইজ্জতকে বলপূর্বক দখল করে প্রাণনাশ আর নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ সৃষ্টি করে একে একে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও কম না। আর ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা ভোগ করছি। বর্তমান সরকার অনন্য প্রচেষ্টায় এই দেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' করে তুলেছেন। শুধু সরকার নয়, দেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে রয়েছে সবারই দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার মধ্যে একটি হলো শতভাগ নাগরিক শিক্ষিত হওয়া। তা হলেই স্বাধীনতা প্রকৃত অর্থবহ হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরে মননশীল বা উচ্চতর শিক্ষিত লোকই কেবল- জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে স্বদেশ আরও প্রগতিশীল হবে। বিশেষত আমাদের সবাইকে নিরেট অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে নজরুলের চেতনার মতো চেতনাকে ধারণ, লালন ও বহন করলেই অনন্য উৎকর্ষ সাধন হবে বলে আমার বিশ্বাস। অতঃপর কথিত শ্রেণি বা বিভাজন করা জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হবে।

২৬ মার্চ তারুণ্যের এক জাদুকরী অনুপ্রেরণা

আব্দুর শুক্কুর বিজয়

শিক্ষার্থী, বাকলিয়া সরকারি কলেজ।

২৬ মার্চ হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবনের এক অতি আনন্দের ও গৌরবের দিবস। দীর্ঘ সময় ধরে একটি জাতি নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে সব বাঙালি মুক্তির রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ আজ নিজ দেশের মাটিতে সুখের সাথে জীবনযাপন করতে পারে। ২৬ মার্চ বাঙালিদের এক অদম্য মনোবলে উৎসাহিত করেছিল মুক্তির সংগ্রামে। আজ সবার স্বপ্নের মাতৃভূমি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ভিত্তি অনেক পুরনো। তবে এই দিনটি ছিল নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শুরু, যার সমাপ্তিতে আমাদের বিজয় আসে। ২৬ মার্চের সেই অনুপ্রেরণা বাঙালিদের হৃদয়ে এখনো বিরাজমান। ২৬ মার্চ তারুণ্যের এক জাদুকরী অনুপ্রেরণা।

স্বাধীন সোনার বাংলায় পরাধীনতা না থাকুক

ছাবিহা জামান

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে যখন চলি পলিমাটি, বাহারি লতাপাতা আর সবুজ ঘাসের স্নিগ্ধ গন্ধ আমার মন উতলা করে দেয়। জানান দেয় এই মাটির সাথে আমার পূর্বপুরুষের রক্তের ঘ্রাণ মিশে আছে। জানান দেয় বাংলার অনিন্দ্য প্রকৃতির সাথে আমার আত্মার দৃঢ়তা। আমি বাঙালি আমি বাংলাকে ভালোবাসি। আমার পূর্বপুরুষের দিয়ে যাওয়া অনন্য আশীর্বাদকে ভালোবাসি। তাদের আত্মত্যাগে 'স্বাধীনতা' নামক শব্দটা আমরা আমার করে পেয়েছি। একটা স্বাধীন ভূখন্ড, একটা লিখিত সংবিধান, মায়ের ভাষা বাংলা, লাল সবুজের পতাকা, একটা অমৃতবাণী জাতীয় সঙ্গীত, বেঁচে থাকার সব স্বাধীনতা তাদের বিসর্জনে পেয়েছি আমরা। শিখিয়ে গেছেন কীভাবে মা ও মাটিকে ভালোবাসতে হয়। বিনম্র শ্রদ্ধা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতি, লাখ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, নারী রূপের বীরাঙ্গনার প্রতি। তাদের কারণে গৌরবের সাথে বলতে পারি আমরা বাঙালি, আমরা স্বাধীন জাতি। স্বপ্নের বাংলাদেশ এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের। ভাঙাচোরা একটা রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু অর্জন দৃষ্টিপাত করলে দেখি স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, মাতারবাড়ী কয়লা বিদু্যৎকেন্দ্র, কক্সবাজার রেললাইন, কক্সবাজার রেল স্টেশন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র ইত্যাদি। বাংলাদেশ আস্তে আস্তে উন্নতির শেখরে পৌঁছাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে এসেও আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরাধীন। যেমন আমরা এখনো শ্রেণি বিভক্তিতে বিশ্বাসী, কর্মক্ষেত্রের বৈষম্যতা, অর্থনৈতিক বাজারে সিন্ডিকেট ইত্যাদি। বিশেষ করে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা খুবই বেগতিক। আমার প্রত্যাশা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ যেন এসব পরাধীনতা থেকে দ্রম্নত মুক্তি পায়। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

শহীদের আত্মত্যাগ সার্থক হোক

নাদিয়া সুলতানা

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।

কাহলিন জিবরান বলেছেন, 'স্বাধীনতা ছাড়া একটা জীবন মানে আত্মা ছাড়া শরীর।' এই স্বাধীনতা নামক আত্মাকে ফিরে পেতে মূল্য দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ বাঙালির রক্ত দিয়ে। রক্তস্নাত হয়ে এই সবুজ শ্যামল বাংলা পেয়েছিল স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা তখনই সার্থকতা পাবে, যখন বাংলার মানুষ পেটভরে খেতে পারবে, পড়তে পারবে, মন খুলে হাসতে পারবে, মুক্ত কণ্ঠে কথা বলতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, 'এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।' তাই এই স্বাধীনতা যেন শুধু ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোতেই যেন আবদ্ধ না থাকে। এই স্বাধীনতা আমাদের বাঙালির কাছে অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতাকে ধারণ করতে হবে, অনুভব করতে হবে, এর সুফলতা ছাড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। তখনি আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।

'সাহসী চেতনার ২৬ মার্চ'

তানজিলা রুমা

শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ।

আঁধারের মাঝে এলো নতুন এক আলোর দিশা, স্বাধীন বাংলা ঘোষিত হলো ঘুমের ঘরে প্রাণ দিলাম মোরা। ঠিক এভাবেই অন্ধকারাচ্ছন্ন বিদঘুটে রাতে পিশাচদের কালো হানায় প্রাণ দিতে হয়েছে আমার দেশের শত শত নিরীহ মানুষকে। পরের দিনের ভোর সকালে উঠবার প্রত্যাশা নিয়ে ছোট্ট শিশুসহ, শত শত মানবতার ফেরিওলারা ঘুমাতে গেলেও ২৫ মার্চের মধ্যে রাতে সে স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে তাদের। ২৬ মার্চ সকালে রক্তমাখা নিথর দেহ পড়ে ছিল নিজ গৃহে, ছাত্র, শিক্ষক, নেতাসহ আরও কত নিষ্পাপ প্রাণের। কিন্তু এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে উপহার পেয়েছি গোটা একটা স্বাধীন বাংলা। পিশাচদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশ মাতাকে প্রকাশ্যে এনেছিল বুক ভড়া রক্ত দানের মাধ্যমে। ২৫ মার্চের মধ্য রাতে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক থাবায় দমে যায়নি বাংলার সন্তানরা।

২৬ মার্চ তাই শোকের। ২৬ মার্চ তাই শোকের বিনিময়ে পাওয়া গৌরবের। ২৬ মার্চ নিজ দেশ মাতাকে স্বাধীন হিসেবে দেখার মতো আনন্দের। এই দিন মনে করায় বীর বাঙালিদের ঐক্যের কথা। জানান দেয় অদমনীয় সাহসী যোদ্ধাদের আমরণ লড়াই কথা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে