শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

টুইঙ্কেল

শ্যামল বণিক অঞ্জন
  ১২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সৌরভের মনটা আজ ভালো নেই, সারাদিন কিছু খায়নি, স্কুলেও যায়নি। কারণ আজ সৌরভের শখের টিয়ে পাখিটি খাঁচা থেকে বের হয়ে উড়ে চলে গেছে! সকাল থেকেই শুধু কাঁদছে সৌরভ। কারো কোনো সান্ত্বনাই কাজ হচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠার পরে টিয়ে পাখিটাকে স্নান করিয়ে রেখে সৌরভ প্রাইভেটে গিয়েছিল কিন্তু বাড়ি ফিরে সে দেখে খাঁচাটা শূন্য পড়ে আছে; বহু দিনের পালিত তার শখের টিয়ে পাখিটিই উধাও! হয়তো খাঁচার দরোজাটা ঠিক মতো লাগাতে ভুল হয়েছিল- যার ফলস্বরূপ এমন হৃদয় ভাঙা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।

সৌরভের টিয়ে পাখিটা যেমন সুন্দর ছিল তেমনি সুন্দর করে অনেক কথা বলতো! গেটে কেউ নক করলেই বলে উঠতো

\হগেটে কে!

\হগেট খুলে দাও; গেট খুলে দাও।

সকাল হতেই সৌরভকে ডাকতো

দাদা উঠ, দাদা উঠ, পড়তে যাও; পড়তে যাও।

সারাদিন চেঁচামেচিত বাড়িটা মাতিয়ে রাখত। সৌরভ আদর করে ওর নাম রেখেছিল টুইঙ্কেল।

সৌরভ খুব খুব ভালোবাসতো টুইঙ্কেলকে, টুইঙ্কেলও যেন সৌরভের মনের সব কথাই বুঝতো!

প্রতিদিন টুইঙ্কেলকে নানা রকম খাবার দিত সৌরভ, বিভিন্ন রকমের ফলমূল, দুধভাত, কাঁচা লঙ্কা, কামরাঙা আরও অনেক কিছু! সৌরভের বাবা-মাসহ বাড়ির সবাই টুইঙ্কেলকে ভীষণ ভালোবাসত। তাই আজ বাড়ির সবার মনেই যেন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। আর পাগলের মতো সৌরভ খুঁজে বেড়াচ্ছে ওর প্রিয় টিয়ে পাখিটিকে। সঙ্গে ওর কয়েকজন বন্ধু কাকাতো জেঠাতো ভাই বোনেরাও যোগ দিয়েছে। ছোট ছোট গ্রম্নপে ওরা টুইঙ্কেলকে খুঁজে চলেছে সেই সকাল থেকে। এদিকে সৌরভের মা ছেলেকে একটু কিছু মুখে দেওয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গা মাথা হাতিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে একটু কিছু খেয়ে নাও বাবা, এরকম পাগলামি করলে কি চলবে?

নাও খেয়ে নাও লক্ষ্ণী সোনা বাবা।

\হসৌরভ বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে সব খাওয়া। থও-থও আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মা, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে; টুইঙ্কেলের জন্য। বলতে বলতে আবারও ভোঁ দৌড় টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল উচ্চ স্বরে ডাকতে ডাকতে! মা ও যেন ক্রমশই ভেঙে পড়ছেন ছেলের এমন অস্বাভাবিক আচরণে। মাঝখান থেকে সৌরভের ঠাকুমা সৌরভের মা'কে একটা পরামর্শ দিলেন- বৌমা তুমি একটা কাজ কর, টুইঙ্কেলের খাঁচাটি তুমি কিছুটা নীরব জায়গায় উঁচু স্থানে রেখে দাও সন্ধ্যার আগে আগে আমার মনে হয় টিয়েটা ফিরেও আসতে পারে! কারণ, এতটা বছর ধরে এ বাড়িতে আছে আমার বিশ্বাস এ বাড়ির মায়া ও কখনোই ভুলতে পারবে না! শাশুড়ির কথা মতো সৌরভের মা রান্না ঘরের চালের উপর শূন্য খাঁচাটি রেখে দিলেন। আর ওরা তো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান! এমন সময় হঠাৎ কে যেন গেটে নক করল আর অমনি কোথা থেকে যেন ভেসে এলো সেই চির চেনা কণ্ঠস্বরটা গেটে কে? গেটে কে?

বাড়ির সবাই চমকে উঠলো পরিচিত সেই কণ্ঠটা শুনে, সৌরভের মা তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো ..... আরে এটা তো আমাদের টুইঙ্কেলের গলার আওয়াজ!

মা চিৎকার করে- সৌরভ, এই সৌরভ তাড়াতাড়ি এসো বাবা, তোমার টুইঙ্কেলকে পাওয়া গেছে! মায়ের এরকম কথা শুনে সৌরভসহ সবাই দৌড়ে এসে দেখলো পাশের বাসার বিল্ডিংয়ের কার্নিশে বসে আছে ওর আদরের টিয়ে পাখি টুইঙ্কেল। সৌরভ অনুভব করল হয়তো টুইঙ্কেলের ভীষণ খিদে পেয়েছে সারাদিন কিছু খায়নি! তাই সৌরভ বুদ্ধি করে টুইঙ্কেলের সব চেয়ে বেশি প্রিয় খাবার দুধ কলা মিশিয়ে ভাত মেখে ওর খাঁচাতে রাখলো, টুইঙ্কেলও আর এক মুহূর্ত দেরি করল না, সঙ্গে সঙ্গে একটা উড়াল দিয়ে এসে ঢুকে পড়লো ওর চেনা ঘরে- মানে খাঁচার মধ্যে। সৌরভ আস্তে করে গিয়ে খাঁচার মুখটা আটকে দিয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো- হিপ হিপ হুররে! পেয়ে গেছি! পেয়ে গেছি টুইঙ্কেলকে!! ওর সঙ্গে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো সৌরভের ভাইবোন বন্ধুরাও! মুহূর্তেই সবার মাঝেই খুশির জোয়ার নেমে এলো! যেন স্বস্তি ফিরে এলো সবার মাঝে!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে