মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

তুবার নীল সোয়েটার

শাহীন সুলতানা
  ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তুবার নীল সোয়েটার

তুবার বন্ধু মিথিলা। গত এক সপ্তাহ ধরে মিথিলা স্কুলে আসেনি। সেজন্য তুবার মন ভালো নেই। অন্যান্য বন্ধুরা ক্লাসে এলেও মিথিলার জন্য মনটা খারাপ হয়ে আছে তুবার।

গতকাল সানজিদা ম্যাম বলেছিলেন- মিথিলার শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনের আঁচ লেগে ঝলসে যাওয়ায় মিথিলা অসুস্থ। যার জন্য সে স্কুলে আসেনি।

ক'দিন ধরে তীব্র শীত। পাতলা কাঁথা আর দু'একটা ছেঁড়া কম্বলে ঘুম আসে না মিথিলার। তাই শীত নিবারণের জন্য সকালবেলা বাড়িতে সেদিন আগুন জ্বালানো হয়েছিল। চারিদিকে সবাই গোল হয়ে বসে আগুন পোহাচ্ছিল। চাচাতো বোন শিরিন, মেরিনা আর সোহেলীর সঙ্গে যোগ দেয় মিথিলা।

হঠাৎ মাহিন দৌড়ে আগুনের কাছে আসতেই মিথিলা আটকাতে যায় মাহিনকে। ছোটো ভাইটাকে রক্ষা করতে গিয়ে সে নিজেই পা পিছলে আগুনের মধ্যে পড়ে যায়। আগুনে তার ডান হাত, মুখ ও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়।

মিথিলার বাবা নেই। হেডস্যার লতিফুর রহমানের বাড়ির পাশেই মিথিলাদের বাড়ি। ঘটনার দিন সকালে মিথিলার মায়ের উচ্চস্বরে কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেয়ে হেডস্যার লতিফুর রহমান ও স্কুলের দারোয়ান কাকু 'আসাদ আলী' মিলে দ্রম্নত মিথিলাকে হসপিটালে নিয়ে যান।

সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মিথিলাকে বাড়ি আনা হয়। তারপর থেকে মিথিলা আর স্কুলে আসেনি। সানজিদা ম্যাম বলেছিলেন, 'আগামী পরশু মঙ্গলবার তোমাদের সবাইকে নিয়ে মিথিলাকে দেখতে যাব।'

ম্যামের কথায় তুবা শান্তি পেয়েছিল মনে। স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের সঙ্গে মিথিলার আগুনে পুড়ে যাওয়ার যে ঘটনা সেটা গল্প করেছে তুবা। আগুনে পোড়ার ঘটনা শুনে মা চমকে উঠেছিলেন। যখন শুনলেন মিথিলার বাবা নেই আর ওরা খুব গরিব মানুষ তখন মায়ের চোখেও জল চিকচিক করে উঠল।

তুবা বলল- মামণি, আমার বন্ধু মিথিলা অনেক গরিব। ওর বাবা নেই। ওরা দু'ভাইবোন। ওর ছোটো ভাইয়ের নাম মাহিন। ওদের বেশি শীতের কাপড় নেই বলেই ওরা রোজ সকালে পাতায় আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। বেশি শীত পড়লে রাতেও আগুন জ্বালিয়ে রাখে।

ওদের বাবা থাকলে এতটা কষ্ট হতো না- তাই না মামণি? মামণি মাথা নাড়ে আর তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

তুবা বলে- মামণি, এবছর আব্বু আমার জন্য যে গোলাপি আর নীল সোয়েটার কিনে এনেছে তার মধ্যে থেকে নীল সোয়েটারটি আমার বন্ধু মিথিলাকে দিতে চাই। নীল রং মিথিলার অনেক পছন্দ। তুমি কি চাও মামণি?

মা বললেন, 'শুধু তোমার বন্ধুকে কেন সোয়েটার দেবে তুবা সোনা? মিথিলার ছোট্ট ভাই মাহিনের জন্যও আমি সোয়েটার কিনে দেব কাল। মিথিলার চিকিৎসার কিছু টাকাও তুমি তোমার ক্লাস টিচার সানজিদা ম্যামের কাছে জমা দিতে পার।

আমরা প্রত্যেকেই যদি আমাদের আশপাশের এমন অসহায় ও দরিদ্র মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে আর কেউই দুর্ঘটনার শিকার হবে না। তোমার বন্ধুর মতো অসংখ্য অসহায় শিশুর কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়ে যাবে।' মায়ের এমন কথায় তুবা খুশিতে মা'কে জড়িয়ে ধরল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে