বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
গল্প

টেংরা, পুঁটি ও সাফাত

মুহিব্বুলস্নাহ ফুয়াদ
  ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
টেংরা, পুঁটি ও সাফাত

সোয়াই নদীতে প্রতিদিন বঁড়শি পেতে মাছ ধরতে যায় সাফাত। ঝোপঝাড়ের ভেতর একটু খালি জায়গায় সামান্য তুষ ছিটিয়ে লোভ

দেখায় টেংরা পুটিদের। লোভ সামলাতে না পেরে পুটিগুলো প্রথমে দৌড়ে আসে। যখন খাবার ভেবে বঁড়শিগাঁথা ছোট্ট আধার মুখের ভেতর গপ করে ঢুকিয়ে দেয়, তখনই বিপদে পড়ে পুটি। আটকে যায় বঁড়শিতে।

বুঝতে পেরে যখন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ঠিক তখনই সাফাত তার বঁড়শি উঠিয়ে নেয়। এই সময় অনেক পুটি সাফাতের শিকার হয়ে

বসে। কিছু কিছু পুটিমাছ দৌড়ে পালাবার সময় হারিয়ে ফেলে নিজের ঠোঁট। ছিড়েখুঁড়ে খানখান হয়ে যায় ঠোঁটের মাংসপিন্ড।

কোনোরকম বেঁচে ফিরে। আবার কোনো কোনো পুটিমাছ খুব চালাকির সঙ্গে আধার নিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়।

পুটিদের দলবাঁধা দেখে টেংরাদের জিবে জল চলে আসে। তারাও চলে আসে আধারের লোভে। লোভ আসবেই না কেন? বিস্কুট দিয়ে কত-না সুন্দর করে আধার বানায় সাফাত। একবার খেলে তার স্বাদ জিবে লেগে থাকে এক মাস পর্যন্ত। আর সেই লোভ থেকেই দৌড়ে যায় বঁড়শির দিকে। তারপর পুটিদের মতো তারাও আটকা পড়ে সাফাতের পাতা ফাঁদে। আর বাসায় নিয়ে সাফাত ভাজি করে খুব মজা করে খায়।

এহেন পরিস্থিতিতে পুটি ও টেংরাদের ক্রোধের শেষ নেই। তারা ঠিক করে অভিযোগ করবে। কিন্তু কার কাছে অভিযোগ করবে? কে আছে? যে তাদের সঠিক বিচার করবে। কে পারবে তাদের অধিকার আদায় করতে? হয়তো বা কেউ-ই নেই। বা অনেকেই আছে তাদের জীবন বাঁচানোর দাবি নিয়ে লড়বে। গভীর চিন্তায় মগ্ন পুটি ও টেংরার দল। অবশেষে পেয়ে গেল তারা সোয়াই নদীর মুরুব্বি কাঁকড়াকে। হ্যাঁ, কাঁকড়াই পারবে তাদের ন্যায়বিচার করতে। তারা অভিযোগ দায়ের করে কাঁকড়ার কাছে।

কাঁকড়া আলোচনা করে ঠিক করল বেটা সাফাতকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেবে।

প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও সাফাত সোয়াই নদীতে এলো। তুষ ছিটিয়ে

দিল। বঁড়শি ফেলল। আজ আর পুটি বা টেংরা বঁড়শিতে গাঁথা আধারে মুখ দেয়নি। মুখ দিয়েছে কাঁকড়া। সে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল। ধীরে ধীরে বঁড়শির সুতো কচুরিপানায় কতগুলো প্যাচ লাগাল। এরপর যখন সাফাত ছিপ ধরে হালকা টান দেয়, দেখে বঁড়শি উঠাতে পারছে না। আটকা আটকা লাগছে। এহহে! আইজকা পাইছি।

মনে অয় বড় মাছটা ধরা পড়ছে। মনে মনে খুব খুশি সাফাত। ইশ!

আইজকা যদি হাসিম্মেয়াডা লগে থাকত! তাইলে কী মজাডাই না

অইত! হাসিম সাফাতের বন্ধু। সে-ও প্রতিদিন সাফাতের সঙ্গে মাছ

ধরতে আসে। আজ আসেনি। তার গায়ে ভীষণ জ্বর। মাথাব্যথাও আছে।

গতকাল দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটেছে দু'জন। সে কারণেই জ্বর এসেছে।

যদিও সাফাতের বলার পর আসতে চেয়েছিল, কিন্তু মাঝখানে তার আম্মার চেচামেচিতে সব ইচ্ছার দাফন হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে আবার যখন একটু জুড়ে ছিপ ধরে টান দেয়, তখনই কাঁকড়া সুতো কেটে দিল। যার ফলে সাফাত উপুড় হয়ে পড়ে যায়। কোনোমতে হামাগুড়ি দিয়ে ওঠে দাঁড়ায়। এক বুক কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফেরে। এদিকে টেংরা, পুটি ও কাঁকড়ার দল হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। তারা আজ খুব খুশি। বেটা সাফাতকে আজ জন্মের শিক্ষা দিতে পেরেছে। লাজ থাকলে আর কাউকে লোভ দেখিয়ে কষ্ট দেবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে