সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে জীবন আজীবনের

শিব্বির আহমদ
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

একটা রাত পাঁচশ' বছর ভোর হয়নি। উদিত হয়নি পাঁচশ বছর কোনো ভব রাঙানো সোনালি রবি। রাশি রাশি বিকিরণে হাসি হাসি চেয়ে উঠেনি পাঁচশ' বছর। গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল গোটা ভুবন। জ্যোস্না ছিল না। জোনাক ছিল না। তারার ঝিকিমিকি মেলাও ছিল না। কোথাও ছিল না যেমন আলোর নিভু নিভু শেষ পিদিমটাও, তেমনই এই আঁধারাক্রান্ত রাত কোনো নির্জনতাও পায়নি। পায়নি নিবিড়তা, নিস্তব্ধতা এবং নীরবতার লেশমাত্রও। এই রাত তাঁবুর বাঁধা ডোরে যাপিত যাদের জীবন, তারা আঁধারেই অভ্যস্ত ছিল। তারা কখনো নিদ্রাবৃত হয়ে যায়নি এই রাতে। বিভুর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েনি কখনো। এই অভিশপ্ত রাতেও তাদের হৃদয় ছিল নিতান্ত সুখী এবং প্রফুলস্নতায় ভরপুর। তাদের ভ্রম, তারা স্বর্গে আছে। তাদের কোনো শেষ নেই।

কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকারচু্যতরা যারা ছিল, তারা নিতান্তই কিচ্ছা তৈরি করত সমাপ্তি রচনার ইচ্ছায়। অবিরত হাতরে বেড়াত সমাধান সন্ধানে। সততাই ছিল তাদের সব সময়ের আরাধনা। যে সমাজে নেই জীবনের মূল্য, নারীদের সম্মান, কন্যা সন্তানের বাঁচার উপায়, সেখানে আর কী জপমালা থাকতে পারে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা ছাড়া? তাদের প্রত্যাশা এমন হতো না যদি বিলুপ্ত না হতো তাদের অধিকার, সম্মান, স্বাধীনতা।

একটা আলোকে তারা কখনোই খুঁজে ফিরেনি। যে আলো সত্যের, সম্মানের, স্বাধীনতার। তারা কেবল হন্যে হয়ে খুঁজেছে তাদের অধিকার, মর্যাদা ও সুখ। তাদের একজনের সুখে অন্যজনের জান যেত। মানুষের প্রাণ ছিল তাদের খেলার উপকরণ। তাদের খেলা ছিল দ্রম্নতগামী ঘোরার সঙ্গে নারী-শিশুকে বেঁধে ছেড়ে দেওয়া। তাদের অনিয়ম ছিল তিলকে তাল বানিয়ে লড়াই, প্রাণকে নিষ্প্রাণ বানিয়ে বড়াই, আর একটুতেই ধর-মার-হত্যা কর। এভাবেই বয়ে যেত তাদের নষ্টামীর স্রোত। তারা আঁধারেই হাসতো ভীষণ। সুখে ভাসতো অগণন অকারণেও।

আবার কেউ মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তো অবিরাম। প্রতিনিয়তই নিষ্পেষিত ছিল যারা। পশুও যাদের চেয়ে সুখে দিনাতিপাত করত। কেউ কামনাও করত মৃতু্যকে। যাদের মাংস-মজ্জায় শয্যা গ্রহণ করেছিল বিতৃষ্ণা ও অতিষ্ঠতা।

হঠাৎ সবার হৃদয়ে জ্বালাতে শুরু করল আশার আলো। অধিকারচু্যত, অনাথ, ও দঃখীরা হঠাৎ বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। পাঁচশ বছরের সেই সুদীর্ঘ রজনী, যে রজনী কোনো শনি, রবি বা বৃহস্পতির না, বরং জাহেলিয়াতের নষ্ট আঁধারের সৃষ্টি, তা অবশেষে ভোর হতে শুরু করল।

সঙ্গে সূচনা হলো একটা কাঁচস্বচ্ছ জীবনের। আবির্ভাব ঘটল এক মহা মানবের। যার প্রভাবে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে যেতে লাগল এক দৈব আলোকরশ্মী। প্রতিটা কুটিরের বাতায়নে আমূল প্রবিষ্ট হতে লাগল সেই আলো। পারস্যের শিরাজ শহর সংলগ্নে, এক হাজার বছর যাবত প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ডে, গিয়ে পড়ল এক অপ্রত্যাশিত ফু্‌ৎকার। হাজার বছরের শক্তিশালী অগ্নি নিভে গেল নিমিষেই। ভূমিকম্প শুরু হলো পারস্যের সুবিশাল রাজপ্রাসাদের বারান্দায়। ধসে পড়ল একে একে চৌদ্দটি দৃঢ় স্তম্ব। ধারাবাহিকতা সৃষ্টি হলো সর্বত্রই এক আমূল পরিবর্তনের। সত্যের চেরাগ জ্বলতে শুরু করল প্রতিটি কুটিরে।

মরুভূমির প্রতিটা ধূলিকণাও চিকচিক করে হাসতে শুরু করল, যে জীবনের সূচনায় পৃথিবী থেকে সে জীবন চিরবিদায় নিয়েছে অবশ্যই আদর্শের অভাবতাকে। নিমিষেই পরিণত হলো প্রতি হৃদয়ের প্রেমাস্পদে। সবার মুখ তৃপ্তি পায় প্রথম নামের উচ্চারণে। মোহাম্মদ। সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম।

এক অনুপম আদর্শ হয়ে আবিষ্কৃত হলো তার জীবন। যে জীবন ও আদর্শ সকলের আবশ্যকীয়। কিয়ামতের আগ মুহূর্তে জন্ম নেওয়া নবজাতকের জন্যও প্রয়োজন যে জীবনের, যে আদর্শের। সে জীবনই হয়ে উঠুক তোমার-আমার আদর্শ। যে জীবন আজীবনের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে