সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

খেজুরের রস খেয়ে রসিকতা

আবু সোহান
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

প্রতিদিনের ন্যায় সন্ধ্যায় পত্রিকা পড়ছি। পত্রিকা পড়ার সময় বির্তকে জড়ানো আমার পুরাতন অভ্যাস। এটা এমন হয় না কেন, ওইভাবে করলে কি হতো, চাইলেই সব সম্ভব, কেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হচ্ছে না, এমন ছোট ছোট নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রায়শই বন্ধু এবং বড় ভাইদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি। প্রতিবারই আমার উৎসুক মন তাদের যুক্তিতে চমকপ্রদ হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, আতিকের সঙ্গে খুব বড়সড় অবস্থান থেকে আলোচনা করে যাচ্ছি। পত্রিকা রুম আমাদের কথায় গমগম করছে। হঠাৎ আবুজার ভাই আসলেন, এসে বললেন, এসব তর্ক-বির্তক ছাড়, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি আগামীকাল খেজুরের রস খেতে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। যাবে? একটু ভেবেই- আমি যাব বলে দিলাম। হিমশীতল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে শীতের প্রকোপে কাঁপতে কাঁপতে সবাই জিয়া মোড়ে ভোর ৬টায় উপস্থিত হলাম। চারিদিক কুয়াশার চাদরে আবৃত। সবার উপস্থিত নিশ্চিত হওয়ার পর, ক্যাম্পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে 'ত্রিবেণী' নামক গ্রামে রস খাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গ্রামীণ জনপদের ভেতরে পিচের রাস্তা থাকলেও কমবেশি খানাখন্দ বিদ্যমান। কুয়াশার তীব্রতায় যতখানি ভালো পথ ছিল সেটাও দ্রম্নতগতিতে ছুটে যাওয়া যায় না। পথিমধ্যে নাসরিন আপু ও রিমি মজা নিয়ে বলল, আমরা কিন্তু তোমাকে বিয়ে দিতে যাচ্ছি। এটা শুনে ইজি বাইকের সবাই একযোগে হেসে উঠল। আবুজার ভাই হাসতে হাসতে বলে উঠলেন তাহলে তো আমাদের রসের দাম দিতে হবে না। রিমি সুযোগ বুঝে ভাইয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলে উঠল, আচ্ছা ভাই, আবু সোহানের পাঞ্জাবি টোপর কই? এই সাজে কি তারা মেয়ে দেবে? আমিও মজা করে উত্তর দিলাম পাঞ্জাবি টোপর না থাকার জন্য নয় বরং ইজি বাইকের যাওয়ার কারণে বিয়ে হবে না। ৬.৪৫ মিনিটে খেজুর গাছের মালিক রাহাত সাহেবের বাড়িতে পৌঁছালাম। জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি সাইফুল ভাই আগে থেকে বলে রেখেছিলেন। সেজন্য রাহাত সাহেব ও তার সহধর্মিণী সালমা বেগম আমাদের জন্য আতিথেয়তার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের পাতা দিয়ে বুনা পাটিতে বসতে দিলেন। তাদের বাড়িটি মাটির তৈরি, টিনের ছাউনি দেওয়া। মাটি দিয়ে তৈরি হলেও কোথাও ময়লার আবরণ চোখে পড়েনি। প্রতি গস্নাস রস ১০ টাকা। তিনি আনন্দের সঙ্গে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন রস খেতে আসেন। ইজারাসহ ১০০টা খেজুর গাছের মালিক তিনি, প্রতিদিন ৩০টা করে গাছ কাটেন জিরিন রসের জন্য। রাহাত সাহেব আরও বললেন, শীতের মৌসুমে গুড় বিক্রি করে অধিক লাভবান হন। কথার প্রেক্ষাপটে জানতে পারলাম তিনি একবার গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তিন মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। সালমা বেগম বললেন, এতকিছুর পরও আপনাদের মামা কখনো গাছ কাটতে কার্পণ্য করেন না, তিনি অনেক পরিশ্রমী। উলেস্নখ্য, রাহাত সাহেব ও সালমা বেগম তিন মেয়ের জনক-জননী। সবকিছু শেষে যখন আমরা চলে আসব ভাবছি, তখন রাহাত মামা বললেন, ছবি তুললেন না তো! মামার কথায় সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করে দিল ছবি তোলার জন্য। তুষার ভাই একটু হেসে তাসিমের উদ্দেশ্য বললেন, তাসিম তোমার হাফ কামড় মারা আপেল ফোন দিয়ে ফটো তোলা শুরু কর। আমরা সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। একপশলা হাসি শেষে কিছু ফটো তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে