শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক বন্ধনে সম্প্রীতির বৈশাখ এলো

খোন্দকার শাহিদুল হক
  ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বৈশ্বিক বন্ধনে সম্প্রীতির বৈশাখ এলো

বাংলা বছরের প্রথম মাসটির নাম বৈশাখ। সেই সূত্রে পহেলা বৈশাখ আমাদের নববর্ষ বিধায় এ দিনটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের বৈচিত্র্যময় ষড়ঋতুর এই দেশে নববর্ষ আসে খরতাপে উত্তপ্ত চৈত্রের শেষে ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ ঝড় ও খরা কিংবা ভারী বর্ষণের বার্তা নিয়ে। তাই বলে সে আমাদের বঞ্চিত করে না কিংবা দুঃখিতও করে না। দু'হাত ভরে ঢেলে দেয় সংস্কৃতির মন্ত্র, বাঙালি চেতনার মন্ত্র, ঐক্যের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলার মন্ত্র। এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয় দিনটি। এই উৎসবটি শোভাযাত্রা, লোকজ মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা, নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় এবং পরস্পরের প্রতি শুভ নববর্ষ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা দিনটিকে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে থাকেন।

বাংলা দিনপঞ্জীর সাথে হিজরি এবং খ্রিষ্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরি সন চাঁদের হিসেবে এবং খ্রিষ্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিটে নির্ধারিত হয়। হিজরি সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় আকাশে নুতন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর। পহেলা বৈশাখ ঐতিহ্যগতভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২টা ১ মিনিটে দিন গণনা শুরু করার নিয়ম চালু করে। একই সাথে ১৪ এপ্রিল নববর্ষ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ফলে এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বাংলা নববর্ষ বলতে ১৪ই এপ্রিল বুঝে থাকে।

পক্ষান্তরে দেখা যায় প্রাচ্যের ইতিহাস ঐতিহ্য ক্রমান্বয়ে পাশ্চাত্যের ঐতিহ্যের গহ্বরে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নববর্ষ শুধু পান্তাভাতে ইলিশ খাওয়া কিংবা শোভাযাত্রা, হালখাতা, লোকজমেলা আর নববর্ষের সবকিছু নয়? বরং আরও গভীরে এর চেতনা এবং ঐতিহ্য লুকায়িত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ঋতুকালীন উৎসব হিসেবে পালিত হতো। সম্রাট আকবরের সময় থেকেই পহেলা বৈশাখ আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাসুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। পরবর্তীতে উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়- যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।

বাংলা দিনপঞ্জি অনুসারে পহেলা বৈশাখ যেমন নববর্ষ পালিত হয়ে থাকে ঠিক তার বিপরীতে বর্ষশেষে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব পালনে বাঙালি অভ্যস্ত ছিল দীর্ঘকাল। এক সময় এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উৎসব হতো চৈত্র সংক্রান্তিতে। বাংলার গ্রামে গ্রামে এই উৎসব বয়ে নিয়ে আসে নতুন বছরের আগমনী বার্তা।

পরিশেষে আমাদের কাম্য হোক, বিদায়ী বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন ঘিরে নানা ধরণের আয়োজনে মুগ্ধ হোক বাঙালি চেতনা, সমৃদ্ধ হোক ঐতিহ্যের ভান্ডার, বেগবান হোক মানুষের ঐক্য. প্রস্ফুটিত হোক মানবতা, উচ্চারিত হোক সুন্দরের জয়গান এবং দৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন, দূর হোক সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। সর্বোপরি ছড়িয়ে পড়ুক এর বৈশ্বিক বৈশিষ্ট্য বিশ্বময়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে