রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্রূণের হৃৎস্পন্দন বন্ধ করবে কোন আদালত, প্রশ্ন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের

আইন ও বিচার ডেস্ক
  ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

মানসিক অবসাদে ভুগছেন এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। তার দুই সন্তান রয়েছে। তৃতীয় সন্তানকে মানুষ করার মতো আর্থিক, শারীরিক বা মানসিক সামর্থ্য তার নেই। তাই ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ভারতের শীর্ষ আদালতের কাছে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রথমে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটি নতুন মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে জানানো হয়, গর্ভের ওই ভ্রূণের প্রাণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান সরকারি প্রতিনিধি। এতে ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট। তাদের প্রশ্ন, রায় ঘোষণার পরে কেন ওই নতুন মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়া হলো? ক্ষোভ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, 'কোন আদালত ভ্রূণের হৃৎস্পন্দন থামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবে?'

ভারতের প্রচলিত গর্ভপাত বিষয়ক আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো বিবাহিত মহিলা গর্ভপাত করাতে পারেন। তার পরে গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। তাই শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তার আবেদনের ভিত্তিতে গত ৫ অক্টোবর শীর্ষ আদালত এমসকে নির্দেশ দেন, একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মহিলার শারীরিক অবস্থার পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সোমবার, ৯ অক্টোবর শীর্ষ আদালতের বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি বিভি নাগরত্নের বেঞ্চ ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল।

কিন্তু তার পরের দিনই, ১০ অক্টোবর একটি নতুন মেডিকেল রিপোর্ট শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে পেশ করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) ঐশ্বর্যা ভাটি। তিনি বলেন, ভ্রূণের জীবন পাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গর্ভপাতের নির্দেশ দেওয়া হলে সেটা 'ভ্রূণহত্যা' করা হবে। রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য আবেদন জানানো হয় কেন্দ্রের তরফ থেকে।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ নতুন মেডিকেল রিপোর্ট দেখে এমসের চিকিৎসকদের গর্ভপাত প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এও বলেন, 'আপনারা যথাযথ পদ্ধতি মেনে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানান। যে বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা তাদের বিষয়টি জানাব। এমসের চিকিৎসকরা সন্দিহান হয়ে পড়ছেন। পরদিন নতুন বেঞ্চ গড়া হবে। এমসের চিকিৎসকদের আপাতত অপেক্ষা করতে বলুন।'

এর পর যথারীতি শুনানি শুরু হয়। ক্ষুব্ধ বিচারপতি হিমা কোহলি ও বিচারপতি বিভি নাগরত্ন বলেন, 'দু'দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা যদি সচেতন হতে পারেন, তা হলে আগে হলেন না কেন? আগের রিপোর্টে কেন স্পষ্ট ভাবে জানানো হলো না?' দুই বিচারপতির বেঞ্চ ঐশ্বর্যা ভাটির কাছে প্রশ্ন করেছে, 'কেন ওদের আগের রিপোর্ট এতটা অস্পষ্ট ছিল?' বিচারপতি কোহলি ও বিচারপতি নাগরত্ন জানিয়েছেন, যারা ওই মহিলাকে পরীক্ষা করেছেন, এমসের সেই চিকিৎসকদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। আগেরবার একটি 'অস্পষ্ট' রিপোর্ট দিয়ে পরে নতুন একটি রিপোর্টে বলা হলো, ভ্রূণের বাঁচার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারপতি কোহলি বলেন, '...যে ভ্রূণের প্রাণ রয়েছে, তার হৃৎস্পন্দন কোনো আদালত বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে না? আমি তো নিজের কথা বলতে পারি, এমন নির্দেশ দেব না।'

দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, যেভাবে কেন্দ্র গোটা ঘটনাটি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সামনে পেশ করেছে, সেটাও নিন্দনীয়। বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, 'আদালতের একটি বেঞ্চ যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তখন কীভাবে একই আদালতের অন্য বেঞ্চের সামনে আবেদন জানানো হয়? ভারত সরকার যদি এই কাজ করে, তা হলে তো যে কোনো বেসরকারি আবেদনকারী এই কাজ করা শুরু করবে। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট। আমরা একটাই আদালতের আলাদা আলাদা বেঞ্চ। ভারত সরকারের এই ভূমিকা আমি সমর্থন করতে পারছি না।'

শুনানি চলাকালীন, ভাটি সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বেঞ্চের সামনে ব্যাখ্যা করেন। ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও তার স্বামীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন আদালত। নতুন রিপোর্টে ভ্রূণ সম্পর্কে কী লেখা হয়েছে, তা বোঝানো হয়েছে তাদের। মহিলার আইনজীবীকে জানানো হয়েছে, তার মক্কেল পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী চান, সে কথা হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাতে হবে। বেঞ্চ বলেছে, 'আমরা কোনো ভুল বোঝাবুঝি চাই না। একটি দুর্মূল্য জীবন নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে। আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে