সে মাটির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো-
আমি জাওয়াদ
তোমার ফুলগুলো কিনতে চাই
এত বিষণ্ন আর স্তব্ধ তার মুখ
বাবার কথা বলতেই
বিস্ময় ডুকরে উঠলো
অদৃশ্য রক্তের ফোটায় তৈরি হলো অগণিত রংধনু
আমার ভ্রূর মধ্যে বাসা বাঁধলো কান্না
মা কোথায়
খুব অসুস্থ এই টাকা দিয়ে ওষুধ আর রুটি কিনবো
ফুলগুলো আদুরে বেড়াল হয়ে বসলো করতলে
এক অদৃশ্য অনুভব হৃদয়ে
চলো তোমার মায়ের কাছে যাই
তার চিকিৎসা প্রয়োজন
নীরব সম্মতি খুলে দিলো গাড়ির দরোজা
ফুলের চেয়ে সুন্দর এই শিশু
শত শত প্রজাপতি তার মুখে
চোখের কোনে কান্না ভেজা শ্রাবণ
শূন্যতা সরিয়ে
ওর মাথায় হাত রাখলাম
স্নেহের আগ্নেয়গিরি উথলে উঠলো
কত দিনের চেনা এই মানব শিশু জাগিয়ে দিল পিতৃত্ব
শিরা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে মমত্ব
পৌঁছুলাম এক নিষিদ্ধ বস্তির সরু নাকের মধ্যে
ছোট্ট এক ঘরে শুয়ে ওর মা
পদশব্দে জেগে উঠলো
আমার ঘ্রাণে জাগ্রত তার জিহ্বা
এখান থেকে চলে যাও
কখনো এসো না
জ্যোৎস্না হারিয়ে গেছে
মরে গেছে অনেকদিন আগে
ওই জাওয়াদ তোমার সন্তান
অন্তিম অশ্রম্নকণা ধেয়ে এলো
আমার অন্তর্মূলে
পম্পেই নগরী সমস্ত আগ্নেয় ক্রোধ উগরে দিল পদতলে
আমি দাঁড়িয়ে আছি ট্রয়ের ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে একা
মনে পড়লো দ্বাদশীর চাঁদে
আমরা পৌঁছেছিলাম মিলনের
ব্রহ্ম মুহূর্তে
তারপর জোগাড় হলো সাদা বরফের কফিন
কয়েকজন শববাহক এলো সেবক সংঘের
আমি আর জাওয়াদ হাঁটলাম
নৈঃশব্দের নিচ দিয়ে
সন্ধ্যা সমাগত কবরের অতল থেকে কেউ যেন বলছে
বাবা জাওয়াদ কেঁদো না
আমি আসবো
পেছন ফিরে দেখলাম- কেউ নেই
শববাহক- গোরখোদক- জাওয়াদ
অনেকক্ষণ অপেক্ষার ওপর দাঁড়িয়ে দেখলাম দূরে গাছের নিচে এক বৃদ্ধ
মনে পড়লো এই সেই বৃক্ষ যার
তলায় ছিল আমাদের প্রথম বাসর
মন্থর মুহূর্ত ভেঙে ভেঙে তার সামনে দাঁড়ালাম
একটু আগে গোর দেয়ার সময় আমার সঙ্গে একটা ছেলে ছিল- জাওয়াদ; এখন পাচ্ছি না
বৃদ্ধের গভীর কণ্ঠ-
প্রতি বছর এই দ্বাদশীতে
ছেলেটি আসে মায়ের কবরে এক রাত্রির জন্য