শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
আলোচিত তিনটি উপন্যাস

প্রদোষে প্রাকৃতজনে শওকত আলীর ইতিহাসভাবনা

ড. আবু নোমান
  ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শক্তিমান কথাশিল্পী, শওকত আলীর (জন্ম ১৯৩৬-মৃতু্য ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) গল্প আমাদের জীবনকে নাড়া দিয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। মুক্তিযুদ্ধ তার লেখার অন্যতম বিষয়বস্তু, বাংলার ঐতিহাসিক বিষয়গুলোও ছোটগল্প ও উপন্যাসে চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। প্রকৃতপক্ষে বলা যায়, ঐতিহাসিক বিষয়গুলোকে উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন একান্তই তার ভালো লাগা থেকে। এসব লেখা থেকে উঠে আসে সমকালীন সমাজ-সংস্কৃতির স্বরূপ, ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা এবং এ ধারাবাহিকতার অনিবার্য পরিণতি। ফলে শওকত আলীর উপন্যাস শুধু উপন্যাস নয়, মহাকালের জীবন্ত গল্পগাঁথা। ইতিহাসকে অবলম্বন করে শওকত আলী যে কয়েকটি উপন্যাস রচনা করেছেন, এর মধ্যে প্রদোষে প্রাকৃতজন অন্যতম এবং ভিন্ন স্বাদের সন্দেহ নেই। এ ছাড়া তার রচিত প্রায় পনেরোটি উপন্যাস, পাঁচটি ছোটগল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, ছোটদের জন্যও লিখেছেন প্রচুর। তার অর্জন কম নয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৬৮, হুমায়ূন কবির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার ১৯৭৮, অজিত গুহ সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, ফিলিপ্স সাহিত্য পুরস্কার দুবার যথাক্রমে ১৯৮৬ এবং ১৯৯২, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৯ এবং একুশে পদক ১৯৯০। ব্যক্তিগণ জীবনে ছিলেন সরকারি কলেজের অধ্যাপক। দীর্ঘদিন নিভৃত জীবন কাটিয়ে অবশেষে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মৃতু্যবরণ করেন।

প্রদোষে প্রাকৃতজন শওকত আলীর সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস এবং ঐতিহাসিক উপন্যাস সন্দেহ নেই। তথাপি বাংলা সাহিত্যে আমরা যে ঐতিহাসিক উপন্যাস দেখেছি তার চেয়ে ভিন্ন ধারার, নিম্নবিত্ত অনুলেস্নখযোগ্য গ্রামীণ সমাজের মানুষ নিয়ে রচিত। এক সময় ঐতিহাসিক উপন্যাস বলতে শুধু রাজা বাদশাহদের জীবন কাহিনীই ছিল প্রধান অনুষঙ্গ। শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজনে রাজা বাদশাহর কাহিনী প্রাধান্য পায়নি বরং সে সময়ের সমাজমানসকে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি সমকালের প্রাকৃতজনদের উপস্থাপন করেছেন, অবলীলায় তাদের আলোকিত মঞ্চে করেছেন উপস্থাপন। এখানে শওকত আলী আধুনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে অনুমিত হয়।

প্রদোষ শব্দের অর্থ সন্ধ্যার পূর্বাবস্থা, সূর্যাস্তের কাল, সাঁঝের বেলা বা গোধূলির আলো। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার ঠিক আগের অস্পষ্ট আলো। উপন্যাসটিতে বাঙালির প্রদোষকালীন সময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে দ্বাদশ শতকের শেষ পাদে রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত সেনবংশের সর্বশেষ রাজা লক্ষ্ণণসেনের রাজত্বকালের অন্তিম মুহূর্তটিকে। প্রাকৃতজন বলতে মূলত নিচ, অধম, ইতর শ্রেণির বা নিম্নশ্রেণির অসহায়, সম্বলহীন, বিত্তহীন মানুষকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ঘনায়মান অন্ধকারের প্রারম্ভে যে হীন, অসহায় শ্রেণির মানুষের জীবনে আরও কঠিন থেকে কঠিন ও দুর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছে, তারই করুণ কাহিনী উপন্যাসে ধারাবাহিক চিত্রিত হয়েছে। বলাবাহুল্য, এ সময় বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক যে স্খলিত অবস্থা বিরাজমান ছিল, তারই একটি শৈল্পিক চিত্র-দলিল বলা যায় এই উপন্যাসটিকে। ঐতিহাসিক উপন্যাস সবসময় ইতিহাসকে আক্ষরিকভাবে ধারণ করে- এ কথা বলা যায় না, এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কথা প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন, কারও যদি সু্য জানার প্রয়োজন হয়, তবে তিনি যেন সরাসরি ইতিহাস পড়েন আর আনন্দের জন্য পড়েন ঐতিহাসিক উপন্যাস। তবে, প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসে কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হলেও নামকরণ, বিষয়চরিত্র, সমকালের চিত্র ঐতিহাসিকভাবেও স্বীকৃত বলা যায়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো নিয়ে যথার্থই বলেছেন, 'ইতিহাসে তাদের নাম নেই। হয়তো অন্য নামে তারা বাস করেছে সেই কালে, হয়তো অন্য কালেও।' এই সময়কালে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির অবস্থার অধঃপুনের পেছনে তৎকালীন মানুষের সমাজ, জাত-বর্ণ এবং অর্থনৈতিক শ্রেণি উভয় দিক থেকে স্তরে স্তরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্তি এবং পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে শত্রম্নভাবাপন্ন মনোভাব অনেকাংশে দায়ী বলা যায়। দ্বিতীয়ত, তৎকালীন জনজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রে, ধর্মে, শিল্প-সাহিত্যে দৈনন্দিন জীবনে যৌন অনাচার নির্লজ্জ কামপরায়ণতা, মেরুদন্ডহীন ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা এবং রুচির অভাব। ধর্মের নামে অধর্ম, সামাজিকতার বদলে অসামাজিকতা, সংস্কৃতির স্থানে অপসংস্কৃতি আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এই সময়ের বাংলাকে।

প্রদোষ বলতে মুসলিম বিজয়পূর্ব বাংলার সমাজ চিত্রের বর্ণনায় ঔপন্যাসিক শওকত আলী যে ইতিহাস অঙ্কন করেছেন তাতে আর যাইহোক ইতিহাস সমান্তরালেই কাহিনী এগিয়েছে। সমকালীন মানুষ, মানুষের পেশা, জনপদ, গ্রাম-শহর, নদ-নদী, প্রকৃতি এবং চরিত্রের সংলাপ সবকিছুর বর্ণনায় যে আবহ সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় তাতে মনে হয়, শওকত আলী কল্পনায় হাজার বছর পূর্বের বাংলায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন পাঠককে।

প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু যদিও শহর তথাপি গ্রামীণ জনপদের গুরুত্বও কম ছিল না। প্রাচীন বাংলার প্রাপ্ত নগরের কেন্দ্রবিন্দু ব্যতিরেকে যে পরিসীমার ব্যপ্তি, সাধারণত সমকালীন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা যেখানে অনুপস্থিত এ ধরনের অঞ্চলগুলো গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত ছিল। প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ জীবন একান্তই কৃষিভিত্তিক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পনির্ভর, এগুলোর সংখ্যা খুব বেশি ছিল বলা যায় না, আয়তনেও ছিল ছোট ছোট। কৃষিজীব ক্ষেত্রকর গ্রামীণ মানুষের চাহিদাও ছিল একান্তই কম। উৎপাদনের উপযোগী সুপ্রচুর ভূমি থাকলেও তাদের প্রয়োজন হতো সামান্যই।

প্রাচীন বাংলার গ্রাম ও নগর সভ্যতায় আকৃতিগণ পার্থক্য যেমন ছিল, ছিল প্রকৃতিগণ পার্থক্য, সে সময়ে যারা গ্রামে বাস করত, তারা সাধারণত কৃষিনির্ভর ভূম্যধিকারী, কৃষক, শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকের সংখ্যাই প্রধান। গ্রামে উৎপাদিত ফল-ফসল চলে যে শহরের হাটে-বাজারে। ফলে সামগ্রিক কারণেই শহরের অধিবাসীরা গ্রামের অধিবাসীদের চেয়ে বেশি সুযোগ- সুবিধা ও সুখ ভোগ করতে পারত।

প্রাচীন বাংলার অসংখ্য গ্রামের নাম ইতিহাসে দেখা যায়। এসব গ্রামের আয়তন যেমন ছোট-বড় ছিল, অধিবাসীদের সংখ্যাও ছিল বেশি-কম। ছোট ছোট গ্রামকে বলা হতো বাটক বা পাটক, এর বাংলা অর্থ করলে হয় পাড়া। প্রাচীন লিপিমালায় বৈগ্রামপাট্টলিতে বায়িগ্রামের দুটি ভাগ ছিল যার একটির নাম ছিল ত্রিবৃতা ও অন্যটি ছিল শ্রীগোহলি। এ ছাড়া ত্রিবৃত বাটক, কপিস্থ বাটক, মধু বাটক ছাড়াও অসংখ্য গ্রাম বা পাড়া খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ সমাজ কৃষিপ্রধান হলেও শিল্পীদের বাসও ছিল এখানে। বাঁশ ও বেতের শিল্প, কাষ্ঠ শিল্প, মৃৎ শিল্প, কার্পাস ও অন্যান্য বস্ত্রশিল্প ইত্যাদিও ছিল গ্রামে। কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেতের নানা প্রকার পাত্র, ঘরবাড়ি, নৌকা, মাটিনির্মিত হাঁড়ি পাতিল, লোহার দা-কুড়াল, কোদাল, লাঙ্গল, লাঙ্গলের ফলা, খন্তা ইত্যাদি। নিত্য ব্যবহার্য কৃষি যন্ত্রাদি কৃষির প্রয়োজনেই তৈরি হতো গ্রামে। সুতা কাটা দরিদ্র ব্রাহ্মণ গৃহস্থ বাড়ির মেয়েদের একটি অন্যতম কর্ম ছিল। জানা যায়, কাঁসারি শিল্প ও হাতির দাঁতের শিল্প গ্রামে বেশ চালু ছিল। গ্রামে বসবাসকারী প্রধান প্রধান পেশাজীবী ও শ্রেণির মধ্যে ছিল ব্রাহ্মণ, ভূমির মালিকগণ, ক্ষেত্রকর, ভূমিহীন কৃষিশ্রমিক, কর্মকার, কুম্ভকার, মালাকার, সূত্রধর প্রভূতি শিল্পীরা। এ ছাড়া কিছু কিছু ব্যবসায়ী এবং গোপ, নাপিত, রজক, নর্তক-নর্তকী এবং নিম্নশ্রেণির অগণিত মানুষ।

প্রাচীন বাংলার নগরকেন্দ্রিক শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শহর গড়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাংলায়ও। সংশ্লিষ্ট নগরের রাজকর্মচারীরা বাস করত শহরে। রাজকার্যের প্রয়োজনে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আসা-যাওয়া করত সেখানে। এসব বসতি ও যাতায়াতের পথকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল হাটবাজার। যাতায়াত, গমন-নির্গমন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য শহর-নগর ও নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। শহর-নগরকে কেন্দ্র করে হাটবাজার গড়ে উঠেছিল সাধারণত নদীর তীরে অথবা যাতায়াতের সুপ্রশস্ত রাজপথের পার্শ্বে, কিংবা উভয় সুবিধা সংবলিত স্থানে। রাজা-মহারাজাদের রাজধানী এবং যুদ্ধজয়ের স্মারক জয়স্কন্দাবার এ সমস্ত স্থানে স্থাপিত হয়েছিল, এগুলো গড়ে উঠত নদী অথবা রাজপথকে উপলক্ষ করেই।

শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসটি যে সময়কে পরিক্রমণ করেছে তা যেমন ভৌগোলিক প্রাকৃতিক দিক বিবেচনায় জটিলতায় আকীর্ণ, তেমনি আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মানুষ যে পেশায় সাধারণত জীবিকা নির্বাহ করত, যে চিন্তা-চেতনায় ব্যাপৃত থাকত এ উপন্যাসের চরিত্রগুলোর পেশাও একই, তাদের চিন্তা-চেতনা, ভাবনা সে সময়কে ধারণ করেছে পুরোমাত্রায়। মমত্ববোধ, সংবেদনশীলতা, আতিথেয়তা, অতিমাত্রায় সচেতনতা চরিত্রগুলোকে কদাচিত সময়োত্তীর্ণ করেছে বলে মনে হয়। তবে ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে যে কালের সমাজ, সংস্কৃতি, ঘটনাপ্রবাহ বিধৃত হয়েছে তাতে উপন্যাসটিকে সার্থক ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যেতে পারে। দ্বাদশ শতকের শেষপাদে সেনশাসনে অতিষ্ঠ বাংলার জনপদের আর্থ-রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্ম হয়ে পড়েছিল পঙ্গু। বেঁচে থাকাই সে সময়ের মানুষের বড় তাৎপর্যময় ছিল, সে সময়ে ছোটখাটো কিছু প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও সংঘবদ্ধ কোনো গণআন্দোলন গড়ে ওঠেনি। মানসিক দুর্বলতা ও আর্থ-রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা-উৎপীড়ন-নির্যাতনে বিপর্যস্ত হয়ে তারা কেবলই এগিয়ে চলেছে লক্ষ্যহীন পথে। ইতিহাসের সেই প্রদোষকালের জটিল আবর্তে ঘূর্ণায়মান প্রাকৃত নরনারীর জীবনবাস্তবতাই এই উপন্যাসের মূল কাহিনী। এই উপন্যাসে উঠে এসেছে তৎকালীন সমাজ-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক জটিলতার নানা চিত্র, বিধৃত হয়েছে সেই দুষ্কালের মধ্যে পতিত প্রাকৃত জনসাধারণের অত্যাচারিত, শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, স্বপ্নাহত, আশাহত, পলায়নপর, উদ্বাস্তু জীবনের কাহিনী।

প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসটির কাহিনী মোট ছাব্বিশটি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত। অংশ দুটি, প্রধম অংশ প্রদোষে প্রাকৃতজন নামে। এর বিস্তৃতি প্রথম থেকে দশম পরিচ্ছেদ এবং দ্বিতীয় অংশ দুষ্কালের দিবানিশি একাদশ থেকে ছাব্বিশ পরিচ্ছেদ পর্যন্ত বিস্তৃত। ইতিহাসের সঙ্গে সাহিত্যের নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। রাজনৈতিক শুধু নয়, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গেও এই সম্পৃক্ততা লক্ষ্যণীয়। বঙ্কিমচন্দ্র দুর্গেশনন্দিনী দিয়ে বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসের যাত্রা শুরু করেছিলেন, বলা যায় বাংলা ভাষায় ছিল প্রথম। পরবর্তীকালে তার পথ ধরে মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ), রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ), হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১), ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ), রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮৬-১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ) প্রমুখ ঔপন্যাসিকের আগমন। ঐতিহাসিক উপন্যাসে সংযোজিত হয়েছে আরও অনেক বৈচিত্র্য, নতুন নতুন ইতিহাসের বাঁকের প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে নতুন উপন্যাস। শুধু বাংলা ভাষাকে নয়, এগুলো সমৃদ্ধ করেছে কাহিনীর পারস্পর্য উপস্থাপনাকেও। রঙে, ঢঙে, ব্যাপ্তিতে, সমাজবাস্তবতায় সৃষ্টি করেছে আকর্ষণ ও বৈচিত্র্য। ইতিহাসের বিষয়কে উপজীব্য করে সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে অনেক ঔপন্যাসিক প্রাচীন বাংলা ও ইতিহাসের নানা অনুষঙ্গকে বিষয় হিসেবে ধারণ করেছেন উপন্যাসে, উপন্যাসে প্রাচীন বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি, রাষ্ট্র-অর্থনীতি, খাদ্য-পোশাক-পরিচ্ছদ, তথা সমকালের নানারূপ চিত্র। প্রাচীন বাংলার সামাজিক ইতিহাসের উপাদানগুলো ব্যবহার করে ঔপন্যাসিকরা বাংলা ও বাঙালিকে মূলত অনুসন্ধান করেছেন ইতিহাসের অন্তরালে।

শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসের শুরুটা খুবই মনোরম, মনে হয় শান্তি শান্তি ভাব নিয়ে সূচনা করতে চেয়েছেন। 'চৈত্রের দাবদাহে অশ্বত্থছায়া বড়ই শ্রান্তিহারক। নতুবা এত শীঘ্র ক্লান্তি অপনোদন সম্ভব ছিল না। শ্যামাঙ্গ অশ্বত্থের ছায়ায় শয়ান অবস্থায় নির্মীলিত চোখে নিজ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে। প্রৌঢ় লোকটি ওই সময় কাছে এসে জানতে চাইলেন, এখন সুস্থ বোধ করছেন তো?' এই কয়েকটি লাইনের মধ্যে শওকত আলী গোটা গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি করে ফেলেছেন, বাকি গল্প পরের পুরো একশ সাতানব্বই পৃষ্ঠাজুড়ে রয়েছে। শ্যামাঙ্গ প্রদোষকালীন বাংলার প্রতিনিধিত্বকারী একজন মৃৎশিল্পী, যে স্বাধীনভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনার মূর্তি উৎকীর্ণ করতে চায়, কিন্তু সমাজের গণ্যমান্য ও পুঁজিপতি ব্যক্তি তথা সুধীমিত্রের অপছন্দ হওয়ায় তার প্রভু বসুদেব তাকে তিরস্কৃত ও লাঞ্ছিত করে। প্রদোষ বলতে বাংলার সেন বংশীয় শাসনের শেষের দিকের স্খলনের যুগকে বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ মুসলমানদের আগমনের ঠিক পূর্বে বাংলার আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র উপন্যাসে এঁকে উপস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। শ্যামাঙ্গ বিল্বগ্রাম থেকে উত্তর বাংলার নওগাঁর আত্রাই নদীর মোহনায় রজতপটে তার বাসস্থলে যেতে চায়, কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে থমকে যেতে হয়। পরিচয় হয় মায়াবতী ও স্বামীপরিত্যক্তা নারী লীলাবতীর সঙ্গে। রাতে শ্যামাঙ্গ মায়াবতীর বাসস্থল উজতবট গ্রামে আশ্রয় নেয়। মায়াবতীর অনুরোধে তার বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মায়াবতীর পিতা সুকদেব অন্যদের সঙ্গে গল্প করে বৌদ্ধদের অবস্থা এবং মাঝেমধ্যে যবন তথা মুসলমানদের সম্পর্কেও কিছু কিছু তথ্য পায়। হিন্দুদের হাতে বৌদ্ধদের নিগ্রহের ঘটনা এখানে প্রায়শই ঘটে, শ্যামাঙ্গের জানা ছিল। কথায় কথায় যবন তথা মুসলমানদের প্রার্থনার নিয়ম-কানুন এবং তাদের খবরাখবরও জানতে পারে শ্যামাঙ্গ। ইতোমধ্যে তারা মগধ দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের প্রায় রাজ্যই জয় করে শক্তিশালী হয়েছে, শ্যামাঙ্গের কাছে নতুন তথ্য। অধিক রাতে মায়াবতী শ্যামাঙ্গকে ভ্রাতা সম্বোধন করে

বাকি অংশ ১২ নং পাতায়

প্রদোষে প্রাকৃতজনে

১৩ নং পাতার পর

লীলাবতীর স্বামী অভিমনত্য দাসের খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ করে।

এভাবেই ধীরে ধীরে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা ও পরিস্থিতিতে একসময় শ্যামাঙ্গ লীলাবতী জড়িয়ে পড়ে প্রণয় সম্পর্কের বন্ধনে। লীলাবতীর স্বামী লীলাবতীকে ত্যাগ করলেও স্বামী হিসেবে দাবি তখনো একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়নি। অন্তত স্ত্রী যখন অন্য পুরুষের সঙ্গে সংলগ্ন তখন লীলাবতীর স্বামীর আত্মমর্যাদাবোধ ভীষণ টনটনে হয়ে ওঠে। স্বামী হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের অনুভূতি না থাকলেও স্ত্রীকে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন নিত্য স্বেচ্ছাভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে সমকালীন সমাজও লীলাবতী ও শ্যামাঙ্গের এই সম্পর্কের স্বীকৃতি দেয় না। অথচ লোলুপ মানুষের লালসার উপযুক্ত কঠোর শাস্তির দায়িত্ব সমাজ গ্রহণ বা বহন করতে অসমর্থ, বলা যায় অসহায়তার ছদ্মাবরণে নীরব হয়ে থাকে। শ্যামাঙ্গ লীলাবতীর পাশে দাঁড়াতে চাইলেও সামাজিক কঠোর দুর্লঙ্ঘনীয় দুর্বিপাক তাদের প্রতিনিয়ত তাড়িত করে, অথচ ধান্দাবাজরা নারীলোভে উচ্চনীচ যাচাই করার কসরত করত না। নিম্নশ্রেণি এড়িয়ে চলাই হিন্দু উচ্চশ্রেণির একটি সংস্কার। সামাজিক সম্পর্ক তো দূরের কথা নিম্নশ্রেণির হিন্দুদের ছায়া পর্যন্ত না মাড়ানো হিন্দু ব্রাহ্মণ্যগোষ্ঠীর প্রকৃত চেহারা হলেও গোপনে সে চরিত্র কোথায় উবে যেত লালসায় কিংবা নিষ্ঠুর উদ্ধত আস্ফালনে। উচ্চশ্রেণির অভিজাত হিন্দুরা নিম্নশ্রেণির ডোম্বীনীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত রতিক্রিয়ায় মিলিত হতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করত না। শওকত আলী সে সময়ের সামাজিক ইতিহাসকেই অবিকল চিত্রিত করেছেন দক্ষ চিত্রকর হয়ে নিপুণ তুলির আঁচড়ে। চর্যাপদে এ সময়ের চিত্র ফুটে ওঠে।

"নগর বাহিরিরে ডোম্বী তোহোরি কুড়িআ,

\হছোই ছোই যাই সো বামহণ নাড়িআ।"

লীলাবতীর ছেড়ে যাওয়া স্বামী অভিমনত্য দাস রাজ অমাত্য হওয়ার সুবাদে সৈন্যদের মাধ্যমে লীলাবতী ও শ্যামাঙ্গকে তাড়া করে ফেরে। লীলাবতীকে রক্ষা করতে প্রেমিক শ্যামাঙ্গ ছুটে বেড়াচ্ছে নানা জায়গায়, অলি-গলি, অন্দরে। কখনো ঘরে না তুললেও নিজ স্ত্রীর অন্য পুরুষের সঙ্গে জীবনযাপন অভিমনত্য দাস মানবে না। শ্যামাঙ্গ ও লীলাবতীকে খুঁজছে রাজার সৈন্যরা। এ পলায়নপর পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে মানসিক সম্পর্ক দৃঢ় হয়, এক সময় শারীরিক সম্পর্ক গড়ায়, লীলাবতী তখন অন্তঃসত্ত্বা। এ অবস্থায় আগমন ঘটে তুর্কি বীর বখতিয়ার খলজির।

বখতিয়ারের আগমনের পূর্বে ইসলাম প্রচারক যবন তথা মুসলমানদের আগমনের বার্তা শওকত আলী মাঝেমধ্যেই দিয়ে গেছেন উপন্যাসের পরতে পরতে। মুসলিম ব্যবসায়ীদের আচার-আচরণের বর্ণনা করেছেন সাবলীলভাবে। মানুষ তখন কেউ ঘুণে ধরা এই সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষী, কেউ কেউ পরিবর্তনোত্তর চিন্তায় বিভ্রান্ত। এরূপ পরিস্থিতিতে যবনদের আগমনের ফলে অন্তত সমাজ আগের চেয়ে আলোকিত হবে, হয়ে উঠবে বসবাসযোগ্য -এই বিশ্বাস অনেকের, এমনকি লীলাবতীর অন্তরেও জেগেছে। অনেকের মনেই তখন যবন মুসলিম পুরুষ বখতিয়ারের স্বরূপ চিত্রায়ন চলেছে। একজন অনুলেস্নখযোগ্য কৌতূহলীর মুখে, "ভয়ানক যবন জাতি শনৈঃ শনৈঃ পূর্বে অগ্রসর হচ্ছে-কখন কী হয়, বলা যায় না। এমন শোনা যাচ্ছে যে, এই রাজমূর্তিমান যম একেবারে। খর্বদেহ, কিন্তু বাহুদুটি যেন ভূমি স্পর্শ করে। শ্মশ্রম্নকেশ উভয়ই ঘন, চক্ষুদ্বয় রক্তবর্ণ-এবং যখন নিজ ভাষায় 'ইয়া আলী' বলে হুঙ্কার দেয়, তখন মানুষের হৃদকম্প উপস্থিত হয়। হাতের অস্ত্র ত্যাগ করে সৈনিক পুরুষরা ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করে।" সতেরো জন মাত্র সৈন্য নিয়ে বখতিয়ারের আগমন বাংলায়। একটি রাষ্ট্রের নৈতিক শক্তি কতটা দুর্বল হলেই না মুষ্টিমেয় কিছু বহিরাগণ সৈন্য জয় করে দেশ ও জনপদ? এদিকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও আতঙ্কিত, দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য। কেউ কেউ তাদের স্বাগত জানানোর পক্ষে, তবে আতঙ্ক সবার মধ্যেই। এতদিনের আতঙ্ক-ভয় হঠাৎ অপরিচিত মুসলমানদের আগমনে দূরীভূত হওয়ার কথা নয়, হয়ওনি স্বাভাবিক কারণেই।

সার্বিক স্খলনের সে বৈরী যুগে বসন্ত দাস কিংবা মিত্রানন্দের মতো লোকদের ভূমিকা থাকে, যদিও তাদের করার থাকে না কিছুই। মিত্রানন্দ বর্তমান অবস্থার অবসান চায়, কারণ এ ছাড়া জীবনের বিকাশ সম্ভব নয়। সে চায়, মানুষ সপরিচয়ে উঠে দাঁড়াক, নতজানু দাসত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসুক। কিন্তু কিভাবে? জানা নেই, তার কথায়, "বর্তমান অবস্থার অবসান হওয়া উচিত- না হলে জীবনের বিকাশ অসম্ভব। আমরা মানুষকে সপরিচয়ে উত্থিত হতে বলছি, নতজানু দাসত্বের জড়তা থেকে মুক্ত হতে বলছি- আমি এ পর্যন্ত জানি- এর অধিক আমার জানা নেই।"

শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন যে সময়ের গল্প নিয়ে রচিত, সে সময়ের কাহিনী নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র রচনা করেছেন 'মৃণালিনী' উপন্যাস আর শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় রচনা করেছেন উপন্যাস 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ', 'গৌড়মলস্নার' কিংবা 'তুঙ্গভদ্রার তীরে'। তবে 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ' উপন্যাসটির বিস্তৃতি প্রদোষে প্রাকৃতজনের অনেকটা কাছাকাছি সময়ের ইতিহাসকে অবলম্বন করে। পাল বংশের শাসক নয়পালের আমলের কিছু ঘটনাকে উপজীব্য করে এই উপন্যাস রচিত। 'বখতিয়ারের তলোয়ার' নামে শফীউদ্দীন সরদারও একটি অনন্যসুন্দর ঘটনাসমৃদ্ধ উপন্যাস রচনা করেছেন একই ঘটনার বাতাবরণে। প্রত্যেকটি উপন্যাসই আপন আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য। শফীউদ্দীন সরদার বখতিয়ারের তলোয়ারে সমকালীন সরল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ও কল্পনার রোমান্টিকতার সংমিশ্রণে প্রোজ্জ্বল উপস্থাপনায় পাঠককে সে সময়ের রাজনৈতিক অবস্থার সার্বিক চিত্র রসসমৃদ্ধ উপস্থাপনায় মগ্ন করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। সেখানে সমকালীন আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থার কিছু চিত্র থাকলেও সামাজিক অবস্থার বর্ণনা অনেকাংশেই অনুপস্থিত রয়েছে, রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাক্রম রক্ষিত হলেও, কল্পনার প্রাচুর্যে পাঠক রসসিক্ত; প্রকৃত ইতিহাসের আস্বাদ গ্রহণ ও পূর্ণমাত্রায় উপভোগ থেকে হয়েছে বঞ্চিত। তবুও সরাসরি বখতিয়ার খলজিকে উপন্যাসের নায়ক করে সরল ধারায় রচিত উপন্যাসটি পাঠককে ভাবাতে ও রসাস্বাদনে যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়েছেন কথানির্মাতা।

শরদিন্দুর 'তুমি সন্ধ্যার মেঘ' উপন্যাসে পাল রাজত্বের শেষে বাংলার ইতিহাসে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল তারই পূর্ববর্তী বাংলার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে স্থান পেয়েছে। এ সময়েও ভিতরে ভিতরে সামাজিক অবক্ষয় তৈরি হচ্ছিল। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সমগ্র রাজ্য ভেতর থেকে ভেঙে পড়ছিল। সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী ঘনিয়ে আসা মহারাত্রির অন্ধকারে নিমজ্জমান বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন দীপঙ্কর। এইভাবে বহু ঐতিহাসিক ও অনৈতিহাসিক চরিত্রের সমাবেশের এই উপন্যাসটিও পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে যথেষ্টই, ইতিহাস হয়েছে গল্পময়। ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে যতটা, তার চেয়ে সমকালীন সমাজচিন্তা ও জটিল অবস্থার প্রেক্ষিতে সংস্কারচিন্তার আবহ নির্মিত হয়েছে উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে। সমকালের ঘটনা পরিপ্রেক্ষিত ও চরিত্র চিত্রণে শরদিন্দু যথেষ্টই স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন। এ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে তার অসাধারণ কল্পনা ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

প্রদোষের প্রাকৃতজনদের নিয়ে রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে বলা যায় সাহিত্যিক শওকত আলী সম্পূর্ণ এবং সার্বিক কাজ করেছেন, শওকত আলী সেই মহোত্তম লেখকদের একজন যিনি শ্যামাঙ্গ-লীলাবতী-অভিমনত্য দাস, মায়াবতী-বসন্তদাস-মিত্রানন্দ, নিরঞ্জন, যোগী সিদ্ধপা, দীনদাস, যোগমায়া, মনোহর দাস কিংবা চন্দ্রদাস, হরিসেন অথবা কুসুম ডোমনীকে এনে এক কাল্পনিক যুগের অবতারণা করেছেন। সেখানে জীবন আছে কিন্তু আনন্দ নেই হাসি নেই, নেই বিশ্বাস আর ভালোবাসা। সেখানেও শ্যামাঙ্গ কিংবা লীলাবতীদের বেঁচে থাকার ইচ্ছে আছে, কেউ বেঁচে যায় কেউ পারে না। ইতিহাসের নির্মম জীবাষ্ম হয়ে বেঁচে থাকে চরিত্রগুলো। এই স্খলিত যুগকে সামনে এনে নাটক মঞ্চস্থ করে শওকত আলী বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন ইতিহাসের পথেই। ঔপন্যাসিকের শেষ বার্তাটির অনুরোধে বারবার আপস্নম্নত হই, "লীলাবতীকে খুঁজতে খুঁজতে যদি কখনো পলস্নী বালিকার হাতে মৃৎপুত্তলির সন্ধান পাওয়া যায়, তবে সেটি নিশ্চয় বুঝে নিতে হবে, ওটি শুধু মৃৎপুত্তলি নয়, বহু শতাব্দী পূর্বে লীলাবতীর জন্য শ্যামাঙ্গ নামক এক হতভাগ্য মৃৎশিল্পীর মূর্ত ভালোবাসাও।"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে