১.
তোমাকে লেখা আমার
চিঠিখানা পোস্ট করা
হয়নি কখনো, আজো।
দীর্ঘকাল পর দেখা,
যোগাযোগ নিত্য ঘটে:
হাই! হ্যালো! ভালো? আচ্ছা!
চিঠিটা এখনো আছে
এক গুপ্ত ডাকবাক্সে
হৃদয়ের এক কোণে।
২.
ধ্যানমগ্ন যোগী তুমি
কখনোই
ভাবিনি তোমায়।
ধান্দা জানে জলাভূমি,
মতলবে
খাড়া এক পায়।
বক তুমি ধর্ম নমি
প্রেম ঠোঁটে
বাঁধো লহমায়।
৩.
ভালোবাসা ফেলে দাগ, কখনো মোছে না-
সময় হয়তো তার ওপরই
সহনীয়তার প্রলেপ মাখিয়ে দেয়,
সময়ে সময়ে তা গোলাপ হয়ে
অঙ্কুরিত হয়,
প্রস্ফুটিত হয়;
কিন্তু হৃদয়ের অতল গহিনে তা
হীরের টুকরো হয়ে জমা থাকে।
৪.
বারবণিতা কখনো
তার খদ্দেরের মুখ
মনেই রাখে না।
কিন্তু ছেলেমেয়ে কেউ
তাদের ভালোবাসার
প্রথম চুম্বন ভুলতে পারে না-
তাতে যদি হৃদয়ের স্পর্শ থাকে।
৫.
ভালোবাসা এমন একটা শক্তি
যা জেদকে প্রেমময় করে তোলে,
ভালোবাসা আকাশকে
মাটিতে নামিয়ে আনে।
শিশির মিশিয়ে দেয়
সাগরের উদ্বেলিত তরঙ্গের সঙ্গে;
তবে ভালোবাসাকে উঠতে হয় জেগে
হৃদয়ের অতলান্ত গভীরতা থেকে।
৬.
জানি না, তুমি এখন ঘুমোচ্ছ কিনা।
ঘুমোলে সবচাইতে আনন্দ বোধ করব আমি।
জাগরণে। তোমার ঘুমেও।
তোমার পাশেই। তোমারই সাথে।
৭.
যে রাত কাটে ভালোবাসাহীন
সেই রাতে রজনীগন্ধা ফোটে না,
মালতী চামেলি হাস্নাহেনা ছড়ায় না সুবাস কেউই;
সে রাতের নক্ষত্ররা ক্লান্ত ম্স্নান হয়ে আসে-
চাঁদের আলোও নেয় মেঘের আড়াল।
৮.
যে ঘাসে স্পর্শ তোমার
আলতা মাখানো পায়ে
মেন্দি লাল নক্সি হাতে
সে ঘাসে তোমার ঘ্রাণ-
পাই অস্তিত্ব তোমার।
৯.
কোনো এক দাবদাহে নবীন আষাঢ়
দাঁড়িয়েছিল একান্তে মেঘের দুয়ারে।
ঠকঠক নাড়ে কড়া:
জল দেবে গো, মমতাময় বারি!
বালিকা মধ্য-আষাঢ়ে
ফিরিয়েছে তৃষ্ণাতুরে।
১০.
শিশির ভেজা একটি মুখ
পদ্মপাতায় ভাসে,
মনের কোণে দীঘি এক
চোখের তারায় হাসে।
১১.
আমি যাকে লিখি পত্র
তার দৃষ্টি তো আকাশ পেরিয়ে।
মাটি আঁকড়েই আমার প্রতীক্ষা-
মৃত্তিকার সোঁদা গন্ধে;
তার কি অনীহা?-
হাওয়ায় নিরুদ্দেশ চিঠি।
তবু বলি, মাটি ছুঁয়ে দেখো
পেয়ে যাবে এক আন্তরিক পুরুষের।
ঘাম সিক্ত নোনা ঘ্রাণ,
তোমার স্বেদবিন্দুর সঙ্গে মিশে একাকার,
জন্ম নিতে পারে যমজ সন্তান।
১২.
রাতটায় যদি হয় জ্যোৎস্না পস্নাবন,
পাড়ার ওপারে তুমি- নির্ঘুম প্রহর;
এপাড়ায় একজন একা একদৃষ্টে-
ভাসমান মেঘে মেঘে এক চাঁদনির
লুকোচুরি ছলাকলা বেলায় বেলায়
মুগ্ধতার মিহি মায়া মেখে দেয় চোখে;
ছায়াময় মায়াজাল
চাঁদের ঘোড়ায় তুমি
দুরন্ত রাজকুমারী।
১৩.
ভিখিরির মতো চোখ মেলে রই
সারা দিনমান বিষণ্ন প্রহর;
করুণার বারি ফোঁটা ফোঁটা
যতটুকু দাও
তাই নিয়ে মিটে তৃষ্ণা-
তবু জেগে থাকি অপেক্ষায় রত
এতটুকু হাসি সজল ভালোবাসার।
কতখানি বেসেছি যে ভালো
কতটুকু দিয়েছি এ মন
বুকের উপর পাতো কান
পেয়ে যাবে তৃষ্ণিত স্পন্দন।
১৪.
তোমার সেদিনের 'না'
শব্দহীন
বড় বেজেছিল
নিশুতি রাতের সেই
ঘুঙুরের
মতো অলৌকিক
আশায় তাড়িত করে
ডুবিয়েছে
বিপন্ন আঁধারে
ডুবতে ডুবতে আমি
জেগে উঠি
তোমার সত্ত্বায়।
১৫.
যে হাত ছুঁয়েছে ফুলের প্রতিভা
যে হাত বাড়ায় শুদ্ধ সখ্যতায়
অঙ্গীকার তার ফিরিয়ে না দেয়া
পবিত্র সে হাত স্বর্গেরই দান
আলোক ঝর্নার ইশারা ঝিলিক
আস্থা বিশ্বাসের একান্ত প্রতীক
স্পর্শ নয় কোনো অনুভবে জানি
অন্তরের পবিত্রতা।।