রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মরণঘাতী ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে থেরাপি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ক্যানসার মানে কাঁকড়া, এটিকে কর্কট রোগও বলা হয়। স্থানীয় কলা ভেদ করে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যখন অনেক শুঁড়ের মতো মাইক্রোমেটাস্টাসিস সম্প্রসারিত করে তখন তাকে দেখতে অনেকটা দাঁড়াওয়ালা কাঁকড়ার মতো দেখায়। ক্যানসার বা কর্কট রোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগগুলোর সমষ্টি।

বিশ্বের সব প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যানসার বলে। বিনাইন টিউমার ক্যানসার নয়। অনেক ক্যানসার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসেবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেশন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যানসারে পরিবর্তিত হবেই তার কোনো স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যানসার হওয়া অবশ্যম্ভাবী- এদের প্রি-ক্যানসার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্ট্যাসিস হলো ক্যানসারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যানসার কোষগুলো অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।

ক্যানসারের কারণ

বয়স : সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে, কারণ এ সময়ে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক হিসেবে দেখা যায়, যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয় তাদের শতকরা ৭০ ভাগেরই বয়স ৬০ বছরের ওপর।

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা : খাবার এবং জীবনযাপনের ধারার সঙ্গে ক্যানসারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। যেমন- ধূমপান বা মদ্যপানের সঙ্গে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালির এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যানসারের যোগাযোগ রয়েছে। তেমনিভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সঙ্গেও ক্যানসারের যোগসূত্র রয়েছে। যারা সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যানসারের প্রবণতটা বেশি।

পারিবারিক ইতিহাস : ক্যানসারের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

\হক্যানসারের চিকিৎসা

অস্ত্রোপচার : যে জায়গাটি ক্যানসার আক্রান্ত হয় সেটির ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলো এবং তার আশপাশের কোষগুলোকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়। ক্যানসার যদি অল্প একটু জায়গাজুড়ে থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে এ ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রেডিওথেরাপি : নিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরের অংশবিশেষে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রয়োগ করে সেই জায়গার কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।

কেমোথেরাপি : এই ব্যবস্থায় ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সঙ্গে বা অন্য কোনোভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেওয়া হয়। রক্তের সঙ্গে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যানসার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।

হরমোন থেরাপি : শরীরের কিছু হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন করার মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। শরীরের বৃদ্ধির সঙ্গে হরমোনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কোনো ক্যানসার এই হরমোনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। ফলে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে ক্যানসারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হরমোন থেরাপি

ব্যবহৃত হয়।

ক্যানসার প্রতিরোধ

প্রত্যেকদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করা। যেমন- দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, নাচ করা, হাঁটা।

ধূমপান বা মদ্যপান ছেড়ে দেওয়া বা পরিমাণ কমিয়ে আনা। পান-সুপারি জর্দা, তামাকপাতা খাওয়া বন্ধ করা। চর্বিজাতীয় পদার্থ কম খাওয়া। সম্ভব হলে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা কমিয়ে দেওয়া। প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, ফলমূল এবং আঁশজাতীয় খাবার খাওয়া।

বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন মেখে বের হওয়া। নিয়মিত ডাক্তার দেখানো। তা সম্ভব না হলে শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর পরীক্ষা করানো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে