সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেমস :জেগে ওঠা ফিনিক্স

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ইতোমধ্যেই ৬০-এর কোঠায় পড়েছেন দেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের অন্যতম ভোকাল জেমস। যিনি কখনো নগর বাউল, কখনো রকস্টার। দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের রকস্টার। বাংলাদেশের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। সেই যে আশির দশকের মাঝামাঝিতে যখন বাংলা রক গানের টগবগে তরুণ জেমস তখন থেকেই তার রাশভারী কণ্ঠের গাওয়া গানের কলিগুলো তরুণদের মুখে মুখে ফিরত এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। তার ব্যতিক্রমী লাইফ স্টাইলের জন্য ভালোবেসে অনুরাগীরা তাকে 'গুরু' বলে ডাকেন। এই একই ডাক অবশ্য পপগুরু আজম খানকে ঘিরেও শোনা যেত। উপমহাদেশজুড়ে অসংখ্য অনুরাগী রয়েছে তার। আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর আগের পাড়ার তরুণরা গিটার হাতে দলবদ্ধভাবে যেসব গানের কোরাস করত তাতে জেমসের গানই বেশি শোভা পেত। এখনও একইভাবে এই নগর বাউলের গানই শুনতে পাওয়া যায় তরুণদের কণ্ঠে।

এই নগর বাউলের পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। বর্তমানে এই কণ্ঠশিল্পী বলতে গেলে তার ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময় পেরিয়ে এসেছেন। তারপরেও ব্যান্ডসঙ্গীতের ক্ষেত্রে যে দম, যে শারীরিক ফিটনেস দাবি করে সেই বিচারে তিনি এখনো একটি মঞ্চে বেশ ভালো মতোই এক নাগাড়ে ২২/২৩টি গান করার সামর্থ্য রাখেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের একমাত্র ভোকাল তিনি। দেশ ছাড়িয়ে যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নগরবাউল জেমস নামেই অধিক পরিচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার মতো এত গ্রহণযোগ্যতা আর কোনো শিল্পী পেয়েছেন কিনা জানা নেই। সঙ্গীতাঙ্গনে পা রাখার সময়ে প্রথমে 'ফিলিংস' নামে ব্যান্ড চালু করলেও পরবর্তী সময়ে 'নগর বাউল' প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। তার আগে অবশ্য বেশ কয়টি সাড়া জাগানো অ্যালবাম করেন ফিলিংস থেকে। এই ফিলিংস থেকেই বের করা অ্যালবাম 'নগর বাউল' নামেই হয় তার বর্তমান ব্যান্ডের নাম।

তবে এই নগর বাউলকে ঘিরে ভক্ত অঙ্গনে যে রকম ডামাডোল থাকতো সেটা অনেকটাই নম্র হয়ে আসছিল বেশ কয়েক বছর যাবত। নতুন গান আসছিলই না দীর্ঘ এক যুগ। মঞ্চেও উঠেন লম্বা বিরতি দিয়ে দিয়ে। মঞ্চে পেলে ভক্তরা অবশ্য এখনো সেই আগের উন্মাদনার মতোই সাড়া দেন। অস্বীকার করার উপায় নেই- এখনো দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত, জনপ্রিয় আর দামি মঞ্চ তারকা হিসেবে নিজের অবস্থান অটুট রেখেছেন জেমস। এখনো দেশ-বিদেশের সবচেয়ে দামি শো করেন তিনি। ভক্তদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে, মাঝখানে নতুন গান থেকে লম্বা ছুটি নিলেও গত বছর থেকে আবার নিয়মিত নতুন গান প্রকাশের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। তারই স্বাক্ষর হিসেবে টানা এক যুগ পর গত বছরের ২ মে'র চাঁদরাতে হাজির হন বসুন্ধরা ডিজিটাল ইউটিউব পস্ন্যাটফর্মের ব্যানারে নতুন গানচিত্র 'আই লাভ ইউ' নিয়ে। তার গান মানেই যেন ভক্তদের মাঝে নতুন এক উন্মাদনার খোরাক। এর আগে তিনি বসুন্ধরা ডিজিটাল ইউটিউব পস্ন্যাটফর্মের সঙ্গে একই বছরের ২৮ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই ব্যানারের অধীনে তার আগামীতে নতুন গাওয়ার জন্য। চুক্তি অনুযায়ী অবশ্য এতে গানের পূর্ণ স্বত্বাধিকার থাকবে বসুন্ধরা ডিজিটালের কাছেই। তারপরেও শিল্পীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তার গান নির্বাচনে। এখন থেকে এভাবেই ধাপে ধাপে এই ব্যানার থেকে নগর বাউলের বেশ কিছু গান গাওয়া হবে।

নগর বাউল ব্যবস্থাপক রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানান, আমাদের আগের কথা অনুযায়ী এরই মধ্যে তো আপনারা এবারের বসুন্ধরা ডিজিটালের প্রযোজনায় ঈদুল ফিতরের চাঁদরাতে তার 'সবই ভুল' শিরোনামের নতুন গান শুনালেনই। জেমস ও বিশু সিকদারের লেখা এই গানটিতে সুর করেছেন জেমস নিজেই। এরপর আবার আগামী ঈদের জন্য নতুন গান হবে। এজন্য এখন কাজ চলছে। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহের সোমবার (২৪ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে একটি কনসার্টের অনুষ্ঠান করে এসেছেন। এখানে তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ১৮টি গান করেন। এর মধ্যে আছে 'কবিতা', 'গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া', 'মা', 'সুলতানা বিবিয়ানা', 'দুষ্টু ছেলের দল', 'হিজিবিজি' প্রভৃতি। এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিতই স্টেজ শো করা হবে বলে জানালেন রুবাইয়াৎ ফেরদৌস।

এ দেশের একজন সৃষ্টিশীল ভোকাল জেমসের দায়িত্ব বসুন্ধরা ডিজিটাল নেয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় দীর্ঘ একটানা এক যুগ নীরবতার পর আবার নগর বাউলের কর্ম চাঞ্চল্য। শুধু নগর বাউলেরই কর্ম চাঞ্চল্যে ফেরেননি তার গানের অগণিত শ্রোতাদের মধ্যেও ফিরে এসেছে চাঞ্চল্য। যার প্রকাশ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ভালোই সাড়া মিলেছে 'সবই ভুল' শিরোনামের গানে। মানুষের কণ্ঠে কণ্ঠেও ফিরতে শুরু করেছে এই গানটি। জেমসের বদৌলতে বসুন্ধরা ডিজিটাল ইউটিউব চ্যানলটিও পেয়ে গেছে রাতারাতি দর্শক-শ্রোতা জনপ্রিয়তা।

দেশে-বিদেশে নিয়মিত গান করে যাচ্ছেন জেমস। সেইসঙ্গে চলচ্চিত্রে পেস্নব্যাকও করছেন তার মতো করে। একটি গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেছেন এই শিল্পী। বলিউডের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেও দেখা গেছে তাকে। তা হলে কী একযুগ যাবত তার অনুরাগীদের ক্ষুধা মিটছিল না। কেননা, এই দীর্ঘ ১২ বছর জেমস নতুন কোনো একক গান উপহার দিতে পারেননি। বারবারই ঘুরে ফিরে আসছিল তার সেই পুরনো জনপ্রিয় গানগুলো। কিন্তু জনপ্রিয় গানও যে বেশি বেশি গাইলে তিতাও হয়ে যায় এটা ভক্তরা ছাড়া আর কারা বুঝবে! এটাই ছিল জেমসের অনুরাগীদের আক্ষেপের কারণ। অনেকেই বলতেও শুরু করে দিয়েছিলেন জেমস ফিউজ। তার আর নতুন কিছু দেওয়ার নেই। কিন্তু শিল্পীরও ক্ষুধা যে কখনো মেটে না এটা যেন ভক্তদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল। জেমস ছিলেন এমন কোনো স্পন্সরের অপেক্ষায়। যারা তার শিল্পী সত্তাকে আবার জাগিয়ে তুলবে। বসুন্ধরা ডিজিটালই যেন আবার তার ভক্তদের জন্য সেই সুযোগ করে দিল। সেজন্য এই পস্ন্যাটফর্মটিও বিপুল প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কাজটি করল। নয় তো বারো বছর তো বারো বছরই; আরও কত বছর যে নতুন একক গানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো কে জানে। এমনিতেই জেমস যে রকম বোহেমিয়ান টাইপের তাকে কেউ জাগিয়ে না তুললে যেন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়েই থাকেন। প্রকৃত ক্রিয়েটিভরা তো এমনই নিজে নিজে সহজে জাগতে চান না; কেউ তাকে না জাগিয়ে তুললে। রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন জানালেন এখন থেকে ধাপে ধাপে একটা একটা করে নতুন গান করবেন জেমস। সেই কাজ শুরুও হয়ে গেছে। স্পষ্ট বোঝা গেল রবিনের কথায় একটা প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হয়ে গেছে পুরো জেমস পরিবারেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে