সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
অপ্রতিরোধ্য মিশা

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৪ মে ২০২৩, ০০:০০

অনেক বছরের ব্যবধানে আবারও একই ঈদে মুক্তি পেল ৮টি সিনেমা। এটা যেমন ছিল এবারের ঈদে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক সংবাদ, সেইসঙ্গে আরও একটি চিত্তাকর্ষক সংবাদ হয়তো অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে; সেটা হচ্ছে এক ঈদে একজন অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি সিনেমা মুক্তির দিক থেকে এবার আরও এগিয়ে থাকলেন এ দেশের সিনেমা জগতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক মিশা সওদাগর।

মিশার প্রকৃত নাম শাহিদ হাসান। তবে সিনেমায় আসার পর স্ত্রী মিতার নামের 'মি' এবং নিজের নামের 'শা' একসঙ্গে করে নিজেই নাম রাখেন মিশা। তার দাদার নাম থেকে সওদাগর টাইটেল নিয়ে নিজের পুরো নামকরণ করেন মিশা সওদাগর। এভাবেই শাহিদ হাসান মিশা সিনেমায় এসে মিশা সওদাগর হয়ে যান। আর যেভাবে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে এককভাবে ভিলেনের রাজত্ব করছেন সেখানে তিনি যেন দেশের বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমারও এক রূপকথার অপরিহার্য সওদাগর!

তিন দশকের ওপর ঢাকাই সিনেমাকে মাতিয়ে আসা মিশা যেন একটি ব্যবসাসফল হওয়া সিনেমার নীরব কান্ডারি। এবার ১০০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া 'লিডার : আমিই বাংলাদেশ' সিনেমায় রক্তাক্ত অবস্থায় করজোড়ে জনতার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে যেভাবে পোস্টারে ধরা দিয়েছেন মিশা সওদাগর এটা পথচারীদের কারোরই নজর এড়িয়ে যায়নি। হয়তো শাকিব খানের চাইতেও বেশি নজর কেড়েছে তার ওই ভঙ্গিটি। এভাবে এবারে মিশা সওদাগর আরও চারটি সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ছবিগুলোর মধ্যে আছে, মোহাম্মদ ইকবাল পরিচালিত 'কিল হিম', সাইফ চন্দন পরিচালিত 'লোকাল', সোলায়মান আলী লেবুর 'প্রেম প্রীতির বন্ধন' এবং সুমন ধর পরিচালিত 'শত্রম্ন'। অর্থাৎ এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ৮ সিনেমার ৫টিই মিশা সওদাগরের। তার মানে একটি উৎসবে মুক্তি পাওয়া ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সিনেমাই দখল করে আছেন মিশা সওদাগর। এ থেকেও বোঝা যায় ঈদের অ্যাকশন সিনেমার মধ্যে খল নায়ক হিসাবে তার চাহিদাও কতটা ব্যাপক। এবারের ঈদে যে কয়টি সিনেমা দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই মিশা সওদাগর আছেন। শুধু দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে এমন একটি সিনেমা জাজ-এর 'জ্বীন' সিনেমাটিতেই মিশা সওদাগর নেই। সেক্ষেত্রে একটি সিনেমা ব্যবসা করবে কি করবে না সেখানে মিশা সওদাগরের উপস্থিতিও একটা ফ্যাক্টর। এ জন্য ইতোমধ্যেই তাকে অনেকে সর্বকালের সর্বসেরা খলনায়ক হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন।

অথচ ছটকু আহমেদ পরিচালিত 'চেতনা' সিনেমার মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালে নায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল মিশা সওদাগরের। 'অমরসঙ্গী' সিনেমাতেও তিনি নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন, কিন্তু দু'টির একটিতেও ব্যবসায়িক সাফল্য পাননি।' এ নিয়ে কি তার মন খারাপ হয়নি কখনো? এমন প্রশ্নে মিশা সওদাগর বলেন, 'খুবই খারাপ লাগতো। ভেবেছিলাম আমাকে দিয়ে হয়তো হবে না। অথচ ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশই করেছিলাম নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যখন শুরুতেই নিজের পারফর্মেন্স দেখে হতাশ তখন কয়েকজন পরিচালক আমাকে ভিলেন হিসেবে অভিনয় করার পরামর্শ দেন।'

সেই পরামর্শেই সর্বপ্রথম তমিজ উদ্দিন রিজভীর 'আশা ভালোবাসা' সিনেমাতে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেন মিশা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ঢাকাই সিনেমায় তিনিই এমন এক শিল্পী যিনি ভিলেন হিসেবে নিজেকে বড়পর্দায় অপরিহার্য করে তুলেছেন। এক্ষেত্রে হুমায়ুন ফরীদিকে দেখেই নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহী হন বলে জানালেন মিশা সওদাগর। এ কারণে ফরীদিকে তিনি বলেন, তার 'আত্মিক ওস্তাদ' হিসেবেও স্বীকার করেন। মিশা সওদাগরের 'নায়ক' হিসেবে ব্যর্থ হওয়াটা ঢাকাই সিনেমার জন্য শাপে বরই হয়েছে বলতে হবে। নয়তো আজ ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিকে ভিলেনের সংকটে হিমশিম খেতে হতো।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখ কার্যক্রমে নির্বাচিত হওয়া মিশা সওদাগর আজ নিজেকে এমন এক মাইল ফলকে এনে দাঁড় করিয়েছেন যে, নায়ক হিসেবে যদি শাকিব খান ঈদের সিনেমার প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ান তো মিশা সওদাগর সেখানে গোটা উৎসবেরই প্রধান আকর্ষণ হয়ে বিরাজ করেন। যে কারণে একটি উৎসবে সিনেমার সংখ্যার হিসেবে সব নায়কদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন তিনি। একটি উৎসবেই যার এত সিনেমা সে হিসাবে বছর জুড়ে হওয়া এ পর্যন্ত তার কতটি সিনেমায় অভিনয় করা হয়েছে? কেউ বলেন আটশত সিনেমা করা হয়েছে আর কেউ বা বলেন, নয়শত সিনেমা কেউ বা বলেন, নয়শত সেই কবেই শুনেছি, হাজার পার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরাসরি মিশা সওদাগরকেই এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, 'এ পর্যন্ত কত সিনেমা করেছি আমি জানি না। আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে এখন আমার অভিনয়ের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বড় চাওয়া হচ্ছে, দেশের সিনেমা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসুক; শিল্পীর সংখ্যা বাড়ুক, সিনেমা হল ও চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ুক।'

কিন্তু বছরজুড়ে মুক্তি পাওয়া সিনেমার প্রায় ৭০ শতাংশই যদি মিশার দখলে থাকে সেখানে এ দেশে নতুন খল অভিনেতা কী করে তাতে জায়গা করে নিতে পারে? এমন প্রশ্নে মিশা সওদাগর বলেন, 'আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এখন ভিলেন সংকট চলছে সেটা আমি বলব না। আমাদের এখানে অনেক ভালো খল অভিনেতা আছেন। যেমন ডন, শিবা শানু আছেন, আবার নতুনদের মধ্যে তাসকিনসহ অনেকে আছেন। সবমিলিয়ে হয়তো তাদের সম্পূরক অভিনয় করা হচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে যিনি যে ধারাতেই অভিনয় করুন কেউ যদি তার নিজস্ব ধারায় নিজেকে অপরিহার্য করে তুলতে পারেন তখন তিনি সব ধারাতেই অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারবেন। সেজন্য তাকে ক্যাপাবল বা যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। আমার অভিনয়ে হয়তো খলচরিত্রের একটা ফ্লেভার থাকে সেজন্যই আমাকে সবাই ডাকেন। এই যে এখন আমাকে ওটিটি থেকেও ডাকছে সেটা তো আমার ওপর ভরসা আছে বলেই ডাকছে। আমার ওপর নির্ভর করতে পারেন বলেই তো আমাকে ডাকছে। সিনেমাতেও তাই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে