সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী সাইমন সাদিক

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

খ্যাতিমান পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর পরিচালনায় ২০১২ সালে 'জ্বি হুজুর' ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন সাইমন সাদিক। এর পরের বছরেই একই পরিচালকের 'পোড়ামন' সিনেমায় অভিনয় করে একটা বড়োসড়ো ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দেন প্রযোজককে। সেই থেকে ১০ বছর পেরিয়েছে তার ক্যারিয়ারের। করেছেন আরও বেশ কিছু সিনেমা। ২০১৮ সালে তিনি মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত 'জান্নাত' চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

সাইমন সাদিক বাকি আর আট/দশজন চিত্রনায়ক থেকে একদমই আলাদা। কাজ করেন ভেবেচিন্তে। ভালো গল্পের অভিনয়ের জায়গা আছে এমন চরিত্রগুলোতেই তাকে দেখা যায়। এবার ঈদে যে কয়টি সিনেমা মুক্তি পায় তার মধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা সাইমন সাদিক ও অপু বিশ্বাস অভিনীত 'লাল শাড়ি' ছিল শুটিংয়ের শুরু থেকেই আলোচনার হট কেক। ঈদে সাইমন সাদিকের উলেস্নখযোগ্য তেমন সিনেমা না থাকলেও প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের কাছে ইতোমধ্যে তিনি একটা ভরসার জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। সেই যে 'পোড়ামন' সিনেমা দিয়ে নিজেকে দর্শকের পছন্দের অভিনেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন আজও সেটা ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন। সেটা যাতে ধরে রাখা যায় সে রকম গল্প, চিত্রনাট্য বা পরিচালক, কলাকুশলীর টিম- সবকিছুর প্রতিই তার হিসাবনিকাশ থাকে পাকা জহুরির মতোই। সর্বশেষ যে ঈদের সিনেমায় তিনি তাঁত শ্রমিক হিসেবে রাজু চরিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন সেটা চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস প্রযোজিত এবং বন্ধন বিশ্বাস পরিচালিত 'লাল শাড়ি'। ছবিতে তাঁত শ্রমিকের মেয়ে হিসেবে শ্রাবণী চরিত্রে অভিনয় করা সাইমনের নায়িকাও অপু বিশ্বাস। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছে 'লাল শাড়ি'। এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধেন অপু বিশ্বাস ও সাইমন সাদিক। নতুন এই জুটিকে দর্শক কীভাবে গ্রহণ করে সেটাও ছিল দেখার বিষয়।

কিন্তু দেশে এমন একটা ধারণা ইতোমধ্যেই প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, সরকারি অনুদানের সিনেমায় দর্শক হয় না। তবে অপু বিশ্বাস হয়তো এস এ হক অলীক পরিচালিত এবং মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত শাকিব খানের 'গলুই' সিনেমাটি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকবেন যে, সরকারি অনুদানের সিনেমাও সুপারহিট ব্যবসা করতে পারে। যে কারণে অনুদানের টাকার সঙ্গে আরও যুক্ত করেছেন এই নায়িকা। ফলে সিনেমাটি নির্মাণে মোট এক কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ছবিটির নায়ক সাইমন সাদিক বলেন, 'অনুদানের টাকা নিয়ে 'নয়ছয়'-এর অভিযোগ পুরনো। তবে অপু বিশ্বাস সেটা করেননি। যে টাকা অনুদান পেয়েছেন, তারচেয়ে বেশি টাকা লগ্নি করে 'লাল শাড়ি' বানিয়েছেন। প্রাপ্ত অনুদানের টাকা বিনিয়োগ তো করেছেনই, সঙ্গে যোগ করে আরও লগ্নি করেছেন।'

'লাল শাড়ি. সিনেমাটির গল্প, লোকেশন নির্বাচনসহ নির্মাণ সবই ঠিক থাকলেও ছবিটি যেহেতু বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে সে রকম আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন না করায় প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা এর প্রদর্শনে আগ্রহী হননি। প্রত্যাশা করা হয়েছিল অন্তত দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে 'লাল শাড়ি'। তবে মাত্র ১১টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনীর সুযোগ পাওয়া 'লাল শাড়ি' দ্বিতীয় সপ্তাহে খুব দ্রম্নতই দর্শকের আড়াল হয়ে যাবে মনে করা হলেও সেটা হয়নি। আবার হলের সংখ্যা না কমলেও খুব বেশি বাড়েওনি। দর্শক চাহিদায় মাঝামাঝি অবস্থায় থাকা এই সিনেমাটি তারপরেও ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি আলোচিত সিনেমা হয়ে থাকবে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত জনজীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। বাংলার শাড়ি এক সময় দেশের বাইরেও সমাদৃত ছিল। সেই ঐতিহ্য অনেক আগে থেকেই বিলুপ্তির পথে আছে। কী কারণে বাংলার শাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনের গল্প এবং তাঁত ও জামদানির হারানো ঐতিহ্যের চিত্রে ফুটে ওঠা সিনেমাটি দেখার জন্য ভালো দর্শক হবে এটাই ছিল প্রত্যাশিত। কারণ 'লাল শাড়ি'তে বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেকে তুলে ধরার একটি অনবদ্য কারিগরি খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবিটি দর্শকের মাঝে কতখানি সাড়া পড়েছে এমন একটি প্রশ্নের জবাবে সাইমন বলেন, 'আমার তো মনে হয় বেশ ভালোই সাড়া পড়েছে। তার প্রমাণ ছবিটি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম সপ্তাহের চেয়ে বেশি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনী হওয়া। এবার ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমার সব কয়টিই ভালো হওয়ায় কেউ কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে পারছে না। সবগুলো ছবিই সমান প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সেদিক থেকে আমি অবশ্যই বলব, আমার 'লাল শাড়ি'ও দর্শক চাহিদা মিটিয়েছে। আমি মনে করি, দর্শক হতাশ হয়নি।'

এই অভিনেতা আরও বলেন, 'সবগুলো ছবিই সুন্দর। আমি চাই দর্শক শুধু বিশেষ একটি ছবি নয়; সবগুলো ছবিই হলে গিয়ে দেখুক, উপভোগ করুক। সবাইর কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন ছবিগুলো দেখে তারপর সমালোচনা করেন। এবার ঈদের সবগুলো ছবিই দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে। কারণ ছোটপর্দার আফরান নিশোর বড়পর্দায় অভিষেক, এদিকে শাকিব ভাইয়ের প্রিয়তমা, নিরবের ক্যাসিনো ও মাহফুজ আহমেদ ভাইয়ের 'প্রহেলিকা'- সবগুলো ছবিই বেশ ভালো হয়েছে। আমি নিজেও আমার ছবির পাশাপাশি সবগুলো ছবিই হলে গিয়ে দেখার চেষ্টা করব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে