সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরীর স্বপ্নের রাজ্য

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

একজন সত্যিকারের নায়িকা হওয়ার জন্য যতগুলো বাহ্যিক গুণ থাকা জরুরি, তার সবই আছে পরীমনির। নামের মতো অপরূপ সুন্দরী তিনি। অনেক আনন্দময় স্মৃতির মতোই ঝলমলে ছিল পরীর শৈশব। সেই ঝলমলে রূপ নিয়েই পরী এক অজপাড়া গাঁ থেকে পা রেখেছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরে। স্বপ্ন পূরণও হয় অচিরেই। যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এরকম একে একে অনেক নামকরা পরিচালকের সিনেমা আসছিল তার হাতে।

ঢাকাই বাংলা সিনেমা এর আগে এমন রূপবতী মেয়ে দেখেছে কিনা সন্দেহ। সিনেমার পরিচালক-নির্মাতারাও একে একে এক তোড়া সুগন্ধি ফুলের ডালির সঙ্গে নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসছিলেন পরীর জন্য। অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা ত্রিশেক সিনেমায় অভিনয় করেন পরী। সামনে পড়েছিল আরও অনেক হীরক উজ্জ্বল সোনাকাঞ্চন মাখানো ভবিষ্যৎ তার।

তবে সহসাই সংসারের কোনো এক পাঁকে জড়িয়ে সেই পরীর ভবিষ্যৎ যেন কোনো হুমকির মুখে পড়ে। দাবায় 'বোরে'র 'উঠ কিশতি'র মতোই যেন স্থবির হয়ে পড়েছে তার জীবন। বোর সরালেই কিশতি যায় আবার বোর না সরিয়ে উপায়ও নেই। তখনই কিশতি মাত। বিয়ে করলেন। কোল জুড়ে 'রাজ্য' এলো- হাসিখুশি সবই এলো। কিন্তু এর অত্যল্প সময়ের ফাঁকেই আবার কী যেন চলেও যাচ্ছিল টেরই পেলেন না। নিমেষেই মোহভঙ্গ হলো পরীর প্রতি রাজের। কথায় বলে নারীর দুই নয়নের সঙ্গে নাকি তৃতীয় নয়নও থাকে। বুঝতে পারলেন রাজের মতিগতি পরী। মিডিয়ায়ও আসছিল এ নিয়ে তাদের সংসারের ভাঙন ঘটছে এরকম উড়ো খবর। হঠাৎ করেই যেন একের পর এক ঝড় বইতে শুরু করল পরীর জীবনে। সেই যে উত্তরা ক্লাব থেকে শুরু তারপরে সংসারের ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে এখন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ঝুলছেন। এমন অবস্থায় একজন নারী স্বাভাবিক থাকেন কী করে? এমন এক প্রশ্নে পরীও বলেন, 'খালিচোখে স্বাভাবিক দেখা যায় হয়তো, কিন্তু মানসিক ট্রমা তো থেকেই যায়...'

এই ভাঙনের মুখে ডিভোর্স নিয়েও পরী সাফ-সাফ বলে দেন 'ডিভোর্স' তিনি দেবেন না- রাজকেই দিতে হবে। ওদিকে রাজও নিজ থেকে পরীকে 'ডিভোর্স' দিতে চাইছেন না। এভাবেই কি থাকবে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো তাদের বৈবাহিক জীবন!

এমন জীবনের জন্য কি কখনো প্রস্তুত ছিলেন পরী! পরী নিজেও ক্রন্দনস্বরে বলেন, 'আমি তো এই দিনগুলোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না!' হাসপাতালে শিশু 'রাজ্য'; হাতে ক্যানোলা পরানো হয়েছে ছোট শিশুকে। মায়ের মন কাঁদলেও শক্ত থাকতে হবে, আর তাই একাই ছেলেকে বুকে নিয়ে পাড়ি দিতে হবে কঠিন সময়। এখন মরুভূমির মতই যেন ধু-ধু করছে 'রাজ্য'জুড়ে তার অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তাই শুধু। কী কুক্ষণে তার উজ্জ্বল চলচ্চিত্র জীবন আরও নিষ্কণ্টক না করেই কার সঙ্গে যেন সংসার জীবনে জড়িয়ে ফেলেছিলেন! বুঝতেও সময় নেননি। পূর্ব পরিচয়ও ছিল না। এক 'গুণীন' সিনেমা দিয়ে পরিচয়। আর তাতেই দাবার কিশতি মাতের মতো কুপোকাত! সেই কিশতি কিশতি ভালোবাসাই যেন পরীর জন্য এভাবে এখন 'হরিষে বিষাদ'ই হয়ে উঠল!

সেটাও হয়তো হতো না যদি না নিগূঢ় বিশ্ব প্রকৃতি নারীর ভেতরে 'মাতৃত্ব'কে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ধরিয়ে না দিত। যে অন্তর্গত নিগূঢ় সৌন্দর্যের কারণে প্রেমকেও বর্জন করা যায় কিন্তু 'মাতৃত্ব'কে কখনোই বর্জন করা যায় না। পরী গ্রামে বড় না হয়ে যদি এই নির্মম পাথুরে ঢাকা শহরে জন্ম নিতেন তাহলে হয়তো আরও অনেক মেয়ের মতো এমন প্রেক্ষাপটে পাথুরে কঠিনই হতো তার কাদামাটির মতো নরোম মন- এ নিয়ে কোনোই ধার ধারতেন না। কিন্তু পরীর অন্তর জুড়ে যে জড়িয়ে আছে এখনো সেই শৈশবের গ্রামীণ সৌন্দর্যও! সহজ সরল গ্রাম থেকে আসা বলেই পরীর মনটিও সহসাই পাথুরে কঠিন শহুরে হয়ে যায়নি। এই শহুরে হয়ে যায়নি বলেই তার ভেতরে যেমন গ্রামীণ মাতৃত্বমায়া অটুট থেকে গেছে তেমনি গ্রামীণ স্ত্রীত্বও অটুঁট থেকে গেছে। গ্রামীণ মেয়ে যেমন তার স্বামীকে কোনো পরনারীর সঙ্গে হাসতে দেখলেও তার ভেতরটা অজানা আশঙ্কায় মোচড়ে ওঠে- পরীর স্ত্রীত্বও নিশ্চয় তার মাতৃত্বসুলভতার মতোই অকৃত্রিম!

আসলেই পরীর গোটা অন্তর জুড়ে এখনো এক ছিমছাম অপরূপ গ্রামীণ সৌন্দর্যই বিরাজ করছে। সেই সৌন্দর্য বিরাজ করছে বলেই না কোলের 'রাজ্য'কে নিয়ে কিছুদিন আগে নিজের সেই গ্রামেও ঘুরে এসেছেন পরী। যে অপার সৌন্দর্যের কারণেই আবার দাম্পত্যজীবন এক ঝটকায় ভাঙতেও পারছেন না। পরী বলেন, ডিভোর্স যদি দিতেই হয় তো রাজই তাকে ডিভোর্স দিক! নিজে থেকে দিতে চাইবেন কী করে- সেখানে যে পরীর কোলজুড়ে থাকা এক 'রাজ্য' সব অঘটনের 'রক্ষাবু্যহ' হয়ে 'প্রতিরোধ' গড়ে তোলে! এই 'প্রতিরোধ' যতটা না নিষ্পাপ শিশু 'রাজ্য' থেকে তার চেয়ে বেশি পরীর মাতৃত্বেরই প্রতিরোধ। এমন দুর্মর আবেগমথিত মন পরীকে কতদূর নিয়ে যাবে? স্বপ্নের মতো অভিষেক হওয়া নিজের ক্যারিয়ারকে স্থবির করে 'রাজ্য'র রাজত্বকে নিরাপদ করার দিকেই মনযোগ দেয়া হবে পরীর আগামী দিনের ক্যারিয়ারে! পরী বলেছেন, দুটোই একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে