রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন চমক সায়মা স্মৃতি

তারার মেলা রিপোর্ট
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

একটি সিনেমার নায়িকা হতে হলে সবাইকেই 'অভিষেক সিনেমা'র মধ্য দিয়েই আসতে হয়। যারা টিকে যান তারাই পরবর্তী সময়ে নিয়মিত নায়িকা হিসেবে কাজ করে যান। এভাবেই সেই ষাট দশক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শত শত নতুন নায়িকা আসা-যাওয়া করেছেন ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে নতুন নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটেছে নব্বই দশক থেকে শুরু করে চলতি দশক পর্যন্তই সবচেয়ে বেশি। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নায়িকা হিসেবে সর্বশেষ যুক্ত হলেন সায়মা স্মৃতি।

এটাই ছিল চলতি বছরে সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় চমক। সম্প্রতি আরিফুর জামান আরিফ পরিচারিত 'যন্ত্রণা' সিনেমা মুক্তি পায়। এই ছবিটির মধ্য দিয়ে নবাগত অভিনেত্রী সায়মা স্মৃতির অভিষেক ঘটে। নির্মাণের সময়ে এ সিনেমাটির নাম ছিল 'অগ্নিশিখা'। পরে নাম পরিবর্তন করে 'যন্ত্রণা' রাখা হয়। ১০ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া এ ছবিটির মুখ্য চরিত্র আদর আজাদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সায়মা স্মৃতি। অভিষিক্ত প্রথম সিনেমা দিয়েই সিনে সমালোকচদের নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এই গস্নামার কন্যা। বেশ প্রশংসা পেয়েছেন দর্শকের কাছ থেকেও।

তবে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগমুহূর্তে এ নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন বলে জানালের সায়মা স্মৃতি। বলেন, 'বলা যায়, পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষার মতো একটা সময় পার করেছি সেই সময়টা। তবে এরপর খুবই ভালো লাগতে শুরু করে যখন দেখি দর্শক আমাকে খুব পছন্দ করছে। একইসঙ্গে আমার চরিত্রটিকে পছন্দ করেছেন।'

বর্তমানে আরও কয়টি সিনেমা নিয়ে মুক্তির প্রহর গুণছেন সায়মা স্মৃতি। এই সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে এইচ আর হাবিবের 'জল কিরণ', অপূর্ব রানার 'জলরং' এবং আবু সাঈদের 'সংযোগ'। এর মধ্যে 'জলরং' ছবিটি সরকারি অনুদানের সিনেমা। আর 'জল কিরণ' সায়েন্স ফিকশন ধর্মী সিনেমা। সবার কাজই কমপিস্নট। এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে।

সায়মা স্মৃতি এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছেন এর সবই অবশ্য বড় বাজেটের কোনো সিনেমা নয়। কম বাজেটের সিনেমা এবং এর কোনোটিই বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা নয়। যে ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে তারকা খ্যাতি পাওয়াও খুব কঠিন। তার ওপর দেশে এখন বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমাও কম হচ্ছে। সামাজিক, ফ্যামিলি ড্রামা আর রোমান্টিক সিনেমাতে এমনিতেই এখন দর্শক কম হচ্ছে। এমনকি বাণিজ্যিক ঘরনার সিনেমাতেও দর্শক হচ্ছে না। এমনই দর্শকশূন্য পরিস্থিতিতে কেন সিনেমার পর্দায় পা রাখলেন এমন প্রশ্নে নবাগত এই অভিনেত্রী বলেন, 'আমি আসলে সম্পূর্ণই আশাবাদী। মানুষ তার স্বপ্ন নিয়েই সিনেমাতে কাজ করে। সিনেমা মানেই তো একটা সমুদ্র। এখানে কাজ করেই দর্শকের ভালোবাসা পেতে চাই। দর্শকের ভালোবাসা নিয়েই আমি চাই আগামী জীবনের যে গতিপথ, সেগুলো সুন্দর হোক, সাবলীল হোক। আশাবাদী স্বপ্ন নিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে। তা ছাড়া এখন তো সিনেমার বাজার অনেকটা উন্নতির দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। নতুন সিনেমাগুলোও ভালো হচ্ছে। আমি আশাবাদী আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।'

সায়মা স্মৃতি চাঁদপুরের মেয়ে হলেও জন্ম ঢাকায় এবং পড়াশোনা ঢাকাতেই। সুতরাং, তার জীবনধারা গড়ে উঠেছে নাগরিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই। সায়মা জানান, তার পছন্দ নারী প্রধান গল্প। নারী কেন্দ্রিক গল্পের চরিত্রগুলোতেই আমার কাজ করার খুব ইচ্ছে। অবশ্য নির্মাতারা তো আর আমার পছন্দ মতো ছবি নির্মাণ করবেন না। তারা যেভাবে চান সেভাবেই আমাকে অভিনয় করতে হবে।' সায়মা বলেন, 'আমি যে তিনটি ছবিতে কাজ করেছি, সে তিনটি তিন ধরনের ছবি। জলরং একটি গল্পের ছবি। এখানে চরিত্র কোনো বিষয় নয়। জীবন সংগ্রামের কথাই এই গল্পের উপজীব্য। এভাবে সব ছবিই কোনো না কোনো কারণে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। ভিন্ন স্বাদের সিনেমার প্রতিটির গল্পেই একটা নতুনত্ব আছে। আশা করি, পর্দায় সবার ভালো লাগবে।'

কার অভিনয় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে, এমন কথায় সায়মা স্মৃতি জানান, শাবনূর এবং মৌসুমীই তার অনুপ্রেরণা। নিজের অভিনয়ের জন্য এ দুজনকে তার আইডল মনে করেন।

সায়মা স্মৃতি জানান, 'নতুন আরো দু'তিনটি ছবির কথা চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধও হয়েছি। দেশের সবচেয়ে বড় ডিরেক্টর কাজী হায়াতের 'লাট সাহেব' সিনেমায় আমাকে দেখা যাবে।'

অর্থাৎ কাজী হায়াতের এই সিনেমাটির মধ্য দিয়েই সায়মা স্মৃতিকে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় দেখা যাবে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই এই বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় কেন? এমন প্রশ্নে সায়মা জানান, 'আসলে বাণিজ্যিক সিনেমার প্রতিই আমার আগ্রহ কিছুটা বেশি। কারণ, আমাদের দেশে বাণিজ্যিক সিনেমাতেই দর্শক বেশি দেখা যায়। তবে তার মানে এই না যে, আমি অন্য ধরনের সিনেমায় অভিনয় করব না। আমি আসলে গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলে সব ধরনের সিনেমাতেই কাজ করতে আগ্রহী।'

সায়মা স্মৃতি আরও বলেন, 'চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার হলো ইলাস্টিকের মতো। ইলাস্টিক টানলে যেমন লম্বা হয়, ক্যারিয়ার বাড়াতেও তেমনি লেগে থাকতে হয়।'

শোবিজে সায়মা স্মৃতির শুরুটা হয় টিভিসি দিয়েই। ২০১৮ সালে অমিতাভ রেজার তৈরি একটা বিজ্ঞাপনে প্রথম কাজ করেন তিনি।

প্রথম বিজ্ঞাপনেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন সায়মা। এরপর অনম বিশ্বাস এবং নুহাস হুমায়ূনের সঙ্গেও বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। এরপর বিজ্ঞাপন থেকে ছোটপর্দায় নাম লেখান। তবে এখন তাকে আর ছোটপর্দায় দেখা না যাওয়াতে জানতে চাওয়া হয় তিনি কি তবে ছোটপর্দায় আর কাজ করছেন না? জবাবে সায়মা স্মৃতি জানান, 'এখন আমি নিজেকে সিনেমাতেই পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেছি। গল্প ও চরিত্র ভালো হলে ওটিটি পস্ন্যাটফর্মেও কাজ করতে আগ্রহী আমি। তবে নাটকে আর নয়। এর মধ্যে অবশ্য সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে রাখব সিনেমাকেই আমি। কারণ দর্শকের কাছে ফোকাসটা এখানেই সবচেয়ে বেশি হয়।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে