বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ডায়রিয়ার প্রকোপ

রোগী সামলাতে প্রস্তুত সরকারি হাসপাতাল

অন্য হাসপাতালে যাওয়ার অনুরোধ আইসিডিডিআর,বির
লাইজুল ইসলাম
  ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
আপডেট  : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯:১৬

রাজধানীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ ও আইসিডিডিআর,বি রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ডায়রিয়া রোগীদের সামাল দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এজন্য পর্যাপ্ত ওষুধ ও ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। সারাদেশের সব হাসপাতালকে চিঠিও দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন প্রায় এক হাজার তিনশর মতো রোগী। সক্ষমতার বাইরে গিয়ে প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতালটি। এই অবস্থায় অন্য হাসপাতালে রোগীদের যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। একই হাসপাতালের ওপর এত চাপ পড়লে পরে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। গত এক মাসে রাজধানীর আইসিডিডিআর,বিতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী। এই রোগীদের বেশিরভাগ এসেছেন ঢাকার মোহম্মদপুর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মিরপুরসহ অন্য এলাকা থেকে। যারা রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক। আর ২০ থেকে ২৫ ভাগ শিশু চিকিৎসা নিয়েছেন। এত রোগী গত দুই বছর হাসপাতালটিতে না হওয়ায় এবার রোগী সামলাতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া কেউ মারা গেছে এমন কিছু এখনো জানা যায়নি। তবে অসমর্থিত সূত্র বলছে, মার্চের ১৬ তারিখ থেকে এপ্রিলের ১১ তারিখ পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন। যদিও এরা কেউ হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিল না। মারা যাওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান বাহারুল আলম বলেন, আমরা রোগী সামলে নিচ্ছি। এখন আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এভাবেই যদি রোগী বাড়তে থাকে আর আমাদের কাজ করতে হয় তবে রোগী সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আমরা বলব দেশের অন্য ও রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোয় যাতে রোগীরা যায়। সেখানেও রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের সাধারণ সময়ের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের নিয়ে আসা হয়েছে সম্মানীর ভিত্তিতে। এমনকি আইসিডিডিআর,বির অন্য বিভাগ থেকেও চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিয়ে আসা হয়েছে। তারপরও রোগীদের সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালগুলো তাদের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসাও দেওয়া শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি হাসাপাতালগুলোয় রোগী তেমন ভর্তি নেই। তবে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। হাসপাতালগুলোর পরিচালকরা বলছেন, তাদের হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখনো তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। শিশু রোগী তেমন নেই। যাও আসছে তা ভর্তি করার পর্যায়ের না। আমরা সাময়িক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি।' তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে শিশু নিউট্রিশন ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে বলেছি। তারা যাতে ডায়রিয়ার প্রটোকল প্রস্তুত করে রাখে এটাও বলে রাখা হয়েছে। যদি ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পায় তবে যাতে আমরা দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। হাসপাতালের ভেতরে সব ওয়ার্ডেই আমরা শিশু রোগীকে রাখার ব্যবস্থা করছি।' শিশু হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, 'আমরা হাসপাতালের ভেতরে রোগীদের রাখতে না পারলে বাইরে প্যান্ডেল টাঙিয়ে সেব দেব। ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাওয়ার পর আমরা যা করেছিলাম তা করব। এ অবস্থায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। সাধারণ রোগীরা চাইলে আমাদের এখানে আসতে পারে ও সেবা নিতে পারেন।' স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ-উন নবী বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে এখনো তেমন রোগী আসেনি। মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ড প্রস্তুত আছে। বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে ৭ জন ভর্তি আছে। আর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৩৬ জন। এই ধরনের রোগী সাধারণ সময়ের মতোই। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।' তিনি বলেন, 'আমরা ডায়রিয়া রোগীর জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শয্যা বৃদ্ধি করেছি। শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে বেশি বৃদ্ধি করেছি। এখন পর্যন্ত যেসব রোগী এসেছেন তাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক রোগী বেশি। শিশু রোগী অনেকটাই কম।' স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল পরিচালক ডা. ফরিদ মিয়া বলেন, 'আমরা দেশের সব সরকারি হাসপাতাল বরাবর চিঠি দিয়েছি। তাদের তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তারা দ্রম্নত সময়ের মধ্যে এগুলো নিশ্চিত করবে ও প্রতিদিন আমাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাবে।' তিনি বলেন, প্রথমত সব হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর জন্য সিট বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত প্রতিদিন কি পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে তা জানাতে বলা হয়েছে। তৃতীয়ত ওষুধ কি পরিমাণ মজুদ আছে তা জানাতে বলা হয়েছে। যদি কোনো হাসপাতালের ওষধু মজুদ না থাকে আমাদের জানালে তা আমরা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে এখনো কেউ এমন কোনো বিষয় জানায়নি। আর প্রতিদিন রোগীর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরকারি হাসপাতালগুলো একটি রিপোর্ট দিচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের আমরা কোনো নির্দেশনা দেইনি। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে তাহালে তাদের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে