বিশ্বব্যাপী নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব থাকলেও বাংলাদেশে এই রোগেয় চিত্র ভয়াবহ। কারণ, দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এই রোগে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ দিনে প্রায় ৬৮ শিশুর মৃত্যু হয় এই রোগে।
নিউমোনিয়াকে দেশের শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশে অপুষ্টি, মারাত্মক সংক্রমণ, নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কর, অপরিণত জন্ম, জন্ডিস, জন্মকালে আঘাত, জন্মকালে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় অনেক শিশু মারা যায়। সবচেয়ে বেশি মারা যায় নিউমোনিয়ায়। প্রায় ১৮ শতাংশ শিশু মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়ায়। তবে এই রোগটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ বলেও জানান তারা।
এদিকে ২০২২ সালে সারা বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫০ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এর ১৪ শতাংশ ছিল নিউমোনিয়ায় মৃত্যু। একই সময় বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রায় এক লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার বা ২৪ শতাংশ ছিল নিউমোনিয়ায় মৃত্যু। এতে দেখা যাচ্ছে, নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর বৈশ্বিক হারের চেয়েও বাংলাদেশে মৃত্যুহার বেশি।
এমন বাস্তবতায় আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বির সম্মেলনকক্ষে দেশের নিউমোনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানিরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান ও বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়ার কারণ। এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসের রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়, রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে নিউমোনিয়ার রোগী ভালো হয় না। রোগীকে দিতে হয় পর্যাপ্ত অক্সিজেন।’
যে কোনো বয়সের মানুষের নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি জানিয়ে আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘পাঁচ বছরের কম বয়সির ঝুঁকি বেশি, এর চেয়ে বেশি ঝুঁকি এক বছরের কম বয়সি শিশুর, এর চেয়ে বেশি ঝুঁকি নবজাতকের।’
আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানি মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, অপুষ্টি, ‘অপরিণত শিশুর জন্ম, ঘরের মধ্যে বায়ুদূষণ, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময় শনাক্ত করতে না পারায় এগুলো নিউমোনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।’
এ ছাড়াও যেসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে নিউমোনিয়া হয়, সেগুলো প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। যা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
সমাধান ও করণীয় মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, ‘ঘরের ভেতরের বায়ুর মান উন্নত করে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু অর্ধেক করা যায়, হাত ধোয়ার অভ্যাস ২১ শতাংশ মৃত্যু কমায়, জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশু শুধু মায়ের দুধ খেলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু ১৫ শতাংশ কমে। দেখা যায়, শয্যার অভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা যায় না। আবার অনেক মা শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে থাকতেও পারেন না। এ সমস্যা সমাধানে হাসপাতালে ‘দিবা যত্ন কেন্দ্র’ সমাধান হতে পারে বলে আইসিডিডিআর,বি মনে করছে। এ নিয়ে সীমিতসংখ্যক হাসপাতালে গবেষণা করে সুফল পাওয়া গেছে।’
যাযাদি/ এস