শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেবে পাকিস্তান

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জুন ২০২৩, ১২:১২
পাকিস্তানের জন্মের আগেই ১৯৪০ এর দশকে রাখাইন থেকে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা সেখানে আশ্রয় নেয়। দুই দশক পর বহু রোহিঙ্গা সৌদি পাড়ি দেন। ছবি: পাকিস্তানের রোহিঙ্গা কলোনি- আনাদুলু এজেন্সি

সাবেক বার্মা ও বর্তমান মিয়ানমার প্রায় ১০০ বছর ধরে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এর ফলে অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভারত-পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের জন্মের আগেই অনেক রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করে।

জানা যায়, ১৯৪২ সালে রাখাইনে প্রথম সেনা অভিযানে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার পর প্রথম দেশত্যাগ করতে থাকেন তারা। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আশ্র নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা।

পাকিস্তান ও সৌদি আরব প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাকিস্তানি পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের বিষয়ে আলোচনা করছে। এই বিষয়ের আলোচনার এক বছরের বেশি সময় ধরে থমকে আছে। সৌদি আরবে এখন প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাস করছেন।

টিআরটির খবরে বলা হয়েছে, গত মাসে সৌদি উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসির বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদ ইসলামাবাদ সফর করেন। সেই সময়ে এ বিষয়ে অনুরোধ করে সৌদি আরব। তারপরই এই আলোচনা হচ্ছে।

আনাদোলু এজেন্সিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাদির ইয়ার টিওয়ানা নিশ্চিত করেছেন যে, উভয় পক্ষ পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণ নিয়ে আলোচনা করছে এবং বিষয়টি দেখার জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রিয়াদে পাকিস্তানের দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন যে, সৌদি কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিগগিরই একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি; তবে, এটি শিগগিরই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'

ওই কর্মকর্তা বলেন, ১৯৬০ এর দশকে যখন এই রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে চলে গিয়েছিল, তখন একটি বোঝাপড়া হয়েছিল যে রিয়াদ শেষ পর্যন্ত তাদের নাগরিকত্ব দেবে। সেই কারণেই পাকিস্তান (যারা তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করে চলেছে) ২০১২ সালে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়।'

তিনি বলেন, অনেক রোহিঙ্গা সৌদি নারীদের বিয়ে করেছে। তবে স্থানীয় আইন অনুযায়ী তাদের সন্তানদের সৌদি নাগরিক হিসেবে গণ্য করা যাবে না।সৌদি বা পাকিস্তানি পাসপোর্ট না থাকায় এই শিশুরা রাষ্ট্রহীন।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জেহরা বালোচের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা নূর হোসেন আরাকানির মতে, ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানের পাসপোর্টে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর করাচি হয়ে রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে যেতে শুরু করে। তার শ্বশুর ও ভাইও সৌদি আরবে থাকেন।

করাচিতে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাস করেন। বেসরকারী অনুমান অনুসারে, এটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা।

খবরে বলা হয়েছে, তারা ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের জন্মের আগে থেকেই এই অঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করে। ১৯৪২ সালে রাখাইনে প্রথম সেনা অভিযানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার পর প্রথম দেশত্যাগ করতে থাকেন তারা।

অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ হয়ে ভারত এবং তারপর দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রার পর ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে বাসস্থান গড়ে তোলে। তারপর পাকিস্তানের সীমান্তে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কোন গণ অভিবাসন হয়নি।

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান (যিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছিলেন) ১৯৬২ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জমি বরাদ্দ দেন। করাচির পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে বার্মা কলোনি এবং সাবেক রাখাইন রাজ্য আরকানাবাদ নামে দুটি বসতি স্থাপন করেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে