শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ইমরান খান তার দোষী সাব্যস্তের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১৯
ইমরান খান তার দোষী সাব্যস্তের জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইমরান খান তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ক্ষমার জন্য কোনো পক্ষের অনুরোধ বিবেচনা না করার জন্য রাষ্ট্রপতি ড. আরিফ আলভিকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন দলের মুখপাত্র রওফ হাসান।

মঙ্গলবার দ্যা নিউজ ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সোমবার দ্য নিউজের সাথে আলাপকালে পিটিআইয়ের এই মুখপাত্র বলেন যে- রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে যেকোনো আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো সাজা ক্ষমা করার।

রওফ হাসান বলেন, এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ইমরান খানের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।

পিটিআইয়ের এই মুখপাত্র বলেন, সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান খান রাষ্ট্রপতির কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন যেন কোনোভাবেই তা না হয়।

হাসান বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমন ক্ষমা কখনোই মেনে নেবেন না। তিনি বলেন, যেকোনো আসামিকে ক্ষমা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। সেখানে অন্য কিছুর প্রভাব যেন না পড়ে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে পাকিস্তানের সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, প্রত্যাহার এবং অবকাশ প্রদানের এবং আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা কমানোর ক্ষমতা থাকবে।’

এদিকে তোশাখানা মাশলায় জেল হাজতে আছেন ইমরান খান।

উল্লেখ্য, তোশাখানা বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন জানা যায়- ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে বিদেশী বিশিষ্টজনদের দেয়া বিভিন্ন উপহার কিনে পরে সেগুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তখন ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের বিস্তারিত জানাতে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথমে অনীহা প্রকাশ করেছিল; এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে দাবি করেছিল তারা। ১৯৭০ -এর দশকে পাকিস্তানের সরকারি একটি বিভাগ হিসেবে তোশাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ বিভাগটি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্টজনদের দেয়া উপহার জমা রাখে।

তোশাখানার নিয়মানুযায়ী, সরকারব্যবস্থায় থাকা সব ব্যক্তিতে তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এই বিভাগে জমা দিতে হবে। তবে যারা এসব উপহার পেয়েছেন তারা পরে এগুলো কিনে নিতে পারবেন। কিনে নেয়ার পর এসব উপহার বিক্রির বিষয়টি অবৈধ না হলেও অনেকেই এটিকে অনৈতিক বা নীতিগতভাবে ভুল বলে মনে করেন। ইমরানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের করা হয় তাতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জিনিসের ৫৮টি বাক্স উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন।

অভিযোগ দায়েরকারী পিএমএল-এনের মহসিন রানঝা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী প্রতিটি অর্থবছরের শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সব সম্পদ কমিশনের কাছে জমা দেয়া বিবরণীতে ঘোষণা করার কথা। কিন্তু তা না করায় ইমরান খানকে ‘অসৎ’ ঘোষণা করে পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণার আর্জি জানানো হয়েছিল।

তোশাখানা থেকে কেনা উপহারের বিষয়টি ইমরান ‘ভেবেচিন্তে’ লুকিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে; কিন্তু পরে ইমরান কমিশনকে বিস্তারিত না জানিয়ে শুধু স্বীকার করেন, সেগুলো তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং পিএলএম-এন প্রধান নওয়াজ শরিফকে ‘অসৎ’ বলে ঘোষণা করে, এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি এবং তাকে আজীবন সংসদীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়। তোশাখানার উপহার নিয়ে ইমরান মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন অভিযোগে গত বছর পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন-ইসিপি সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) ধারা অনুযায়ী তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বচানে অযোগ্য ঘোষণা করে; যা নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন পিটিআই নেতাকর্মীরা।

এ মামলাই দেশের গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড শুনিয়েছেন বিশেষ পাকিস্তানি আদালত। ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার হাত থেকে বেহাত হয়েছে দেশের গোপন তথ্য সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ‘তার’ বা চিঠি।

২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত হন ইমরান। তার পরে ২০২৩ সালের ৫ অগস্ট তাকে কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদ কোর্ট। তোশাখানা মামলায় তিন বছরের জেলের সাজা দেয়া হয়েছিল ইমরানকে। অ্যাটাক ডিসট্রিক্ট জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। এর পরে গত বছর ডিসেম্বরেই পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইমরান এবং কুরেশিকে জামিন দিয়েছিল। তবে জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্য মামলাগুলোর জন্য জেলেই ছিলেন ইমরান।

সূত্র : দ্যা নিউজ ইন্টারন্যাশনাল

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে