শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২
কুমিল্লায় মা ও দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা

আটক হয়নি কেউ, আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য

স্টাফ রিপোর্টার কুমিল্লা/ মুরাদনগর প্রতিনিধি
  ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৬
আপডেট  : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:১১
আটক হয়নি কেউ, আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য
আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে মা ও দুই সন্তানকে হত্যার পর এলাকা অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহ শুক্রবার রাতে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নিহতদের বাড়ির পাশের একটি কবরস্থানে পুলিশের উপস্থিতিতে মরদেহ দাফন করা হয়। এদিকে ঘটনার পর থেকে নিহতদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কড়ইবাড়ী গ্রামে একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে হামলা করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। ওই গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে মো. রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি আক্তারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুবির ছেলে নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার।

তিনি বলেন, ‘একটি মোবাইল চুরির ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়। বুধবার রাতে বাছির নামে এক যুবক আমার স্বামীকে ফোন করে সকালে পুরো পরিবারকে হত্যা করে ফেলার হুমকি দেয়। তিনজন পরিকল্পিত হত্যার শিকার।’

গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনার দিন সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে নিহতদের পরিবারের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনাকে মারধর বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে জড়ো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতদের বাড়িতে পুলিশের পাহারা ছিল। বাড়ির তিনটি আবাসিক ভবন তালাবদ্ধ। বাইরে পাহারায় ছিল পুলিশ।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ একাধিক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার ওই বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। তারা আরও জানান, নিহতদের কবর খুঁড়তে পুলিশকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে। এ অবস্থায় অন্য এলাকা থেকে লোক এনে কবর খুঁড়তে হয়েছে। এর পর মরদেহ রাতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। এ সময় থানা পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শারমীন সুলতানা জানান, দুপুর ১২টার দিকে তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু করা হয়। বিকেলে সেগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিহতদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার শুক্রবার রাতে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে