বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচন : ভারতে প্রথম দফার ভোট শুরু

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১০
ছবি-সংগৃহিত

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ১৮তম সংসদীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আগামী পহেলা জুন পর্যন্ত মোট সাতটি ধাপে লোকসভার ৫৪৩টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দেশটির নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯৬ কোটি, এর মধ্যে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সি এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার; তারাই বেছে নেবেন লোকসভা আসন থেকে কারা পার্লামেন্টে যাবেন।

আজ থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার আসনের নির্বাচন হচ্ছে আজ। আর গোটা দেশের ২৮টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে একই দিন নির্বাচন হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনে।

রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো হলোÑ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু, সিকিম, রাজস্থান, পদুচেরি, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্রিশগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া, বিজেপির নিশীথ প্রামাণিক, কংগ্রেসের পিয়া রায় চৌধুরী এবং বামফ্রন্টের শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়। রয়েছে অন্য ছোটখাটো দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।

জলপাইগুড়ি আসনে তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায়, বিজেপির জয়ন্ত কুমার রায়, বামফ্রন্টের সিপিএমের দেবরাজ বর্মণসহ রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রের প্রচারে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নতুন একটি রুট তেঁতুলিয়া করিডোর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সড়ক সংযোগের দাবি উঠেছে। ঢাকা-দিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে এই করিডোর নিয়ে আগে কখনোই তেমন আলোচনা শোনা যায়নি। ফলে বাংলাদেশের উত্তরতম প্রান্তে তেঁতুলিয়ার বুক চিরে সোয়া চার কিলোমিটার রাস্তার ওপর অধিকারের দাবিকে ঘিরে জোরালো প্রচারণা চলেছে জলপাইগুড়ি সংসদীয় কেন্দ্রে।

ভারতীয়দের কাছে এই প্রস্তাবিত রুটের পোশাকি নাম ‘তেঁতুলিয়া করিডোর’- যে পথে চলাচলের অধিকার পেলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে একটা বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের কলকাতা যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করে। এখন রাজগঞ্জ, মেখলিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে শিলিগুড়ি হয়ে ঘুরপথে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় যেতে হয়। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সোয়া চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারলে সেই দূরত্বটা প্রায় একশো কিলোমিটার কমে যাবে। সঙ্গে সময় ও খরচ বাঁচবে, রাস্তায় শিলিগুড়ির মতো ব্যস্ত শহরকেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে। আর এ কারণেই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এই ‘করিডোরে’র অধিকার বা ‘রাইট টু প্যাসেজ’ চাইছেন ওখানকার মানুষ।

এদিবে, আলিপুরদুয়ার আসনে লড়ছেন তৃণমূলের প্রকাশ চিক বরাইক, বিজেপির মনোজ টিগ্গা, বামফ্রন্টের মিলি ওঁরাওসহ অন্যান্য ছোট দল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ২২, বিজেপি ১৮ এবং কংগ্রেস দুটি আসনে। বামফ্রন্ট কোনো আসন পায়নি। আর গোটা দেশের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি, কংগ্রেস ৫২টি, সমাজবাদী পার্টি ৫টি, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, তৃণমূল ২২, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ এবং টিডিপি জিতেছিল দুটি আসনে।

ওই নির্বাচনে গোটা দেশে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিজেপির ৪০ জন, তৃণমূলের ৯ জন, কংগ্রেসের ছয়জন, ওডিশার বিজেডির পাঁচজন মিলিয়ে সর্বমোট ৭৮ জন। পশ্চিমবঙ্গে ভোট দেবেন সাত কোটি ৬৯ লাখ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮১ জন। নারী তিন কোটি ৭৩ লাখ চার হাজার ৯৬০ জন। রাজ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন এক হাজার ৮৩৭ জন।

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন ভোট নির্বিঘ্ন করতে সব ভোটকেন্দ্রের জন্য ২৬৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করেছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আরও থাকছে ১১ হাজার রাজ্য পুলিশ। নির্বাচন কমিশন এই রাজ্যের কোচবিহার আসনের দুই হাজার ৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৬টি কেন্দ্র, আলিপুরদুয়ারের এক হাজার ৮৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৯টি এবং জলপাইগুড়ির এক হাজার ৯০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯১টি ভোটকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রথম দফার এই তিন আসনের নির্বাচনে ২০১৯ সালে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীরা। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক, জলপাইগুড়িতে জয়ন্ত রায় এবং আলিপুরদুয়ারে জন বারলা। বিজেপি এবার জন বারলাকে মনোনয়ন না দিয়ে রাজ্য বিধানসভার বিজেপির চিফ হুইপ মনোজ টিগ্গাকে মনোনয়ন দিয়েছে। গত নির্বাচনে এই তিনটি আসনে বিজেপি তৃণমূল প্রার্থীদের পরাজিত করেছিল বিপুল ভোটের ব্যবধানে। এবারও বিজেপি আশাবাদী, এই তিনটি আসনেই আবার তারা জিততে চলেছে। কারণ, এখনো পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী।

সম্প্রতি এবিপি আনন্দ ও সি-ভোটার তাদের জনমত সমীক্ষা রিপোর্টে ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রথম পর্বের তিনটি আসনেই জিততে চলেছে বিজেপি। যদিও এই যুক্তি না মেনে তৃণমূল বলেছে, এই রাজ্যের মানুষ এখনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষে। এবার তারা এই তিন আসনে ধর্মান্ধ বিজেপিকে পরাস্ত করে ইন্ডিয়া জোটের হাত শক্তিশালী করবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে