পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মীর বিরোধ নিষ্পত্তিতে সাহায্য করতে ইচ্ছুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবারের (১০ জুন) সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জোর দিয়ে বলেছেন, দীর্ঘস্থায়ী বৈশ্বিক সংঘাতের সমাধানের লক্ষ্যে সর্বদা পদক্ষেপ নিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাশ্মীর ইস্যুতে তিনি বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন ব্রুস।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ বলে মনে হচ্ছে।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আশা প্রকাশ করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কার্যকালে দীর্ঘদিনের কাশ্মীর বিরোধ নিরসনে সহায়তা করবেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে প্রশ্ন করা হয়, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে একটি পাকিস্তানি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স অ্যালিসন হুকারের সাম্প্রতিক বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাই।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষকে আশ্বাস দিয়েছে কি না যে তারা ভারতকে আলোচনার টেবিলে আনতে তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে। যাতে সব মুলতুবি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় এবং যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা যায়।
এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরকালে পাকিস্তানি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির প্রতি মার্কিন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন- যেমনটা আপনি কল্পনা করছেন। তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন; যার মধ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতাও ছিল।
বিলাওয়ালের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন সফর করেন । সেখান থেকে লন্ডন ও ব্রাসেলসে যান তারা। ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত তার সফরকালে তিনি মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেটের এক ডজনেরও বেশি সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ব্রুস বলেন, আমরা এও জানি যে, ডেপুটি সেক্রেটারি ল্যান্ডাউ গত সপ্তাহে ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থন এবং দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
যুদ্ধবিরতি উদ্যোগের কৃতিত্ব নিয়ে ট্রাম্প এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কাশ্মীরসহ সব বিরোধমান বিষয় নিরসনের জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন।
ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ট্রাম্প লিখেছেন, আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করব। যাতে কাশ্মীর নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়।
পাকিস্তান এই অভিপ্রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তবে, ভারত মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান বজায় রেখে বলেছে, কাশ্মীর একটি দ্বিপাক্ষিক ইস্যু।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের ফলোআপ জানতে চাওয়া হয়। বলা হয়, তিনি কি উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের আতিথেয়তা করবেন বা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাব সমর্থন করবেন- এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ব্রুস বলেন, তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারবেন না।
তবে জোর দিয়ে বলেন, ট্রাম্পের কাজ সবসময় দীর্ঘদিনের বৈশ্বিক সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।
তাই এটা কাউকে অবাক করা উচিত নয় যে, তিনি এমন কিছু (কাশ্মীর ইস্যুতে) করতে চান। কেউ কখনো সম্ভব বলে ভাবেনি এমন কিছু লোককে আলোচনার টেবিলে এনেছেন ট্রাম্প। তিনি সত্যিই এমন একমাত্র ব্যক্তি যিনি এমন কাজ করতে পারেন।
উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতি চুক্তির সময় ভারত ও পাকিস্তান উভয়েরই একটি নিরপেক্ষ স্থানে মিলিত হয়ে বিরোধমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল।
তবে, কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। সব পক্ষই পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নীরব রয়েছে।
ব্রুস বলেন, যদিও আমি তার (ট্রাম্পের) পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে পারি না। বিশ্ব তার প্রকৃতি জানে।
এ বিষয়ে তার কী পরিকল্পনা থাকতে পারে, তার বিস্তারিত বলতে পারা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়। প্রতিদিন নতুন কিছু ঘটছে। আমি আশা করি তার সময়কালে সম্ভবত এমন কিছুরও (কাশ্মীর) সমাধান হয়ে যাবে।