ইসরাইলের বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা হ্যাক করে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে ইরান। এরপর এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করা হচ্ছে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু। এই তথ্য সামনে আসার পর ইসরায়েলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন আতঙ্ক। দেশটির সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত অনেক নজরদারি ক্যামেরা দুর্বল পাসওয়ার্ড, পুরনো ফার্মওয়্যার ও ভুল কনফিগারেশনের কারণে সহজেই হ্যাক করা সম্ভব। এই কৌশল অতীতে হামাস এবং রাশিয়াও ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি তেল আবিবে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার ডিরেক্টরেটের সাবেক উপপরিচালক রাফায়েল ফ্রাঙ্কো এক বিবৃতিতে বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে ইরান ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অবস্থান ও ফলাফল বিশ্লেষণ করছে, যাতে ভবিষ্যতে আরও নিখুঁত হামলা চালানো যায়। তাই নাগরিকদের উচিত নিজেদের ক্যামেরা বন্ধ রাখা অথবা নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।”
বর্তমানে ‘কোড ব্লু’ নামে একটি সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি পরিচালনা করছেন ফ্রাঙ্কো। তিনি আরও জানান, ইরানের পক্ষ থেকে ক্যামেরা হ্যাকের এই প্রচেষ্টা যুদ্ধ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়মিতভাবে চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েলের জাতীয় সাইবার ডিরেক্টরেটের একজন মুখপাত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি, যুদ্ধকালীন সময় ইরান নিয়মিতভাবে ইন্টারনেট সংযুক্ত নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহার করছে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা সীমান্তবর্তী ইসরায়েলি এলাকায় হাজার হাজার ব্যক্তিগত ও সরকারি ক্যামেরা হ্যাক করে হামাসও এমন কৌশল ব্যবহার করেছিল। তখনকার সাইবার ডিরেক্টরেট প্রধান গ্যাবি পোর্টনয় জানান, হামাসের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ছিল ভয়াবহ মাত্রার এবং তাদের হামলার সাফল্যে এর বড় ভূমিকা ছিল।একই ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করেছে রাশিয়াও, ইউক্রেনে হামলার সময়।
চলমান সংঘাতে দুই পক্ষই সাইবার আক্রমণ জোরদার করেছে। ইসরায়েলপন্থী হ্যাকার গ্রুপ ‘প্রিডেটরি স্প্যারো’ ইরানের একটি বড় ব্যাংক এবং একটি ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জে হামলার দায় স্বীকার করেছে। বিপরীতে, ইরান জানিয়েছে—ইসরায়েল তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালিয়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান তেল আবিবে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে। ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের ২০০ জনের বেশি নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ২৪ জন এবং আহত হয়েছে ৮০০-এর বেশি মানুষ।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ