শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাবা শরিফের পুরনো গিলাফ কী করা হয়?

যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ জুলাই ২০২২, ১৬:৩১

কাবা শরিফ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে পৃথিবীর পবিত্রতম ঘর। এ ঘর যেমন তাদের কাছে প্রিয়, তেমনি ঘরের প্রতিটি বস্তুও তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। কাবা শরিফের গিলাফ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কোথায় বানানো হয়, কিভাবে বানানো হয়, কী দিয়ে বানানো হয় ইত্যাদি নানা বিষয় সবাই জানতে চায় এবং এ নিয়ে লেখাজোকাও কম হয়নি কিন্তু আজ তুলে ধরা হলো কাবার পুরনো গিলাফ কী করা হয়, সে সম্পর্কে-

আলজাজিরা জানায়, বর্তমানে কাবাঘর থেকে গিলাফ খোলার পর তা সৌদি সরকারের একটি বিশেষ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে কর্তৃপক্ষ বড় গিলাফটি ছোট ছোট টুকরো করে তা উপঢৌকন হিসেবে দেয়ার জন্য। এরপর ওই টুকরোগুলো বিশ্বের গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সৌদিতে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে উপঢৌকন দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, এ বছর কাবার গিলাফ পরিবর্তন করা হয় হিজরি ১৪৪৪ সালের প্রথম দিন তথা স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সূর্যাস্তের পরে। প্রতিবছর হজ মৌসুমে ৯ জিলহজ গিলাফ পরিবর্তনের ঐতিহ্য থাকলেও এবার তা রক্ষা করা হয়নি; বরং হিজরি নববর্ষকে স্মরণীয় করতে মুহাররমের প্রথম দিনে কাবার গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়েছে। বছরে একবার কাবাঘরে নতুন গিলাফ মোড়ানো একটি প্রাচীন ঐতিহ্য।

প্রতিবছরের নতুন গিলাফ তৈরির জন্য রয়েছে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। মক্কার উম্মুল জাওদে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়াহ’। এখানে কর্মরত দুই শ’ কর্মকর্তা কাবার গিলাফ পরিবর্তনের কাজটি সম্পন্ন করেন।

১৩৪১ মোতাবেক ১৯৬২ সালে সৌদির প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান আলে সৌদ গিলাফ তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নির্দেশ দেন। ১৩৯৭ মোতাবেক ১৯৯৭ সালে গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ২০১৭ সালে বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় এর নাম দেয়া হয় ‘দ্য কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্স ফর ম্যানুফ্যাকচারিং দ্য কাবা’স কিসওয়া’। পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ তৈরির প্রধান ক্যালিওগ্রাফার হিসেবে দুই দশক ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশের শায়খ মুখতার আলম।

মূলত ৪৭ টুকরা কাপড় দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। ১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেলাই মেশিনে করা হয় এসব কাজ। কারুকার্যের অনেক কাজ হাতেও করা হয়। কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি অংশ একত্রে সেলাই করা হয় এবং তামার রিং দিয়ে গোড়ায় স্থির করা হয়। ৬৭০ কেজি কাঁচা রেশম কালো রং করা হয়। ২১ ক্যারেটের ১২০ কেজি স্বর্ণ ও ১০০ কেজি রুপার সুতা দিয়ে সেই কাপড়ে লেখা হয় পবিত্র কুরআনের কারুকাজখচিত আয়াত। গিলাফের সব কাজ শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। সব মিলিয়ে ৮৫০ কেজি ওজনের এই গিলাফ তৈরিতে ব্যয় হয় ২৫ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা সাড়ে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই গিলাফকে বিশ্বের ব্যয়বহুল কাপড় বলে মনে করা হয়।

সূত্র : আলজাজিরা ও আরব নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে