শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

আল্লাহর পথে দানের সর্বোত্তম প্রতিদান 

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৮
আল্লাহর পথে দানের সর্বোত্তম প্রতিদান 

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করছেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ' করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধনসম্পদ আলস্নাহর রাস্তায় ব্যয় করে, আর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা : ২৬১-২৬২)

ইনফাক ফি সাবিলিলস্নাহ বা আলস্নাহর পথে খরচ বলতে কী বুঝানো হয়েছে, আল্লাহ খুশি হন এমন কাজে অর্থ ব্যয় করা। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, সমাজ ও মানবতার কল্যাণ এবং সর্বোপরি আল্লাহর দ্বীনের প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে যে অর্থ ব্যয় হয় সবই ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত।

এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে খরচ হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য। খ্যাতিলাভ, প্রদর্শনেচ্ছা কিংবা জাগতিক কোনো স্বার্থে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কোনো কাজে অর্থ খরচ হলেও তা ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ হিসেবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না। অপরদিকে আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের বা পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করা হলেও এর সওয়াব আলস্নাহ দান করবেন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

সুতরাং এই দান করতে হবে সচ্ছল অসচ্ছল সর্বাবস্থায়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমিন,যা তৈরি করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আলস্নাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।' (সূরা আলে ইমরান : ১৩৩-১৩৪)

দুঃখ-কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে সাধ্যানুযায়ী দান করলে অগণিত সাওয়াব অর্জন হয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পান অগণিত।'

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'সত্যিকারের মু'মিন ওরাই যাদের সামনে আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তরগুলো ভয়ে কেঁপে উঠে, তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরও বেড়ে যায়, উপরন্তু তারা সর্বদা নিজ প্রভুর উপর নির্ভরশীল থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে সদকা করে। তারাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট সুউচ্চ আসন, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা'। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত : ২-৪]

সদকা সম্পর্কে এত কিছু শোনার পরও এমন হবেন না যাদের সম্পর্কে আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'হঁ্যা, তোমরাই তো ওরা, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালার পথে সদকা করতে বলা হয়েছে; অথচ তোমাদের অনেকেই এ ব্যাপারে কৃপণতা দেখাচ্ছে। মূলত যারা কার্পণ্য করে তারা তো নিজেদের ব্যাপারেই কার্পণ্য করে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তো ধনী-অভাবমুক্ত। তাঁর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। বরং তোমরাই গরিব। যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার পথে খরচ করতে বিমুখ হও তা হলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে বাদ দিয়ে অন্য আরেক জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন যারা কখনোই তোমাদের মতো হবে না।' [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ৩৮]

আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুমিনদেরকে ইনফাক ফি সাবিলিলস্নাহর তাগিদ করেছেন। সূরা আল হাদিদের ১১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'কে আছে আল্লাহকে করযে হাসানা দেবে যা তিনি বহু গুণ বাড়িয়ে তাকে ফেরত দেবেন। আর তার জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।'

সূরা আলে ইমরানের ৯২ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'তোমরা প্রকৃত পুণ্য লাভ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো আল্লাহর পথে ব্যয় না করবে।'

সূরা আল আহযাবের ৩৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল 'আলামিন তাঁদেরকে ইনফাককারী পুরুষ ও ইনফাককারী মহিলা বলে উলেল্লখ করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর পথে অকাতরে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেন। সমাজের অভাবী ব্যক্তিদের প্রতি তাঁদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়। আর আল্লাহর দ্বিনের আওয়াজ বুলন্দ করার কাজে তাঁরা উদারভাবে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে থাকেন।'

সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ নাম্বার আয়াতে এই ধরনের ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, 'যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আলস্নাহর পথে) অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং যারা লোকদের দোষ-ত্রম্নটি মাফ করে দেয়।'

দান সদকা গুনাহ মিটিয়ে দেয় উলেস্নখ করে রাসূল (সা.) বলেন, দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। (সহিহুল জামে/৫১৩৬) আবু কাবশা আল আনমারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুলস্নাহ্‌ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ছাদকা করলে কোনো মানুষের সম্পদ কমে না। (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আম্বিয়া কেরামদেরকে এই বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। এবং আমাদেরকেও পবিত্র কুরআন উদ্বুদ্ধ করেছেন। এবং এটি ঈমানদার হওয়ার একটি প্রমাণও। দান ও সহানুভূমি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, 'হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম।' (সূরা বাকারা : ২৫৪)

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালস্নাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'হে আয়েশা! অভাবীদের কিছু না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ো না, যদিও তা কেবল খেজুরের একটি টুকরা হয়। হে আয়েশা! গরিবদের ভালোবাসো এবং তাদেরকে তোমার কাছে সাহায্যের জন্য আসতে দাও। তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কিয়ামতের দিন তাঁর কাছে স্থান দিবেন। (ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

হাদিসে এসেছে দানকারীর জন্য ফেরেশতা দু'আ করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু'জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দু'আ করে বলেন, 'হে আল্লাহ দানকারীর মালে বিনিময় দান কর। (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি কর)'। আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দু'আ করে বলেন, 'হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও।' (বুখারি ও মুসলিম)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে