গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে তেলের খরচ কম করা যায়।
যেহেতু দামের ওপর কোনো হাত নেই, তাই গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে তেল কম খরচ করতে পারলে অর্থও বাচে।
একতালে চালানো
বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভ্যাস দুর্ঘটনার কারণ একথা সবারই জানা। তবে বেপরোয়া যানবাহন চালানোর কারণে জ্বালানি খরচও যে বাড়ে সেটা হয়ত মাথায় আনা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন ভিত্তিক ‘অটোমেটিভ ইনভেন্টরি অ্যান্ড ইনফরমেশন’ প্রতিষ্ঠান ‘এডমান্ডস’য়ের ‘সিনিয়য় কনজ্যুমার এডভাইস এডিটর’ রোনাল্ড মনটয়া বলেন, “একজনের গাড়ি চালানোর আচরণ তার জ্বালানি খরচের ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন- সামনে সিগনাল দেখেও জোরে গাড়ি চালিয়ে সামনে এড়িয়ে কষে ব্রেক করার অভ্যাসটা জ্বালানি পোড়ায় বেশি। সামনে যখন থামতেই হবে, জ্বালানি খরচ করে গতি না বাড়িয়ে যে গতি আছে সেই গতিটুকু ব্যবহার করে গড়িয়ে সামনে যান। এতে জ্বালানি খরচ কমার পাশাপাশি ‘ব্রেক শু’য়ের স্থায়িত্বও বেশি হবে।”
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “রাস্তায় চলার সময়েও এক সারি ধরে মসৃণ গতিতে গাড়ি চালিয়ে গেলে জ্বালানি খরচ কম হবে। বারবার গতি বাড়িয়ে কমিয়ে সারি বদলে, ‘ওভারটেক’ করে গাড়ি চালালে জ্বালানি খরচ হবে বেশি। আর দীর্ঘভ্রমণে ‘ক্রুজ কন্ট্রোল ফিচার’টি বেশি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, এতে জ্বালানি সাশ্রয় হবে।”
তার পরমর্শ, “এই অভ্যাসগুলো গড়ে তোলার জন্য চালককে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। গন্তব্যে হয়ত কয়েক মিনিট দেরিতে পৌঁছাবেন, তাই সেই অনুযায়ী হাতে সময় নিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে। লিটারের কয়েক মাইল বেশি চলবে এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করলে। আপাতদৃষ্টিতে সেই সাশ্রয়কে সামান্য মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে সাশ্যয়ের মাত্রা হবে উল্লেখযোগ্য। আর এতে গাড়ির যন্ত্রাংশও দীর্ঘস্থায়ী হবে।”
নিয়ম মেলে ‘ইঞ্জিন অয়েল’ বদলানো
মনটয়া বলেন, “ভালোমানের এবং সঠিক ‘গ্রেড’য়ের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে আর নিয়ম মেলে তা বদলানো হলে জ্বালানী সাশ্রয় হয়। কারণ সবকিছু ঠিক থাকলে ইঞ্জিনের ভেতরের যন্ত্রাংশগুলো মসৃণভাবে নড়াচড়া করতে পারে, ফলে কার্যকারিতা বাড়ে।”
কত কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল বদলাতে হবে, সেজন্য গাড়ি প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মানতে হবে, ‘গ্রেড’য়ের ক্ষেত্রেও তাই।
এয়ার ফিল্টার বদলানো
‘এক্সালেরেইটার’য়ের চাপ পড়লে ইঞ্জিনের ভেতর জ্বলে উঠে বাতাস আর জ্বালানির একটি মিশ্রণ। এই মিশ্রণে বাতাস আর জ্বালানির মাত্রায় সুক্ষ্ম একটা পরিবর্তন জ্বালানি খরচে পরিবর্তন আনতে পারে, ক্ষতি করতে পারে ইঞ্জিনেরও।
মিশ্রণে থাকা বাতাস ইঞ্জিনের প্রবেশ করে ‘এয়ার ফিল্টার’য়ে পরিশোধিত হয়ে। ফলে ফিল্টারে ময়লা জমতে থাকে। সময় মতো ফিল্টার পরিবর্তন বা পরিষ্কার না করলে ফিল্টার তার পরিশোধন ক্ষমতা হারায়, বাতাস প্রবাহিত করার ক্ষমতা কমে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে এমন গাড়ির ক্ষেত্রে ফিল্টারে গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই সময় মতো এয়ার ফিল্টার বদলাতে হবে।
চাকার হাওয়ার সঠিক মাপ
চলন্ত অবস্থায় গাড়ির নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চাকায় হাওয়ার চাপ হতে হবে পর্যাপ্ত। কম বা বেশি হলে উচ্চগতিতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। আবার জ্বালানি খরচের ওপরেও সরাসরি প্রভাব ফেলে চাকার হাওয়ার মাত্রা।
হাওয়ার মাপ সঠিক থাকলে টায়ার ক্ষয় হবে সমানভাবে ফলে ব্যবহার করা যাবে দীর্ঘদিন।
নিয়মিত মেরামত
গাড়ির ‘চেক ইঞ্জিন’ বাতি জ্বলে উঠলে তাকে অবহেলা না করে ‘রুটিন সার্ভিসিং’ করতে হবে। গাড়ির ‘টিউনিং’ ঠিক থাকলে বা ‘ইমিশন টেস্ট ফেইল’ করলে গাড়ির জ্বালানি খরচ বেড়ে যায় প্রায় ৪ শতাংশ, বলছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুয়েল ইকোনমি ডটগভ’।
যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বহুমুখী-কার্যক্রম-বিষয়ক সংস্থা ‘ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’র পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ‘গাড়ির ‘অক্সিজেন সেন্সর’ নষ্ট হয়ে গেলে তা গাড়ির ‘ফুয়েল ইকোনমি’ কমিয়ে দেয় প্রায় ৪০ শতাংশ। আর ‘চেক ইঞ্জিন’ বাতি জ্বলে ওঠার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মেরামত খরচও কমে।”
গাড়ি গরম করার দরকার নেই
সাধারণ কার্বোরেইটর-যুক্ত গাড়ির সময় থেকে যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তা হল, গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গরম করতে হয়, বিশেষ করে শীতের সময়ে।
তবে বর্তমান সময়ের গাড়িতে সেসব করার দরকার পড়ে না।
মনটয়া বলেন, “বেশিরভাগ আধুনিক গাড়ির ক্ষেত্রে ইঞ্জিন চালু করার ৩০ সেকেন্ড পরেই চালানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। তাই গাড়ি গরম করার জন্য অতিরিক্ত সময় ইঞ্জিন চালু করে রাখার মানেই হল অতিরিক্ত তেল খরচ করা, সেই সঙ্গে পরিবেশ দুষণতো আছেই।”
যাযাদি/ এম