শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রোটিনের চাহিদা পূরনের অন্যতম একটি উৎস হতে পারে কবুতর

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৮:১২
প্রোটিনের চাহিদা পূরনের অন্যতম একটি উৎস হতে পারে কবুতর
প্রোটিনের চাহিদা পূরনের অন্যতম একটি উৎস হতে পারে কবুতর

পোল্ট্রির মধ্যে কবুতরের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকম। কবুতর যার বৈজ্ঞানিক নাম Columba livia। উৎপত্তি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়াতে। প্রাচীনকাল থেকে পারিবারিক পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি ও শোভাবর্ধক পাখি হিসেবে কবুতরের জুড়ি নেই। এই প্রাণীটি পত্রবাহক ও শখ হিসেবে পালন করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। অন্য পোল্ট্রির চেয়ে কবুতর পালনে পুঁজি কম লাগে, ঝুঁকি কম, পালন সহজ ও লাভ বেশি।

পৃথিবীতে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে আনুমানিক ২০ প্রকার রয়েছে। এই প্রাণীটি পালনে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন নেই। বাড়ির আঙিনা, শহরের উঁচু দালানের ছাদে, বারান্দায় ও বেলকোনিতে পালন করা যায়। অতিরিক্ত শ্রমিক লাগে না বিধায় কাজের অবসরে পালন করা যায়।

কবুতর ৫-৬ মাস বয়সে ডিম দেয়া শুরু করে। প্রাপ্তবয়স্ক কবুতরের দৈহিক ওজন (জাতভেদে) ২৫০-৮০০ গ্রাম। কবুতর প্রতিবার একজোড়া ডিম দেয় এবং প্রথম ডিম দেওয়ার ৪৮ ঘন্টা পর আরেকটি দেয়। এরা প্রায় ১০- ১২ বছর বাঁচে। কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও রোগীদের পথ্য।

কবুতর পালন সহজ বলে ছাত্রছাত্রী, দুঃস্থ মহিলাসহ সব পেশার মানুষ পালন করতে পারে। কবুতর পালন করে পারিবারিক পুষ্টি যোগান, বেকারত্ব দূ্রীকরণ , আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাড়তি আয় ও দারিদ্র্য বিমোচন হয়। আকারে ছোট হলেও কবুতরের মাংসে প্রোটিনের পরিমান ১০০ গ্রামে ১৭.৫ গ্রাম, যা গরুর মাংসের কাছাকাছি (১০০ গ্রামে ১৮.৮ গ্রাম) কবুতরের মাংসে থাকা প্রোটিন শিশু মেধা বিকাশে ও প্রাপ্তবয়স্কদের আমিষের চাহিদা পুরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এমনকি এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও বেশি থাকে মুরগির মাংসের চেয়ে। একটি কবুতরের মাংসে আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন বি ১২ থাকে। এছাড়াও কবুতরের মাংসে যথেষ্ট পরিমাণ জিঙ্ক থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সম্ভবনাময় এই পোল্ট্রির প্রজাতিটি আরো উন্নততর প্রযুক্তি ও সহজলভ্য পালন পদ্ধতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের আওতায় চলমান "পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে কবুতর গবেষনা শেডে কবুতরের ৬ টি জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। যেমন কিং, ময়ুরপঙ্খী, হোমার, গিরিবাজ, শিরাজী এবং গোল্লা।

এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পোলট্রি রিসার্চ সেন্টারের দপ্তর প্রধান ড.মো:সাজেদুল করিম সরকার এবং এই সাব প্রজেক্টের সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুশরাত নওরীন লিসা। প্রকল্প পরিচালক ড.মো:সাজেদুল করিম সরকার বলেন, কবুতরের মাংসে উচ্চ খনিজ উপাদান আছে।

বিভিন্ন খনিজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেলেনিয়াম, যা ফ্রি radical থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে, থাইরয়েডের কার্যকারিতা বাড়ায়, রিউম্যাটিড আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়, পেশি ব্যথা কমায়, ত্বক ও চুলের বিবর্ণতা রোধ করে। এমনকি ক্যানসার ও হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে নিয়মিত কবুতরের মাংস খেলে।

তাই এই প্রজাতিটি পালনের এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য যেন তা তৃণমূল খামারি থেকে শুরু করে যারা শৌখিনতার জন্য কবুতর পালন করে এমন সব শ্রেণির মানুষের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের আমিষের বিশাল একটি চাহিদা পূরণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে